হোম অফিসের নামে কী হচ্ছে!
হোম অফিসের নামে কী হচ্ছে! - ছবি সংগৃহীত
জার্মানির কোটি মানুষের কর্মজীবনকেও এভাবে বদলে দিয়েছে করোনা সংকট৷ বেশির ভাগ পেশার অধিকাংশ কর্মীই করোনার বিধিনিষেধ জারি হওয়ার পর থেকে ঘরে বসে কাজ করছেন৷ তা করোনা দূর হয়ে গেলে কি ‘হোম অফিস' সংস্কৃতিও দূর হয়ে যাবে? না, বরং নতুন পরিকল্পনায়, আরো ভারসাম্যপূর্ণ ব্যবস্থায় চালু থাকতে পারে হোম অফিস৷
জার্মানির বড় কোম্পানিগুলো ইতিমধ্যে সেই পরিকল্পনার কথা জানিয়ে দিয়েছে৷ সফটঅয়্যার জায়ান্ট এসএপি গত ১ জুন এক মেইলের মাধ্যমে তাদের এক লাখ কর্মীকে জানিয়েছে, অফিসে গিয়ে, নাকি নিজের ঘরে বসে কাজ করবেন তা ভবিষ্যতে কর্মীরাই ঠিক করবেন৷ অর্থাৎ, যার, যেভাবে, যেখান থেকে কাজ করা সুবিধাজনক মনে হবে, তার, সেভাবে, সেখান থেকে কাজ করার পূর্ণ স্বাধীনতা থাকবে৷ শতকরা ৯৪ ভাগ কর্মী এসএপি-র এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে৷
ডয়চে ব্যাংক এবং কমার্স ব্যাংক অবশ্য গ্রাহকদের সঙ্গে সরাসরি লেনদেনের বিষয়টিকে গুরুত্ব দেয় বলে এসএপি-র মতো এত ব্যাপক হারে হোম অফিসকে উৎসাহিত করতে পারছে না৷ তারা জানিয়েছে, করোনা সংকট কেটে গেলেও তারা হোম অফিসের সুযোগ আংশিকভাবে রাখবে৷
এসএপি, আইবিএম এবং ডিএন-এর মতো ডিজিটাল জায়ান্টদের কর্মীদের অবশ্য করোনা সংকট শুরুর আগেও অফিসে না গিয়ে কাজ করার সুযোগ ছিল৷
হোম অফিস অবশ্য সব কর্মী বা সব ধরনের কাজের জন্য সার্বিকভাবে সুবিধাজনক নয়৷ ছোট অ্যাপার্টমেন্টে থাকেন এমন কর্মীদের জন্য বেশি দিন বাড়ি থেকে কাজ করা বরং নানা ধরনের সমস্যার সৃষ্টি করে৷ কাজ করার জন্য আলাদা ঘর না থাকলে ঠিকভাবে কাজ করা মুশকিল হয়ে যায়৷ একক মায়েদের জন্য সংসার, সন্তান সব দেখে ঘরে বসে চাকরি করে যাওয়া খুবই কঠিন৷ শিশুসন্তান থাকলে অ্যাপার্টমেন্টে বা অ্যাপার্টমেন্টের খুব কাছাকাছি চাইল্ড কেয়ার সেন্টার থাকা খুব জরুরি৷
অন্যদিকে ভালো বেতনের চাকরি করায় যারা বড় অ্যাপার্টমেন্টে থাকেন, তাদের জন্য হোম অফিস খুব সুবিধাজনক৷ পরিবারের অন্য সদস্যরা যার যার মতো করে সময় কাটাতে পারেন, একই সময়ে কোনো অফিসের গুরুত্বপূর্ণ কর্মী শতভাগ মনযোগ দিয়ে চাকরিটাও করে যেতে পারেন৷
সম্প্রতি হোম অফিসের সুবিধা-অসুবিধা সম্পর্কে জনমত যাচাইয়ে নেমেছিল জার্মানির টিইউ ডার্মস্টাড৷ এক সমীক্ষায় তারা দেখেছে, এক তৃতীয়াংশ মানুষ মনে করেন হোম অফিস করায় তাদের কর্মক্ষমতা কমে গেছে৷ অর্থাৎ, অফিসে গেলে প্রতিদিন একটা নির্দিষ্ট সময়ে যতটুকু কাজ করতে পারতেন, ঘর থেকে সেই সময়ে ঠিক ততটুকু কাজ তারা করতে পারছেন না৷ টিইউ ডার্মস্টাডের রিয়েল এস্টেট ম্যানেজমেন্ট অ্যাান্ড কন্সট্রাকশন ডিপার্টমেন্টের প্রধান আন্দ্রেয়াস ফ্নুর মনে করেন, এর অনেক কারণ থাকতে পারে, তবে সবচেয়ে বড় কারণ নিশ্চয়ই সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ঘরের পরিসর এবং পরিবেশ৷
তার মতে, ‘‘আপনি কী কাজ করছেন, বা আপনার কয়টা সন্তান, (হোম অফিস ঠিকভাবে করার ক্ষেত্রে) তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হলো আপনি কী অবস্থায় বসবাস করেন৷'' আন্দ্রেয়াস ফ্নুর আরো মনে করেন, ‘‘হোম অফিস সমাজকে দুই স্তরে ভাগ করে ফেলতে পারে৷'' এক স্তরে থাকবেন মোটা মাইনে পাওয়া বড় বড় অ্যাপার্টমেন্টে থাকা কর্মীরা, অন্য স্তরে থাকবেন বাধ্য হয়ে ছোট অ্যাপার্টমেন্টে থাকায় হোম অফিসের সঙ্গে মানিয়ে নিতে হিমসিম খাওয়া কর্মীরা৷ এক সময় ‘‘ঘরে বসে কাজ করা আভিজাত্যের প্রতীক'' হয়ে যেতে পারে বলেও মনে করেন তিনি৷
সূত্র : ডয়চে ভেলে