আশেপাশে বাজ পড়ছে? কী করবেন আর কী করবেন না
বজ্রপাত - ছবি সংগৃহীত
বর্ষার আগে আকাশে কিউমিউলোনিম্বাস মেঘের আনাগোনায় বাজ পড়ার অনুকূল পরিস্থিতি তৈরি হয়। মূলত ‘ক্লাউড টু গ্রাউন্ড লাইটেনিং’ বা মেঘ থেকে মাটিতে নেমে আসা বজ্রপাতের কারণে মানুষের প্রাণ যায়।
আবহাওয়ার উপর মানুষের নিয়ন্ত্রণ না থাকলেও বাজ পড়ার সময় কিছু সাবধানতা অবলম্বন করাই শ্রেয় বলেই বিশেষজ্ঞদের মত।
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাটমোসফেরিক সায়েন্সের অধ্যাপক সুব্রত মিদ্যা জানাচ্ছেন, ‘বাজ পড়ার সময় অনেকেই বাড়ির বাইরে বা মাঠে থাকেন। এ ক্ষেত্রে বাড়ি বা কাছাকাছি কোনও ঘরে আশ্রয় নেওয়া সবচেয়ে নিরাপদ।’ কিন্তু তা না পাওয়া গেলে কিছু সাবধানতা অবলম্বন করা যেতে পারে।
মার্চ, এপ্রিল, মে এবং জুন মাসে বর্ষা আসার আগে বাজ পড়ে বেশি। এই সময়ে আবহাওয়া দফতরের সতর্কবার্তার প্রতি খেয়াল রাখা দরকার।
খোলা জায়গায় থাকলে, বাজ পড়ার সময় যতটা সম্ভব নিজেকে সঙ্কুচিত করে বা কুঁজো হয়ে মাটিতে বসে পড়লে রক্ষা পাওয়া সম্ভব।
না শুয়ে যতটা সমম্ভব নিচু হয়ে মাটির কাছাকাছি থাকলেও বাজের কবল থেকে রক্ষা পাওয়া যেতে পারে।
ছাদযুক্ত চার দেয়ালের ঘর এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে নিরাপদ আশ্রয়। ঘরে থাকলে বাজ থেকে বাঁচার সম্ভাবনা বেশি।
বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হতে পারে, এমন যেকোনো জিনিস থেকে দূরে থাকা প্রয়োজন।
বাজ পড়া কালীন কখনই ফাঁকা মাঠে থাকবেন না।
বজ্রপাতের সময় গাছের তলায় আশ্রয় নেবেন না।
বেশি উচ্চতার জায়গায় বাজ পড়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। তাই এই সময় উচুঁ কাঠামো, পোলের কাছে না থাকাই শ্রেয়।
বজ্রপাতের সময় গাড়ি মধ্যে থাকাও সম্পূর্ণ নিরাপদ নয়।
বাজ পড়ার সময়ে কিছুতেই পানিতে বা পুকুরে থাকবেন না।
বজ্রপাতে আহতদের চিকিৎসা
বাংলাদেশের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় বজ্রপাত নিয়ে নানা ধরণের সতর্কবার্তা প্রচার করছে।
সতর্কবার্তায় বলা হয়েছে, বজ্রপাতে কেউ আহত হলে বৈদ্যুতিক শকে আহতদের মতো করেই চিকিৎসা করতে হবে।
বজ্রপাতে আহত ব্যক্তির শ্বাস-প্রশ্বাস এবং হৃৎস্পন্দন দ্রুত ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করতে হবে। কয়েক মিনিটের মধ্যে কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যবস্থা করতে পারলে বাঁচানো সম্ভব হতে পারে। বেশি দেরি হলে আহত ব্যক্তির মৃত্যু হতে পারে।
চিকিৎসক তানভীর আহমেদ বলেন, বজ্রপাতে আহত হলেও কিছু কিছু মানুষের হৃদপিণ্ড বন্ধ হয়ে তাৎক্ষনিকভাবেই মারা যায়। আবারো কারো-কারো হার্ট একটু বন্ধ হয়ে আবার চালু হয়। তাদের যখন হাসপাতালে আনা হয় তখন হয়তো আমরা কাউকে-কাউকে রক্ষা করতে পারি।
চিকিৎসক তানভীর আহমেদ বলেন, যদি আহত ব্যক্তির হৃৎপিণ্ড সচল থাকে তাহলে তাকে সাথে সাথে সিপিআর দিতে হবে। সেজন্য সিপিআর সম্পর্কে জ্ঞান থাকা জরুরি।
সিপিআর দিয়ে হৃদপিণ্ড সচল রাখতে হবে। এর মধ্যে অ্যাম্বুলেন্স বা কোনো গাড়ি ডেকে দ্রুত আহত ব্যক্তিকে হাসপাতালে নিতে হবে। আহত ব্যক্তিকে হাসপাতালে নেবার ক্ষেত্রে বিলম্ব করা যাবে না।
তানভীর আহমেদ বলেন, বজ্রপাতে আহত ব্যক্তিকে ধরার ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা নেই। কারণ আহত কিংবা মৃত ব্যক্তির শরীরে বিদ্যুৎ থাকে না।
সূত্র : বিবিসি ও আনন্দবাজার পত্রিকা