জার্মানির মিডিয়াতে কোনো মুসলমান সাংবাদিক নেই
জার্মান মুসলিম - ছবি সংগৃহীত
কতিপয় উগ্রবাদী জার্মান ইসলামবিদ্বেষী হলেও সাধারণ মানুষ মনে করে ইসলাম শান্তির ধর্ম এবং ইসলাম সন্ত্রাসবাদের বিরোধী। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত মুসলিম ছাত্র-ছাত্রীরা তাদের খ্রিষ্টান সহপাঠীদের সাথে সে ব্যাপারে আলাপ-আলোচনা করে প্রমাণ করে যে, ইসলামের সাথে সন্ত্রাসবাদের সম্পর্ক নেই। পরিকল্পিত এ প্রয়াসের ইতিবাচক ফলাফল লক্ষ করা যায়। ইসলাম ও মুসলমানদের ব্যাপারে জার্মানির ইলেকট্র্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার রয়েছে দ্বৈত ভূমিকা। কিছু আছে ইসলামের ব্যাপারে নমনীয়। আর কিছু ইসলামের প্রতি বিদ্বেষ ভাবাপন্ন, তারা ইসলামকে সন্ত্রাসের প্রতিরূপ মনে করে। জার্মানির মিডিয়াতে কোনো মুসলমান সাংবাদিক নেই।
জার্মান সরকার মুসলমানদের ব্যাপারে কিছু কঠোর নীতিমালা ও বিধি প্রবর্তন করে। ইসলামিক সেন্টার ও প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় এতদিন যে স্বাধীনতা ছিল, ১১ সেপ্টেম্বর টুইন টাওয়ার ধ্বংসের পর তা সীমিত হয়ে পড়ে। নতুন নীতিমালা অনুযায়ী যেকোনো সময় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যেকোনো মুসলমানকে জিজ্ঞাসাবাদ ও তাদের পরিচালিত প্রতিষ্ঠানে তল্লাশি করতে পারে। কিন্তু পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে মুসলমানরা নীরব ও অলস বসে নেই। তারা প্রতিনিয়ত সকারের সাথে আলাপ আলোচনায় বসেন। ডা. নঈম ইলিয়াছের নেতৃত্বে সুপ্রিম কাউন্সিল অব মুসলিমস ইন জার্মানির একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল জার্মান চ্যান্সেলরের সাথে সাক্ষাৎ করে সন্ত্রাস পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করেন এবং জার্মানিতে মুসলমানদের অবস্থান তুলে ধরেন।
স্মর্তব্য, জার্মানিসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ইসলাম গ্রহণকারীদের মধ্যে পুরুষের তুলনায় মহিলার সংখ্যা বেশি। এর পেছনে রয়েছে নানা যৌক্তিক কারণ। নারীর ক্ষমতায়ন ও নারী স্বাধীনতার নামে পাশ্চাত্যে যেসব কর্মকা- হচ্ছে তাতে সাধারণ মহিলারা আতঙ্কিত ও বীতশ্রদ্ধ হয়ে উঠছেন। হুদা খতুব নামে এক খ্রিষ্টান মহিলা যিনি পরবর্তী সময়ে মুসলমান হয়েছেন, এক সাক্ষাতকারে মন্তব্য করেন, ‘নারীবাদ মূলত নারীদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতার নামান্তর’। তিরি আরো বলেন, Women copying men, an exercise in which womanhood has no intrinsic value. অর্থাৎ ‘মহিলারা পুরুষদের নকল করছে; এটা এমন এক কর্মকাণ্ড যার কারণে নারীত্বের অন্তর্নিহিত মর্যাদা আর অবশিষ্ট থাকে না।’
ইউরোপের মর্যাদাবান সংবাদপত্র The London Times এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে যে মন্তব্য করে তা প্রণিধানযোগ্য-
It is even more ironic that most converts should be women, given the disparate view in the West that Islam treats women poorly. Westerners despairing of their own society- rising crime, family breakdown, drugs and alcoholism- have come to admire the discipline and security of Islam.
অর্থাৎ ‘এটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যের ব্যাপার যে, ধর্মান্তরিতদের মধ্যে বেশির ভাগই মহিলা, অথচ পশ্চিমা বিশ্বে এ মতবাদ ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয়েছে যে, ইসলাম নারীদের সাথে দুর্ব্যবহার করে। ক্রমবর্ধমান মাদকাসক্তি, পারিবারিক ভাঙন ও অপরাধ প্রবণতার কারণে নিজেদের সমাজ সম্পর্কে হতাশাগ্রস্ত পশ্চিমা জনগণ ইসলামের নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলার প্রশংসা করছে।’
ইসলামফোবিয়া, প্রতিকূল ও বৈরী পরিস্থিতি সত্ত্বেও জার্মানিতে অবস্থানরত মুসলমানরা ইসলামী শরিয়তের বিধি অনুসরণে নিষ্ঠাবান। তারা ইসলামী সংস্কৃতি প্রতিপালনে কোনো আপস করতে রাজি নয়। কারণ শরিয়ত একজন মুসলমানের অস্তিত্বের ভিত্তি। এ দৃঢ় মনোবৃত্তির কারণে জার্মানির ভূখন্ডে ক্রমশ ইসলাম বিস্তৃতি লাভ করছে।
লেখক : অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ও গবেষক
drkhalid09@gmail.com