ফরাসি প্রেসিডেন্টকে থাপ্পড় দেয়া লোকটি সম্পর্কে যা জানা যাচ্ছে
ফরাসি প্রেসিডেন্টকে থাপ্পড় দেয়া লোকটি সম্পর্কে যা জানা যাচ্ছে - ছবি সংগৃহীত
ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রঁর গালে জনসমক্ষে চড় মারার সাথে জড়িত সন্দেহে যে দুই ব্যক্তিকে আটক করা হয়েছে তাদের একজনের বাসায় হিটলারের ইহুদি-বিরোধী বই মাইন কাম্ফ (অর্থ- আমার সংগ্রাম) এবং কিছু অস্ত্রশস্ত্র পাওয়া গেছে, জানাচ্ছেন তদন্তকারীরা।
ফ্রান্সে আগামী বছর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে দেশব্যাপী তার প্রচারের দ্বিতীয় পর্যায়ে ম্যাক্রঁ দেশটির দক্ষিণ পূর্বের এক শহরে আনুষ্ঠানিক সফরে গেলে তাকে শুভেচ্ছা জানানোর জন্য দাঁড়ানো মানুষের মধ্যে থেকে এক ব্যক্তি প্রকাশ্যে তাকে চড় মারেন।
ওই এলাকারই একটি স্কুলের বাইরে থেকে ২৮ বছর বয়সী দুই ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়।
তাইন-ল্য'হার্মিটেজ শহরে প্রেসিডেন্টের ওপর ওই হামলার পর তাদের বাসায় তল্লাশি চালানো হয়।
এই দুজনের মধ্যে যে ব্যক্তি চড় মারার দৃশ্য ভিডিও করছিলেন বলে সন্দেহ করা হচ্ছে, তার বাসায় হিটলারের বই এবং অস্ত্র পাওয়া গেছে বলে জানানো হয়েছে।
উদ্ধার করা অস্ত্রের মধ্যে রয়েছে একটি তলোয়ার, একটি ছুরি এবং সংগ্রহে রাখার জন্য একটি রাইফেল। রাইফেলটি রাখার বৈধ অনুমতি ওই ব্যক্তির রয়েছে। তবে এসব অস্ত্রশস্ত্র ব্যবহারযোগ্য কিনা তা স্পষ্ট নয়।
ম্যাক্রঁর সফরের সময় ধাতু নির্মিত ব্যারিকেডের অপর পাশে জনতা দাঁড়ানো ছিল। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে দেখা যায়, ম্যাক্রঁ দৌড়ে একটি ব্যারিকেডের দিকে যাবার পর তাকে চড় মারা হয়। তার সাথে ছিলেন তার দুজন রক্ষী। আরও দুজন রক্ষী হামলাকারীকে ধরতে তাদের দিকে দৌড়ে যায়।
ম্যাক্রঁর নিরাপত্তা উপদেষ্টারা তাকে ওই ব্যক্তিদের দিকে না যেতে সতর্ক করে দিয়েছিলেন এমন খবর প্রেসিডেন্টের মুখপাত্র অস্বীকার করেছেন।
'অবশ্যই ফরাসি প্রজাতন্ত্রের প্রেসিডেন্ট হিসাবে তিনি ফ্রান্সের জনগণের সাথে সরাসরি যোগাযোগ অব্যাহত রাখবেন, ঠিক যেমনটা সরকারের তরফ থেকে রাখার রেওয়াজ আছে,'' জানান ম্যাক্রঁর মুখপাত্র গ্যাব্রিয়েল আত্তাল।
ঘটনার কয়েক ঘণ্টা পর ম্যাক্রঁ বলেন ওটা ছিল একটা 'বিচ্ছিন্ন ঘটনা' এবং জনসাধারণের সাথে কোন বিষয় নিয়ে আলাপ বা বিতর্ক ছিনিয়ে নেবার সুযোগ 'চরম হিংসাত্মক ব্যক্তিদের' দেয়া উচিত নয়।
সন্দেহভাজন ব্যক্তিরা কারা?
প্রথম ব্যক্তি, যিনি প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রঁকে চড় মেরেছেন বলে সন্দেহ করা হচ্ছে, ধারণা করা হচ্ছে যে তিনি চরম দক্ষিণপন্থী। এই মতাদর্শ এবং রাজতন্ত্রপন্থী ব্যক্তিদের ব্যাপারে, সেইসাথে ফ্রান্সের মধ্যযুগীয় ইতিহাস বিষয়েও তিনি আগ্রহী।
তার ইনস্টাগ্রাম পেজে তিনি নিজের পরিচয় দিয়েছেন ঐতিহাসিক ইউরোপিয়ান মার্শাল আর্টের জাতীয় একটি ফেডারেশনের অংশ হিসাবে। সেখানে মধ্যযুগীয় পোশাক পরে বিশাল লম্বা তলোয়ার হাতে তার নিজের ছবি পোস্ট করা আছে।
তবে তার এক বন্ধু জানাচ্ছেন, ওই ব্যক্তি 'অরাজনৈতিক' এবং এভাবে চড় মারা তার স্বভাবের সাথে একেবারেই মেলে না।
ল্য প্যারিসিয়েন সংবাদপত্রের ওয়েবসাইট তদন্তের সাথে জড়িত একটি সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে লিখেছে ওই ব্যক্তির রাজনীতি নিছকই একটা 'আদর্শের বুলি কপচানো।'
সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে চড় মারার সময় চিৎকার করে বলতে শোনা যায়, 'ম্যাক্রঁ-বাদ নিপাত যাক।'
যদিও ওই ব্যক্তি ফরাসি মধ্যযুগীয় লড়াইয়ের সময় ব্যবহৃত স্লোগানের ঢং-এ এই উগ্রবাদী স্লোগান দেন, কিন্তু ফরাসি ভাষ্যকাররা এটাও মনে করছেন যে ১৯৯৩ সালের হিট ফরাসি চলচ্চিত্র লেস ভিসিতিওর্স (দ্য ভিজিটরস্) ছবির মধ্যযুগীয় সশস্ত্র এক নায়কের অনুকরণে তিনি এই স্লোগান দিয়ে থাকতে পারেন। খুবই জনপ্রিয় ও সফল এই ছবিটি ছিল মধ্যযুগীয় ফরাসি যুদ্ধের পটভূমিতে তৈরি।
ঘটনার কিছুক্ষণ আগে ওই ব্যক্তি দাঁড়িয়েছিলেন আরো দুই ব্যক্তির পাশে যাদের একজন ওই সময় টেলিভিশনে একটি সাক্ষাৎকার দিচ্ছিলেন। তিনি সাক্ষাৎকার দেবার সময় বলছিলেন, 'আপনার [ম্যাক্রঁ-কে] অবশ্যই কিছু বলার আছে, কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত আপনি কিছুই বলতে পারবেন না ... ফ্রান্সের অধঃপতন ঘটেছে।'
মঙ্গলবারের হামলার ঘটনার পর তাইন-ল্য'হার্মিটেজ-এর উত্তরে এক গ্রামে সন্দেহভাজন দুই ব্যক্তিরই বাসায় তল্লাশি চালানো হয়।
দ্বিতীয় সন্দেহভাজনও মধ্যযুগীয় লড়াইয়ের একজন ভক্ত বলে জানা যাচ্ছে।
সূত্র : বিবিসি