নিমের চারায় বদলে গেল লেবু মিয়ার ভাগ্য
লেবু মিয়ার নার্সারি - ছবি : নয়া দিগন্ত
নিমগাছের চারা পাল্টে দিয়েছে লেবু মিয়ার ভাগ্যের চাকা। এক বিঘা জমিতে নিমগাছের চারা দিয়ে শুরু করে আজ তার নার্সারিটি ২৫ বিঘায় রূপ নিয়েছে। এখন দেশী-বিদেশী প্রায় ৬০০ জাতের চারা রয়েছে তার নার্সারিতে। লেবু মিয়ার নার্সারিতে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছে ১৫টি পরিবার।
নীলফামারী সদর উপজেলার কচুকাটা ইউনিয়নের কচুকাটা হাইস্কুল-সংলগ্ন বন্দরপাড়া এলাকার লেবু মিয়া জীবিকার তাগিদে একসময় ফেরি করে কাপড়ের ব্যবসা করতেন। পাড়ায় পাড়ায় ঘুরে এ ব্যবসায় তেমন একটা মুনাফা হতো না। যা হতো তা দিয়ে টেনেটুনে চলত সংসার। এ ব্যবসা করাকালে খুঁজতে থাকেন ভিন্ন ব্যবসা। শুরু করেন পুকুর ভাড়া নিয়ে মাছ চাষের ব্যবসা। এ ব্যবসা কিছুদিন করার পরে আশানুরূপ মুনাফা না হওয়ায় সেটিও ছেড়ে দিয়ে এক বিঘা জমি বন্ধক নিয়ে তাতে নিমগাছের বীজ রোপণ করেন। এই এক বিঘা জমির নিম চারা বিক্রি করে তার ভালো মুনাফা হয়। এতে তিনি ঝুঁকে পড়েন নার্সারি ব্যবসার দিকে। এভাবে পর্যায়ক্রমে নিজের আট বিঘা ও অন্যের ১৭ বিঘা জমি নিয়ে নার্সারি ব্যবসা করতে থাকেন। আজ তিনি একজন সফল নার্সারি ব্যবসায়ী।
স্ত্রী, দুই ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে লেবু মিয়ার সংসার। একসময়ে অভাব-অনটন ছিল তার নিত্যদিনের সঙ্গী। অভাব অনটনের কারণে বড় ছেলে হারুন মিয়াকে স্কুলে পাঠাতে পারেননি। ছোট ছেলে এ আর মামুন রংপুর সরকারি কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে লেখাপড়া করছে। মেয়ে মাহামুদা আক্তার লিহা নীলফামারী সরকারি মহিলা কলেজে এইচএসসির ছাত্রী।
লেবু মিয়া জানান, নার্সারি ব্যবসাকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পেছনে সক্রিয়ভাবে তাকে সহযোগিতা করছে ছোট ছেলে এ আর মামুন। তার শ্রম আর মেধা নার্সারি ব্যবসাকে সফলতার শীর্ষে নিয়ে গেছে। প্রতি বছর জেলাপর্যায়ে চারামেলায় এ আর মামুন নার্সারি অংশ নেয় এবং প্রতিবারই প্রথম স্থান অর্জন করে। তার নার্সারির নাম আজ সবার মুখে মুখে।
তিনি আরো জানান, এখন গাছ থেকে কলম (গ্রাফটিং) করে নিজেরাই চারা উৎপাদন করছেন। নার্সারিতে ফলদ, বনজ, ভেজষ ও শোভাবর্ধনসহ ছয় শ’র বেশি দেশী-বিদেশী জাতের চারা রয়েছে। নার্সারিতে ফলদ গাছের মধ্যে অন্যতম কমলার জাত সাদকি, দার্জিলিং, পাকিস্তানি, থাই ও জর্দান, মাল্টার জাত বারি-১, বাউ-৩, ওয়াশিংটন নেভাল, সাউথ আফ্রিকান ইয়োলো, কাজু বাদাম, পেস্তা বাদাম, থাই জাম্বুরা, এবাকাডো ফল, ম্যাঙ্গোস্টিন ফলগাছ, এফ্রিকট-গাছ, পিনাটবাটার, ফুলচান, রামবুটান, মালবেরি, ভেজষ গাছ যেমন ক্যান্সার প্রতিরোধক করোসল, ননিফল, ডায়াবেটিক গাছ যেমন গোয়নুরা প্রোগাম্বেস, ডায়বেটিক আমগাছের চারা রয়েছে। গাছ ও প্রকৃতিকে ভালোবেসে প্রতিষ্ঠিত এ নার্সারি দেখতে প্রতি মৌসুমে কৃষি ও বন বিভাগের কর্মকর্তারা আসছেন এবং উৎসাহ দিচ্ছেন।
নীলফামারী কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক কৃষিবিদ আবু বক্কর সিদ্দিক জানান, এ আর মামুন নার্সারি আজ রংপুর বিভাগের অনুকরণীয়। তার নার্সারির মতো আরো অনেকে নার্সারি ব্যবসায় এগিয়ে এলে অনায়াসেই স্বাবলম্বী হওয়া সম্ভব।