এএসআই সৌমেন রায় হিন্দু আর আসমা মুসলিম : বিয়ে হলো কিভাবে?
সৌমেন, আসমা, রবিন ও শাকিল - ছবি : নয়া দিগন্ত
কুষ্টিয়ায় প্রকাশ্য দিবালোকে এক নারী ও তার শিশুসন্তানসহ তিনজনকে গুলি করে হত্যা করেছে পুলিশের এক সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) সৌমেন রায়।
এ ঘটনায় পুলিশের ওই সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) সৌমেন রায়কে স্থানীয়রা আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেছে। সৌমেন রায় সর্বশেষ খুলনার ফুলতলার থানাতে কর্মরত ছিলেন। ঘাতক সৌমেন রায়ের বাড়ি মাগুরা জেলার আরপাড়ায়। রোববার দুপুর ১১টার দিকে শহরের কাস্টম মোড় এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার চাপড়া ইউনিয়নের সাঁওতা কারিগর পাড়ার মিজবার হোসেনের ছেলে শাকিল (২৩), একই এলাকার আমির হোসেনের মেয়ে আসমা (২৫) ও তার ছেলে রবিন (৬)। নিহত শাকিল ছিলেন বিকাশকর্মী।
স্থানীয়রা জানান, বেলা ১১টার দিকে কাস্টমস মোড়ের পিটিআই সড়কে একটি তিনতলা ভবনের সামনে নিহতরা দাঁড়িয়ে ছিলেন। এ সময় সৌমেন রায় প্রথমে ওই নারীর মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে গুলি করেন। এর পর তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা শাকিল খানকে গুলি করেন। এসময় শিশুটি ভয়ে বাঁচার জন্য দৌড় দিলে তাকে প্রথমে পিঠে তারপর জাপটে ধরে মাথায় গুলি করেন সৌমেন রায়। এমন ঘটনা দেখে স্থানীয়রা সৌমেনকে আটকানোর চেষ্টা করলে তখন ঘাতক কয়েক রাউন্ড গুলি ছোড়েন। একপর্যায়ে প্রায় ৫০ জন স্থানীয় লোক সেখানে পড়ে থাকা ইটপাকেল ছুড়তে থাকলে দৌড়ে পাশের একটি ভবনের তৃতীয় তলায় অবস্থান নেয়। ওই সময় স্থানীয়রা নিচের কলাপসিবল গেটে তালা লাগিয়ে দেয়। খবর পেয়ে কিছু সময় পর পুলিশ এসে স্থানীয়দের সহযোগিতায় ঘাতককে আটক করে।
এদিকে ঘটনার পর স্থানীয়রা গুলিবিদ্ধ তিনজনকে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসকরা ওই নারীকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শিশু রবিন ও শাকিল খান অপারেশন থিয়েটারে মারা যান বলে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. তাপস কুমার সরকার জানান।
পরকীয়ার কারণে এই হত্যার ঘটনাটি ঘটতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। নিহত আসমা এএসআই সৌমেন রায়ের দ্বিতীয় স্ত্রী। সৌমেন রায় প্রথম স্ত্রীর পক্ষের দুই সন্তানের জনক। সৌমেন রায় আসমার তৃতীয় স্বামী। নিহত শিশু রবিন আসমার দ্বিতীয় স্বামী রুবেলের সন্তান। নিহত আসমার প্রথম স্বামীর পক্ষেরও একটি সন্তান রয়েছে। শাকিলের সাথে আসমার সম্পর্ক ছিল বলে গুঞ্জন রয়েছে।
নিহত শাকিলের মা জানান, শাকিল তিন ভাইয়ের মধ্যে সবার ছোট। সে অনার্স ৩য় বর্ষে পড়ালেখা করছে পাশাপাশি বিকাশ কোম্পানিতে চাকরি করে।
শাকিলের বড় ভাইয়ের স্ত্রী জানান, শাকিল প্রতিদিনের মতো সকাল ৮টার সময় বাসা থেকে বের হয়েছিল। আর লাশ হয়ে বাড়ি ফিরল। পরকীয়ার বিষয়ে আমরা কিছুই জানি না। আমরা এই হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই।
একাধিক সূত্রে জানা গেছে, নিহত আসমার মা হাসিনার নামে চার বছর আগে কুমারখালী থানায় একটি মামলা হয়। এ মামলার সূত্র ধরে এএসআই সৌমনের সাথে আসমার মা হাসিনার সাথে ভালো সম্পর্ক তৈরি হয়। এর একপর্যায়ে আসমার সাথেও এএসআই সৌমেনের সম্পর্কের সৃষ্টি হয়। তা পরে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তাদের এ সম্পর্ক বিয়ে পর্যন্ত গড়ায়। এদিকে এএসআই সৌমেন রায় হিন্দু আর আসমা মুসলিম মেয়ে। তবে হিন্দু মুসলিমের বিয়েটা কিভাবে হলো এটা নিয়ে জনমনে ধোঁয়াশার সৃষ্টি হয়েছে।
এ ব্যাপারে নিহত আসমার বাবা আমির হোসেন জানান, আমি বিয়ের বিষয়ে কিছু জানি না। বেশ কিছু দিন আগে বাড়িতে এসে সৌমেনকে দেখতে পাই। তখন আমার স্ত্রীকে জিজ্ঞাসা করলে আমার স্ত্রী বলল, ওটা তোমার মাজাই। আমি এতটুকুই জানি।
নিহত আসমার ভাই হাসান জানায়, শাকিলের সাথে আসমার মাঝে মধ্যে ফোনে কথা হতো। সৌমেন রায় এই ব্যাপার নিয়ে তার বোনকে সন্দেহ করত। এর আগে বেশ কয়েক বার এসব বিষয় নিয়ে মারধরও করেছে। তবে আমি আমার বোন আসমা ও শাকিল ভাইয়াকে মাঝে মাঝে ঘুরতে যেতাম।
আসমার মা হাসিনা জানান, ৩/৪ বছর আগে আমি একটা মামলায় পড়ি। ওই সময় কুমারখালী থানায় গিয়ে পরিচয় হয় সৌমেন রায়য়ের সাথে। পরে আমার মেয়ে আসমার সাথে সম্পর্ক হয় সৌমেনের। পরে তারা দুজন বিয়ে করে।
নিহত আসমা ও তার শিশু সন্তান নিয়ে মামা বাড়ি কুমারখালীর পান্টি ইউনিয়নের নাতুড়িয়া গ্রামে ছিলেন। সেখান থেকে সৌমেন খুলনা নিয়ে যাওয়া কথা বলে আসমাকে ডেকে নিয়ে আসে। রোববার সকাল ৯টার দিকে খুলনায় নিয়ে যাওয়ার কথা বলে সৌমেন এই ঘটনা ঘটিয়েছেন।
পুলিশ কর্মকর্তা সৌমেন রায়কে আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি জানান, আটক পুলিশ কর্মকর্তা সম্প্রতি হালসা ক্যাম্প থেকে খুলনার ফুলতলাতে বদলি হয়েছেন।
পরে কুষ্টিয়া পুলিশ সুপার খায়রুল আলম ঘটনাস্থলে পরিদর্শন করেন।