সৌদি-ইরান সম্পর্ক কতটুকু উষ্ণ হবে?

সাইফুল খান | Jun 10, 2021 05:17 pm
আয়াতুল্লাহ খামেনি ও মোহাম্মদ বিন সালমান

আয়াতুল্লাহ খামেনি ও মোহাম্মদ বিন সালমান - ছবি সংগৃহীত

 

রিয়াদ চাইলেই সৌদি-ইরান সম্পর্ক উষ্ণ হবে- এমন কোনো সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। তবে আলোচনায় আগ্রহ ও পরস্পরের গত মাসে বাগদাদে আলোচনার টেবিলে বসার ফলে হয়তো তাদের কূটনৈতিক সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের পথে জমে থাকা বরফ কিছুটা গলতে পারে।

মধ্যপ্রাচ্যে ইরানকে সামরিক সহযোগিতা দিতে পারার মতো কোনো বন্ধু দেশ নেই, জোট নেই। তাই বিকল্প হিসেবে সিরিয়া, ইরাক, লেবানন, ইয়েমেন সরকারের সাথে সম্পর্ক জোরদার করে প্রক্সি যোদ্ধাদের দিয়ে পশ্চিমা স্বার্থকে ব্যস্ত রেখে নিজ ভূখণ্ডকে নিরাপদে রেখেছে ইরান। এরপরও জায়নিস্ট ইন্টেলিজেন্সের হাতে বেশ কয়েকজন ইরানি ইঞ্জিনিয়ার, ডাক্তার, রাজনীতিক, গবেষক, ব্যবসায়ী নিহত হয়েছে।

মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের প্রক্সি যোদ্ধারা সক্রিয় না থাকলে জ্ঞান-বিজ্ঞানের গবেষণা ও চর্চা করার সুযোগই হয়তো পেত না ইরান। উত্তর কোরিয়ার মতো একঘরে হয়ে থাকতে হতো। নিষেধাজ্ঞার ভেতরে থেকেও প্রযুক্তিগত উন্নতি ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক নির্মাণে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন শর্ত মেনে নিয়ে। তারপরও ইরানের সাথে ছয় জাতির করা চুক্তি ভঙ্গ করেছে আমেরিকা।

সর্বশেষ ইরান-চীন ২৫ বছর মেয়াদি চুক্তির পরে আন্তর্জাতিক অঙ্গন বিশেষ করে পশ্চিমা মিডিয়া চুক্তি নিয়ে নানা রকমের চুলচেরা বিশ্লেষণ করেছেন, করছেন। হামাসের কাছে ইসরাইলের পরাজয়ের পর হামাস নেতার ইরানকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন পরিষ্কার করেছে ইরানের নেটওয়ার্ক কত দূরে ও কতটা গভীরে বিস্তৃত।

এর আগে মার্কিন ড্রোন ভূপাতিত তরা, পারস্য সাগরে ইউএস নেভি সিলের সৈন্যদের গ্রেফতার করে হাতকড়া লাগানো ভিডিও সারা দুনিয়া দেখেছে। ঘোষণা দিয়ে ইরাকের মার্কিন ঘাঁটিতে নিখুঁত ক্ষেপণাস্ত্র হামলার বিষয়ে মার্কিন সমরাস্ত্র বিশেষজ্ঞরা চুলচেরা বিশ্লেষণ করেছেন এবং হামলার ভয়াবহতাও বর্ণনা করেছেন।

ইয়েমেনের উপর চাপিয়ে দেয়া যুদ্ধে ইরানের সামরিক সহযোগিতা নিয়ে হাউছিরা সৌদির ভেতরে আক্রমণ করছে। বাইডেন সরকার এই যুদ্ধের নিশ্চিত নিষ্ফল অথবা পরাজয় আঁচ করতে পেরে যুদ্ধ থেকে সরে আসার ঘোষণা দিয়েছে।

সিরিয়ায় বাশার আল আসাদের সাথে রাশিয়ার মিত্রতা নির্মাণ করেছে ইরান। রাশিয়া আর ইরান পাশে থাকায় মার্কিনপন্থী সমগ্র শক্তি একত্রিত হয়েও আসাদকে সাদ্দাম অথবা গাদ্দাফির মতো ছুড়ে ফেলে দিতে পারেনি। এসব কিছু বিবেচনায় সৌদি আরবের ইরানের সাথে বিরোধের চেয়ে মিত্রতাই উত্তম মনে হওয়া স্বাভাবিক। ইরান যদি একঘরে থাকত এবং চীন, রাশিয়ার সাথে কৌশলগত সম্পর্ক না থাকত তাহলে চুক্তির বিষয়টি সৌদির পরিকল্পনায় হয়তো আসত না। মধ্যপ্রাচ্যে আমেরিকার বিকল্প হিসেবে রাশিয়ার উপস্থিতি ঘটেছে ইরানের পরিকল্পনায়। আমেরিকা মধ্যপ্রাচ্যে তার প্রয়োজনমতো যাদের তৈরি করেছে, প্রয়োজন শেষে তাদেরকেই ছুড়ে ফেলে দিয়েছে। ফলে মধ্যপ্রাচ্যে আমেরিকার সাবেক বিশ্বাসযোগ্যতার গ্রহণযোগ্যতা বর্তমানে আগের মতো নেই। ইরান চায় আমেরিকার বিকল্প কারো হাত ধরে নতুন গ্লোবার অর্ডার নির্মাণ করতে এবং এখন পর্যন্ত পরিকল্পনা অনুযায়ী এগিয়ে যাচ্ছে। সেটা কত দূর নিতে পারবে তার জন্য বৈশ্বিক পরিবর্তন ও নয়া চ্যালেঞ্জের ধরন ও সমাধানের প্রক্রিয়ার দিকে নজর রাখা জরুরি।

সবকিছু বিবেচনায় মার্কিন প্রেসক্রিপশনে সৌদি যুবরাজ বিন সালমান ইরানের সাথে সম্পর্ক উন্নয়ন চায়। তবে ওই উন্নয়নে সৌদির শর্ত থাকবে 'মধ্যপ্রাচ্যের উত্তেজনা নিরসনে' শব্দটি ব্যবহার করে মধ্যপ্রাচ্যে প্রক্সি যোদ্ধাদের নিষ্ক্রিয় করা, ক্ষেপণাস্ত্রের আধুনিকায়ন নিয়ে গবেষণা কমিয়ে আনা, পরমাণু গবেষণা কমানো, ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ থেকে বিরত থাকা। সেগুলো কি ইরান মানবে? মোটেই না। ইরান সাদ্দাম হোসেন আর মোয়াম্মার গাদ্দাফির পরিণতি দেখেছে।

তবে ইরান চাইবে দীর্ঘ মেয়াদে নানান ইস্যু নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যেতে এবং আলোচনা চলাকালীন ফায়দা নিতে। উভয়েই উভয়ের অবস্থান ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে যথেষ্ট সচেতন। উল্লেখিত শর্ত ও শর্তের সাথে সম্পর্কযুক্ত বিষয়ের বাইরে যদি কোনো শর্ত থাকে সেটা হয়তো ইরান মেনেও নেবে। সেটাই যাই হোক না কেন। তাই যদি হতে হয় তাহলে পরিষ্কারভাবে সৌদিকে মার্কিন ব্লক থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। তবে সেটা কি সম্ভব?

কৌশলগত আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে অসম্ভব বলেও কিছু নেই। সৌদি আরব চার্চিলের ব্রিটেনের বলয় থেকে বেরিয়ে রুজভেল্টের হাতে যখন স্বেচ্ছায় সোপর্দ হতে পেরেছে তখন রেজিম টিকিয়ে রাখতে চীন, রাশিয়ার বলয়ে ঢুকতে ইরানের করিডোর সে ব্যবহার করতেই পারে।


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us