সুলতান আব্দুল হামিদ ও বিশ্ব রাজনীতি

সুলতান আব্দুল হামিদ - ছবি সংগৃহীত
আপনি যদি বিশ্ব রাজনীতি বুঝতে চান, তাহলে আপনাকে সুলতান আব্দুল হামিদ খান সম্পর্কে অবশ্যই জানতে হবে। সুলতান আব্দুল হামিদ ছাড়া আপনি বিশ্ব রাজনীতি ক্যাম্পাসের সামনে দিয়ে ঘুরে আসতে পারবেন, তবে বিশ্বতন্ত্রের ভিশন, মিশন, গোল, অবজেক্টিভ, পার্সপেক্টিভ কিছুই সঠিকভাবে বুঝতে পারবেন না। পার কন্ট্রা আপনি আন-নোয়িংলি জায়োনিস্টদের হাতের পুতুল হয়ে যাবেন।
এই যে আজকে ফিলিস্তিনে ইহুদিদের দখলদারিত্ব, মধ্যপ্রাচ্যের তেল নিয়ে প্রভাব বিস্তারের বিশ্ব রাজনীতি, ইসলামকে এক্সট্রিমিস্ট রিলিজিয়ন হিসেবে এক্সপোজ, ইয়েমেন-সৌদি-কাতার-মিশর-আমিরাত-আফগানিস্তানসহ প্রত্যেকটা মুসলিম রাষ্ট্রে একে অপরের সাথে দ্বন্দ-রেষারেষি, এগুলো কি এমনি এমনি হচ্ছে? না। এগুলো সংগঠিত করার জন্য এমন কোন শয়তানি তাস ছিলনা, যা ইউরোপিয়ানরা চালেনি। কিন্তু তাদের প্রত্যেকটা তুরুপের তাসকে ওভারথ্রো করে দিত সুলতান আব্দুল হামিদ খান। তিনি এমন একজন মানুষ ছিলেন, যার পাশে কয়েকজন দৃঢ় প্রত্যয়ের পাশা থাকলে হয়ত আজকে পৃথিবীর ইতিহাস অন্য রকম হতো।
সুলতান আব্দুল হামিদের ইসলামি রাজনীতির উদ্দেশ্য ছিল বিশ্বের মুসলমানদের এক পতাকার নিচে একত্রিত করা। নিঃসন্দেহে যা ছিল মুসলিম বিশ্বের বিরুদ্ধে পাশ্চাত্যের ঔপনিবেশিক শক্তিগুলোর আগ্রাসনের বিরুদ্ধে এক পাল্টা শক্তিশালী প্রতিরোধী পদক্ষেপ। যখন আধুনিক ইহুদী রাজনীতি এবং ইসরাইলের জনক থিওডোর হার্জেল ফিলিস্তিনকে দখল করার জন্য তার হাতে ১৫০ মিলিয়ন পাউন্ড ঘুষ দিতে চেয়েছিল, তখন তিনি বলেছিলেন, 'আমি এই ভূমি কখনোই তাদের হাতে অর্পণ করবো না। এটা সমগ্র মুসলিম জাতির গৌরবের প্রতীক। তিনি আরো বলেন, যদি জেরুসালেম আমাদের সময়ে শেষ হয়ে যায়, তাহলে সমস্ত মুসলিম শহর শেষ হয়ে যাবে।'
সবচেয়ে অবাক করা বিষয় কি জানেন? পাশ্চাত্য শক্তি একেরপর এক ষড়যন্ত্র করেও ফিলিস্তিন দখল করতে পারল না, তেল-গ্যাসের উপর প্রভাব বিস্তার করতে পারল না, জার্মানি ব্যতীত সবগুলো খ্রিস্টান রাষ্ট্র যেমন : ব্রিটেন, রাশিয়া, ফ্রান্স, ইতালি, স্পেন, আমেরিকা, গ্রিস- সবাই জোট বদ্ধ হয়েও উসমানীয় সুলতান আব্দুল হামিদকে ধমাতে পারল না, এমনও হয়েছে গায়ে পড়ে কন্সপাইরেসি করে সব রাষ্ট্র সুলতানকে যুদ্ধের দিকে ঠেলে দিয়ে জোটবদ্ধ হয়ে যেত। কিন্তু সুলতান তার কূটনৈতিক প্রজ্ঞা দিয়ে তাদের ভিতরেই যুদ্ধ লাগিয়ে দিত। তো এভাবে ইউরোপিয়ানরা সুলতানের সাথে পেরে উঠছিল না।
কিন্তু তবুও... সুলতান পরাজিত হয়েছিল! কীভাবে... জানেন? ইউরোপিয়ানরা তরুণ তুর্কিদেরকে প্রভাবিত করে। গণতন্ত্র, স্বাধীনতা, সেক্যুলারিজম এই বিষগুলো যখন ইয়াং টার্কসদের নিউরনে প্রবেশ করালো, ঠিক তখনই সুলতান ক্ষমতাচ্যুত হলো। তারপর ১ম বিশ্বযুদ্ধ হলো। উসমানীয় সাম্রাজ্য খন্ড-বিখন্ড হলো, মুসলিমরা হারালো তাদের গৌরব, হলো অভিভাবকহীন, হাতছাড়া হলো ফিলিস্তিন। কিন্তু যদি আব্দুল হামিদ ক্ষমতাচ্যুত না হতেন, তাহলে কী প্রথম বিশ্বযুদ্ধ হতো? আর উসমানীয় সাম্রাজ্য খন্ড-বিখন্ড হতো? ইহুদিরা ফিলিস্তিনে দখলদারিত্ব করতে পারত? বিশ্ব ব্যবস্থা মুসলিমদের হাতছাড়া হতো? আমার তা মনে হয় না। তিনি হয়তো কোন না কোনভাবে ঠিক আগের মতো করেই যুদ্ধকে এড়িয়ে যেতে পারতেন।
কিন্তু প্রতারিত হওয়া ইয়াং টার্কস আর কিছু বিশ্বাসঘাতক পাশাদের কারণে সুলতান আব্দুল হামিদ খান শক্তিশালী একটি মুসলিম সাম্রাজ্য গড়ে দিয়ে যেতে পারলেন না। কিন্তু বর্তমানে দিন যতই যাচ্ছে ততই এই সত্য দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট হচ্ছে যে এই মহান সুলতান আরব, ফিলিস্তিন, ভারতীয়দের বিষয়ে কতটা সংবেদনশীন ছিলেন। মুসলমানদের আবার পূর্বের মর্যাদাপূর্ণ অবস্থানে দেখার ব্যাপারে কতটা ব্যাকুল ছিলেন। কতটা গভীর দূরদৃষ্টি ও কুটনৈতিক প্রজ্ঞায় তিনি শত্রুর প্রতিটি চক্রান্তের পাল্টা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু সকল প্রশংসা সেই মহান সত্তার যার রাজত্বের কোনো শেষ নেই।