বাইতুল মাকদিস বিজয়

বাইতুল মাকদিস - ছবি সংগৃহীত
ইতিহাস ঘাটাঘাটি করলে পাওয়া যায়, পবিত্র কাবাঘর নির্মাণের দীর্ঘ ৪০ বছর পর জেরুসালেমে হজরত ইয়াকুব আ: নির্মাণ করেন বাইতুল মাকদিস!
তারপর পবিত্র এ ঘর পুনঃনির্মাণ করেন হজরত সুলাইমান আ:। পবিত্রতার দিক থেকে মক্কা-মদিনার পরই তৃতীয় স্থানে পবিত্র বাইতুল মাকদিসের অবস্থান।
সব নবী-রাসূলের স্মৃতি বিজড়িত এ পবিত্র মসজিদ। এ মসজিদে আমাদের প্রিয়নবী হজরত মুহাম্মদ মোস্তফা সা: ইমামতি করেন সব নবী-রাসূলের। এ মসজিদটি দুটি বৃহৎ ও ১০টি ছোট মিনার এবং চারটি গম্বুজ বিশিষ্ট। মিনারের উচ্চতা ৩৭ মিটার। এ মসজিদের দৈর্ঘ্য ২৭২ ফুট ও প্রস্থ ১৮৪ ফুট।
বাইরের দেয়াল, মিনার ও বহির্ভাগ চুনাপাথর এবং স্বর্ণ সিসা ও পাথর দিয়ে গম্বুজ ও সাদা মার্বেল ও মোজাইক দিয়ে ভেতরের স্তম্ভসমূহ নির্মাণ করা হয়েছে। রাসূলুল্লাহ সা: তাঁর জীবদ্দশায় মুসলমানদেরকে বাইতুল মাকদিস বিজয়ের সুসংবাদ দেন এবং সেটাকে কিয়ামতের অন্যতম নিদর্শন বলেও আখ্যায়িত করেন।
নবী করিম সা:-এর আগমনকালে বাইতুল মাকদিস সম্পূর্ণ রোমান খ্রিষ্টানদের অধিকারে ছিল। রুম ছিল তখনকার প্রতিষ্ঠিত পরাশক্তি।
ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হজরত উমর ইবনুল খাত্তাব রা:-এর যুগে (১৬ হিজরি/৬৩৭ খ্রি.) বাইতুল মাকদিস বিজয় হয়। সব আম্বিয়া আ:-এর প্রত্যাবর্তনস্থল খ্যাত এ ভূমিকে মুসলমানরা কুফরির নোংরামি থেকে পবিত্র করেন।
ইসলামের ইতিহাস থেকে আমরা পাই, বাইতুল মাকদিস বিজয় হয়েছে দু’বার। প্রথমবার বিজয় হয় হজরত উমর ইবনুল খাত্তাব রা:-এর যুগে ১৬ হিজরি ৬৩৭ খ্রিষ্টাব্দে। দ্বিতীয়বার বিজয় হয় বীর সিপাহসালার সুলতান সালাহউদ্দিন আইয়ুবীর সময়ে ৫৮৩ হিজরি ১১৮৭ খ্রিষ্টাব্দে।
বাইতুল মাকদিস বিজয় সম্পর্কে আমরা রাসূলুল্লাহ সা:-এর ভবিষ্যদ্বাণী থেকে পাই, হজরত উমর ইবনুল খাত্তাব রা: থেকে বর্ণিত- রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘ইহুদিদের সাথে তোমাদের লড়াই হবে। তাদেরকে তোমরা ছত্রভঙ্গ করে দিলে পাথর ও বৃক্ষকুল তোমাদের ডেকে বলতে থাকবে- ওহে মুসলিম! আমার পেছনে ইহুদি লুকিয়েছে, এসো! ওকে হত্যা করো।’ (সহিহুল বুখারি-৩৩৯৮, সহিহুল মুসলিম-৭৫২২)
অন্য হাদিসে হজরত আবু হোরায়রা রা: বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘কিয়ামত সঙ্ঘটিত হবে না, যতক্ষণ না ইহুদিদের সাথে মুসলমানদের প্রচণ্ড যুদ্ধ হবে। যুদ্ধে ইহুদিদের হত্যা করা হবে। কোনো ইহুদি পালিয়ে গাছ বা পাথরের পেছনে আত্মগোপন করলে সেই গাছ বা পাথর মুসলমানদের ডেকে বলতে থাকবে, ওহে মুসলিম! ওহে আল্লাহর বান্দা! আমার পেছনে ইহুদি লুকিয়েছে, এদিকে এসো! একে হত্যা করো। তবে গারকাদ বৃক্ষ এ কথা বলবে না। কারণ তা ইহুদিদের বৃক্ষ।’ (সহিহুল মুসলিম-৭৫২৩)
হ্যাঁ, বাস্তবেই সেদিন বৃক্ষ কথা বলবে। আল্লাহ পাক জড়বস্তুকে সেদিন কথা বলার সক্ষমতা দিবেন। সেদিন মুসলমানদের জয় হবে। সেদিন বাইতুল মাকদিস আবারো বিজয় হবে।
আল্লাহ পাক পবিত্র কুরআনে ঘোষণা করেন, ‘আল্লাহর সাহায্য ও বিজয় অতি নিকটেই। মুমিনদের জন্য সুসংবাদ!’ (সূরা সফ-১৩)
লেখক : আলেম, প্রাবন্ধিক