বিজেপির শক্ত ঘাঁটিতে ভাঙন শুরু!
মমতা ব্যানাজ্যি ও দিলীপ ঘোষ - ছবি : সংগৃহীত
ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে মমতা ব্যানার্জির তৃণমূলে ফিরে যেতে মুকুল রায় বিজেপি ছাড়তেই বনগাঁয় বিজেপির শক্ত ঘাঁটিতে ভাঙন শুরু হয়ে গেছে। দলের সাংগঠনিক পদ থেকে পদত্যাগ করলেন বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার সহ-সভাপতি তপন সিনহা। জানা যাচ্ছে, বিজেপির এই নেতা মুকুল ঘনিষ্ঠ। উল্লেখযোগ্য বিষয়, শুক্রবারের দিলীপের বৈঠকে ছিলেন না বনগাঁর এমপি শান্তনু ঠাকুর। এছাড়া আরো তিন বিধায়ক গরহাজির ছিলেন।
শুক্রবার দলীয় বৈঠকে যোগ দিতে যান বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। যেদিন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দলীয় বৈঠকে যোগ দিতে গেলেন, সেই দিনই দলের সাংগঠনিক পদ থেকে পদত্যাগ করে চিঠি দিলেন মুকুল ঘনিষ্ঠ এই নেতা। চিঠিতে মুকুল ঘনিষ্ঠ এই নেতা জানান, বেশ কিছু দিন ধরেই দলের হয়ে কাজ করতে পারছিলাম না। সেই কারণেই পদত্যাগ করলাম। চিঠির প্রাপ্তির কথা স্বীকার করে নিয়েছেন সাংগঠনিক জেলা সভাপতি মনস্পতি দেব।
তাহলে কী তিনি অন্য কোনো শিবিরে যোগ দিতে চলেছেন। সে বিষয়ে অবশ্য খোলসা করে কিছু বলতে না চাইলেও মুকুল ঘনিষ্ঠ নেতা বলেন, ‘গত কয়েক দিন ধরে দলের রাজনৈতিক কর্মসূচি আমি জানতে পারছিলাম না। আসলে আমাকে জানানো হচ্ছিল না। শারীরিকভাবেও পেরে উঠছি না। তাই এবার পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিলাম। ভবিষ্যতে কী করব সেটা পরে ভাবব।’ এই প্রসঙ্গে দলের জেলা সম্পাদক দেবদাস মণ্ডলের অবশ্য দাবি, দল ক্ষমতায় আসেনি। তাই নিজের স্বার্থসিদ্ধি হবে না বলেই তিনি তৃণমূলে ফিরে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। এতে দলের কোনও ক্ষতি হবে না।
এদিনের বৈঠকে বানগাঁর এমপি ছাড়াও যে তিনজন বিধায়ক উপস্থিত ছিলেন না, তারা হলেন গাইঘাটার বিধায়ক সুব্রত ঠাকুর, বনগাঁ উত্তরের বিধায়ক অশোক কীর্তনিয়া ও বাগদার বিধায়ক বিশ্বজিত দাস। জানা গিয়েছে, সুব্রত ঠাকুর অসুস্থতার কারণে আসতে পারেননি। বনগাঁ উত্তরের বিধায়কের আসার কারণ জানা যায়নি ও বাগদার বিধায়ক কলকাতায় ডাক্তার দেখাতে গেছেন বলে আসতে পারেননি। তবে বনগাঁর এমপি কেন আসতে পারেননি, সে বিষয়ে কিছু জানা যায়নি। এই বিষয়ে দলের রাজ্য সভাপতিকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন,‘আমি কী করে বলব। জেলার যেসব কর্মী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, অনেকে তাদের সঙ্গে আছেন। আসবেন হয়ত।’
কিন্তু শেষ পর্যন্ত কারোরই দেখা মেলেনি।
এদিক ওদিক করারও তো বয়স আছে…,
বিজেপিতে ফিরতেই মুকুল রায়কে তুলোধোনা করতে শুরু করেছেন বিজেপি নেতারা। আনুষ্ঠানিক ভাবে সংযত মন্তব্য করলেও তাঁকে ‘মিরজাফর’-সহ যাবতীয় বিশেষণে বিঁধতে দ্বিধা করছেন না কেউ। ব্যতিক্রম হলেন না কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়-ও। সেখানে মুকুল রায়কে ‘গভীর পানির মাছ’ বলে কটাক্ষ করেছেন তিনি।
শুক্রবার রাতে এক ফেসবুক পোস্টে বাবুল লেখেন, ‘আচ্ছা বলুন তো, রাজনৈতিক নেতাদের মানুষ অপছন্দ কেন করবে না !! কোনো রাজনৈতিক নেতার থেকে 'নৈতিক' কিছু মানুষ (আর) আশা করে না - তাদের দোষও দেব না | দলও অনেকেই বদলায়, সেটাও ঠিক আছে | কিন্তু ব্যাডমিন্টনের শাটল-এর মতো এদিক ওদিক করার একটা বয়সও তো আছে | আত্মসম্মান ব্যাপারটা না হয় ছেড়েই দিলাম..’
এর পরই মুকুলকে আক্রমণ করে বাবুল লিখেছেন, ‘মুকুলদা যে ধরণের ঘোলাজলে সাঁতার কাটতে ভালোবাসেন আর 'গভীর জলের মাছ' ধরেন, সেখানেই খুশি মনে ফিরে গেছেন এটা বেশ ভালোই হয়েছে !’
শুক্রবারই ছেলে শুভ্রাংশুকে নিয়ে বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন মুকুল। সূত্রের খবর, তৃণমূলে বড় পদ পেতে চলেছেন তিনি। সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ পদে বসতে চলেছেন শুভ্রাংশুও।
সূত্র : হিন্দুস্তান টাইমস