মুনা আর মোহাম্মদকে গ্রেফতার : কনোনিয়াল প্রজেক্টের বাস্তবায়ন
মুনা আর মোহাম্মদকে গ্রেফতার : কনোনিয়াল প্রজেক্টের বাস্তবায়ন - ছবি : সংগৃহীত
গাজা উপত্যকায় হামাস ও ইসরাইলি বাহিনীর মধ্যে অস্ত্রবিরতির পর অনেকে ধরে নিয়েছিল যে ফিলিস্তিনে মোটামুটি একটা সুস্থ পরিবেশ তৈরি হচ্ছে। কিন্তু এই ধরে নেয়া ধারণাটা ছিল পুরোপুরি ভুল। ওই অস্ত্রবিরতি ছিল মূলত গাজা উপত্যকায় বিমান হামলা করা বন্ধ হবে এবং ইসরাইলের দিকে লক্ষ্য করে রকেট নিক্ষেপ করা হবে না। ব্যাস, এতটুকুই।
এছাড়া বাদ বাকি সবকিছু আগের মতোই চলছে। প্রতিনিয়তই হচ্ছে পশ্চিম তীরে (এটাই রামাল্লা, এখানেই আল-আকসা মসজিদ কমপ্লেক্স অবস্থিত) দখলদারিত্ব। আর গাজাকে (মিসরের সিনাই উপত্যকা এবং মেডিটেরিয়ান সাগরের পাশে) অবরুদ্ধ রাখার কত শত ফন্দি।
এমন প্রেক্ষাপটেই জেরুসালেমের দুই আইকন- মুনা আল কুর্দ ও মুহাম্মদ আল কুর্দকে গ্রেফতার করা হলো। এরা দুজন ভাইবোন এবং এরা দুজনেই এক্টিভিস্ট। আজকে সারা বিশ্ব আল-আকসা, শেখ জাররাহ ও সিলওয়ানে ঘটে যাওয়া নৃশংসতার ঘটনা জানে। তারপরও এমনটা হলো কীভাবে? প্রথমে এরা দুজনেই নিজেদের মোবাইল ফোনের মাধ্যমে নৃশংসতা, দখলদারিত্বের ছবি ও ভিডিও করে স্যোশাল মিডিয়ায় প্রকাশ করে সারা বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। এর মাধ্যমে তারা তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলে।
মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-আজিজার সাংবাদিক জিফারা আল-বাদিরিকে দখলদার বাহিনী গ্রেফতার করলে এর বিরুদ্ধেও এই মুনা আল কুর্দ মুভম্যান্ট গড়ে তোলেন। আর এই তীব্র আন্দোলন এবং সারা বিশ্বের সমালোচনার মুখে পড়ে দখলদার বাহিনী গতকাল সন্ধ্যার মধ্যে জিয়ারা আল-বাদিরিকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়।
কিন্তু অক্যুপ্যাশন এখানেই শেষ নয়। ঘণ্টা চার-পাঁচেক আগে দখলদার বাহিনী বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যায় মুনা আল কুর্দকে। বোনকে তুলে নিয়ে যাবার ঠিক দুই-তিন ঘণ্টা পর তার ভাই মুহাম্মদ আল কুর্দ, সালাহ আল-দিন সড়কে দখলদার বাহিনীর পুলিশ স্টেশনে গিয়ে আত্মসমর্পণ করেন।
সংক্ষেপে বলা যায়, পরিষ্কারভাবে বোঝা যাচ্ছে যে এই কাজ ইসরাইলের একার নয়। মূলত এটা হচ্ছে পশ্চিমাদের একটা কলোনিয়াল প্রজেক্ট। তা না হলে, প্রকাশ্যে এত কিছু করার পরও তাদের মানবাধিকার লংঘন হয় না কেন?
উল্লেখ্য, গত ২৫ এপ্রিল শেখ জাররাহ মহল্লা থেকে ছয় ফিলিস্তিনি পরিবারকে উচ্ছেদ করে ইহুদি বসতি স্থাপনে ইসরাইলি আদালতের আদেশের পর ফিলিস্তিনিদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়া বিক্ষোভে সামনের সারিতে ছিলেন ২৩ বছর বয়সী জমজ দুই ভাইবোন মোহাম্মদ ও মুনা আল-কুর্দ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হ্যাশট্যাগে শেখ জাররাহ রক্ষার (#SaveSheikhJarrah) প্রচারণা অভিযান তারাই প্রথম শুরু করেন।
গত এপ্রিলে নতুন করে ফিলিস্তিনি পরিবার উচ্ছেদের আদেশের জেরে ফিলিস্তিনজুড়ে বিক্ষোভ শুরু হয়। বিক্ষোভের ধারাবাহিকতায় মসজিদুল আকসায় মুসল্লিদের ওপর হামলা এবং গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসনের ঘটনা ঘটে। ১০ মে থেকে ২১ মে পর্যন্ত গাজায় টানা ১১ দিনের আগ্রাসনে মোট ২৫৪ জন নিহত হন। অপরদিকে অধিকৃত পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনি বিক্ষোভকারীদের ওপর ইসরাইলি বাহিনীর হামলায় ২৫ জনের বেশি নিহত হয়েছেন।
ফিলিস্তিনিদের বিক্ষোভের জেরে শেখ জাররাহ মহল্লা থেকে উচ্ছেদের আদেশ ডিসেম্বর পর্যন্ত স্থগিত করা হয়েছে। অপরদিকে ফিলিস্তিনিরা এই আদেশের বিরুদ্ধে আপিল আবেদন করেছেন।