সার্কের নেতৃত্ব চীন নিয়ে নেবে?
সার্ক ও চীন - ছবি সংগৃহীত
ওয়াশিংটনের এক থিংকট্যাংক ও রিসার্চ সেন্টার হলো ‘হাডসন ইনস্টিটিউট’। তার এক পাকিস্তানি ও এক ভারতীয় ফেলো যৌথভাবে ভারতের বা গ্লোবাল মিডিয়ায় লেখা নিয়ে হাজির হচ্ছেন। তেমনই এক লেখার প্রসঙ্গ ছিল সাউথ-ইস্ট এশিয়ান জোট, সার্ক। আর তাতে শিরোনাম হলো, ‘কোভিড বলছে ভারত যদি সার্কের দায়িত্ব নিতে ব্যর্থ হয় তবে চীন নিয়ে নিবে।’
এরপর ওই লেখা শুরুর বাক্যটাও বলছে, ‘কোভিড মহামারী কেবল মানব দুর্দশা বা অর্থনৈতিক বিপর্যয়ই আনে না এর খারাপ স্ট্রাটেজিক পরিণতিও আছে। এটা দেখিয়ে দিয়েছে সাউথ এশিয়াকে নেতৃত্ব দিতে ভারত কোন সীমায় আটকে আছে! আর সেই সাথে ভারতের প্রতিবেশীদের কাছে ভারতকে নিচু দেখিয়ে চীনের ভূমিকা কত উঁচুতে।’ এভাবে চীনের সাথে খামোখা ভারতের তুলনা করা হয়েছে এ লেখায়।
এক কথায় বললে এটা সেই পুরান কথা, খামোখা চীনের পর্যায়ে তুলে ভারতের বন্দনা আর কোভিডে ভারতের ইজ্জত লুটানোতে সহানুভূতি জোগাড় করা। যেমন, যে কুকুরের গায়ের চামড়া উঠে গেছে তার নাম বাঘা রাখলেও কোনো কিছু পরিবর্তন হয় না। এরা তবু সেটাই করে যাবেন। যেন ভারতের হাতে চীনের কাছাকাছি সারপ্লাস একুমুলেশন বা উদ্বৃত্ত সম্পদ আছে যা ভারত চাইলেই প্রতিবেশী দেশে বিনিয়োগ করতে সক্ষম। ফলে ‘কোভিডের কারণে প্রতিবেশীদের ওপর ভারতের স্ট্রাটেজিক প্রভাব খাটো হয়ে যাচ্ছে। না হলে চীনকে একেবারে দেখিয়ে দিত’।
তাই ওই লেখা বলছে, ‘অতএব কোভিডই দেখাচ্ছে যে, এ অবস্থায় ভারত সার্ককে নেতৃত্ব দিতে ব্যর্থ হওয়ার সুযোগটা এবার চীন নিয়ে নিবে।’ এগুলোই নায়িকাদের ফুটানি বা ভ্যানিটির মতো কথা যেন! স্টার-ইমেজ ছাড়া নায়িকাদের সিনেমা চলে না, আমরা বুঝি। কিন্তু আমেরিকা আর কতদিন ভারতের পিঠে হাত রেখে মিথ্যা প্রলোভন দিয়ে যাবে?
অসংখ্য ত্রুটিতে ভরে আছে ওই লেখা কারণ ‘হোমওয়ার্ক’ করে নেয়া হয়নি ঠিকমতো।
প্রথমত এই লেখকদ্বয়ের সার্ক সম্পর্কে ন্যূনতম কোনো ধারণা আছে মনে হয় না। যেমন সাম্প্রতিকালে ভারতই ‘সার্কে পাকিস্তান আছে’ বলে সার্ককেই বাদ দিয়ে ভাগাড়ের মতো ফেলে রাখার চেষ্টা করেছে, সে খবর এদের কাছে নেই। এমনই ২০১৬ সালের শেষের এক খবর হলো- বিডিনিউজ২৪ লিখেছিল, “সার্ক ভুলে বঙ্গোপসাগরভিত্তিক দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর আঞ্চলিক জোট ‘বিমসটেকের’ ওপর জোর দিতে বাংলাদেশকে পরামর্শ দিয়েছেন” সাবেক এক ভারতীয় কূটনীতিক ও ভারতের ওআরএফের ফেলো পিনাক রঞ্জন চক্রবর্তী। অর্থাৎ বলতে চাইছেন, তাই ভারতের কাছে সার্ক আপন কোনো কিছু নয়। অথচ সেই সার্ককেই তারা ভারতের জন্য উদাহরণ হিসাবে এনেছেন। দ্বিতীয়ত, চীন সার্কের মেম্বার নয়।
তাহলে ‘ভারত না পারলে চীন পারবে’ এ কথা তোলা হচ্ছে কিভাবে? তৃতীয়ত, এই অঞ্চলে সার্ক ফাংশনাল কিছু হয়ে ওঠে, এমন কখনই ভূমিকা নিতে পারেনি। মূলত ভারত-পাকিস্তান দ্বিপাক্ষিক অসংখ্য ক্যাচালের ইস্যু- এখানে হাজির করাতে নিষেধ থাকলেও এরা পিছনের ক্যাচালের কারণে সার্কে এসে নিষ্ক্রিয় থেকে এটা কার্যকর হতে বাধা হয়েছে। আবার এই বাধার কাজে ভারত-পাকিস্তান কারো ভূমিকাই কম ছিল তাও নয়। এর পরেও সার্ক দেশের মধ্যে শুল্ক কমিয়ে পণ্য বিনিময় বাড়ানোর একটা চেষ্টা করা হলেও তা কাজ করেনি। মূলত ভারতের পুরানা অভ্যাস যে, একদিকে বলবে শুল্ক তুলে নিয়েছে অথচ রফতানি করতে গিয়ে দেখা যাবে প্রায় সমতুল্য নন-ট্যারিফ শুল্ক আরোপ করে রেখেছে ভারতই।