করোনায় আক্রান্ত মা নিশ্চিন্তে বুকের দুধ খাওয়াতে পারবেন সন্তানকে
করোনায় আক্রান্ত মা নিশ্চিন্তে বুকের দুধ খাওয়াতে পারবেন সন্তানকে - ছবি সংগৃহীত
মা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলেও, নিশ্চিন্তে সদ্যোজাতকে স্তন্যপান করাতে পারবেন। কারণ গবেষণা বলছে, করোনা আক্রান্ত মায়ের দুধে রয়েছে এই ভাইরাসের অ্যান্টিবডি।
ভারতের ন্যাশনাল অ্যাডভাইসারি গ্রুপ অব ইমিউনাইজেশনের (এনট্যাগি) প্রধান ডা. এন কে অরোরা রোববার বলেন, ‘সদ্য সন্তানের জন্ম দেয়া মা যদি করোনায় অত্যন্ত কাহিল হয়ে পড়েন, সেক্ষেত্রে সম্ভব হলে অন্য কারও উচিত নবজাতককে দেখভাল করা। তবে করোনা সংক্রামিত মা নিশ্চিন্তে, নির্ভয়ে বাচ্চাকে বুকের দুধ পান করাতে পারেন। কারণ, মায়ের দুধে এমনিতেই রয়েছে রোগ প্রতিরোধের যাবতীয় গুণ। তাই মায়ের দুধ হল শ্রেষ্ঠ রক্ষাকবচ।’ ডাঃ অরোরা জানিয়েছেন, মা করোনা আক্রান্ত হলেও তার দুধে করোনা ভাইরাসের যে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়, তা শিশুর কোনা ক্ষতি করে না, উল্টা রক্ষা করে। ওই অ্যান্টিবডি সদ্যোজাতকে করোনার সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে। তবে বাচ্চাকে স্তন্যপান করানোর সময় মা যেন অবশ্যই ডাবল মাস্ক পরেন, সে ব্যাপারে বারবার সতর্ক করেছেন তিনি।
কোভিড বিধিতে মাস্ক বাধ্যতামূলক। তবে দু’বছরের কম বয়সীদের ক্ষেত্রে এ ব্যাপারে সাবধান করছেন আইসিএমআরের মহামারীবিদ্যা বিভাগের প্রধান বিজ্ঞানী ডা. সমীরণ পাণ্ডা। তার মত, ‘দু’বছরের কম বয়সীকে মাস্ক পরানোর প্রয়োজন নেই। কারণ তাতে অহেতুক শ্বাস সমস্যা তৈরি হয়ে হিতে বিপরীত হতে পারে। এছাড়া সেরিব্রাল পলসির মতো সমস্যা বা শারীরিক কারণে যারা নিজে মাস্ক পরতে-খুলতে অক্ষম, তাদেরও পরার প্রয়োজন নেই। বাকি সাবধানতাগুলো পালন করতে হবে।’ আর ৩ থেকে ৫ বছর বয়সিদের মুখে যেহেতু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই যথাযথভাবে মাস্ক রাখা কঠিন, তাই এই পরিস্থিতিতে তাদের যতটা সম্ভব বাড়িতে থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে করোনার সম্ভাব্য তৃতীয় ঢেউ নিয়ে যতই আলোচনা হোক না কেন, সেক্ষেত্রে বেছে বেছে শিশুদের অতি আক্রান্তের কোনো সম্ভাবনা নেই বলে স্পষ্ট করে দিয়েছে শিশুবিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সংগঠন ইন্ডিয়ান আকাডেমি অব পেডিয়াট্রিকস (আইএপি)।
আইসিএমআর জাতীয়স্তরে যে সেরোলজিক্যাল সার্ভে করেছে সেখানে প্রাপ্তবয়স্কদের ২১.১ শতাংশর মধ্যে অ্যান্টিবডির সন্ধান মিলেছে। অথচ ১০-১৭ বছর বয়সীদের তা ছিল ২৫.৩ শতাংশ। অর্থাৎ অপেক্ষাকৃত কম বয়সীরা বেশি সংক্রামিত। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই উপসর্গ না থাকায় চিহ্নিত করা যায়নি। আর তারা সুস্থও হয়ে গিয়েছেন নিজে থেকে। এনট্যাগি প্রধান বলেন, ‘শিশুরা করোনা সংক্রামিত হলেও জ্বর, সর্দি, ডায়ারিয়ার মতো সমস্যা দেখা দিচ্ছে। যা সামান্য ওষুধ এবং পথ্যেই সেরে যাচ্ছে। তাই সম্ভাব্য তৃতীয় ঢেউ এলেও তা শিশুদের মধ্যে ব্যাপক হারে সংক্রমণ ছড়াবে, এমনটা মোটেই ঠিক নয়।’
তবে যেসব শিশুর কনজেনিটাল হার্ট ডিজিস, ডায়াবেটিস, হাঁপানি, ক্যান্সার বা ইমিউন সাপপ্রেশন্টসের মতো সমস্যা রয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে অবশ্যই সাবধানে থাকতে হবে। কারণ এই ধরনের করোনা আক্রান্ত শিশুদের দু’ থেকে ছয় সপ্তাহের মধ্যে মাল্টি সিস্টেম ইমফ্লেমেটরি সিন্ড্রোম দেখা দিচ্ছে। তাই করোনা আক্রান্ত শিশুর মধ্যে আচমকা শ্বাসকষ্ট, ত্বকে র্যাশ, ঘুম না আসা, টানা জ্বর, কাশি থাকলে বিলম্ব না করে চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করার নিদান দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
সূত্র : বর্তমান