মমতার সাথে সঙ্ঘাতেই থাকতে চান মোদি!

গৌতম দাস | Jun 05, 2021 04:17 pm
মোদি ও মমতা

মোদি ও মমতা - ছবি সংগৃহীত

 

 পশ্চিমবঙ্গ বিধান সভার এবারের নির্বাচনে হারার পর ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদির আচরণ ও তৎপরতা বলছে তিনি মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির সাথে সঙ্ঘাতেই থাকতে চান। যেমন সম্প্রতি ঘূর্ণিঝড়কে উছিলা করে মোদি মমতার সাথে এক মিটিংয়ে বসতে চান বলে ইচ্ছা প্রকাশ করলেন। কিন্তু মোদির ইচ্ছা সেখানে তিনি রাজ্য বিরোধীদলের নেতা হিসাবে তার দলের লোককেও উপস্থিত রাখবেন এবং এতে সম্ভবত দলীয় কর্মীদের দেখাবেন বিরোধী নেতাও অনেক ক্ষমতা রাখেন। এখন মমতার দাবি, মোদি এই ব্যাপারটা একা ঠিক করতে পারেন না যে, রাজ্য থেকে সচিব ও প্রশাসনিক স্টাফসহ কোন কোন জনপ্রতিনিধি তাদের দুজনের সভায় উপস্থিত থাকবেন। আর এসব বিধি বা কনস্টিটিউশনে নাই বলে দাবি করেছেন মমতা।

এমনিতেই এটা দৃষ্টিকটু যে প্রধানমন্ত্রী বুরোক্র্যাট আর মুখ্যমন্ত্রীর মতো জনপ্রতিনিধিকে একই প্রটোকলে ট্রিট করছেন। এর উপর সবখানেই মোদির এটা প্রদর্শনের ইচ্ছা যে, মুখ্যমন্ত্রী যেন প্রধানমন্ত্রীর এক অধীনস্থ প্রশাসনিক স্টাফ! এমনিতেই নেহরু কথিত কেন্দ্রের হস্তক্ষেপের বহুবিধ সুযোগ রেখে দিয়ে কেন্দ্র-রাজ্য সম্পর্ক সাজিয়ে গেছেন। কারণ তার অযথা ভয় থেকে অযাচিত ক্ষমতার চর্চা যে রাজ্য যদি কেন্দ্রের কথা না শুনে; তাই সবসময় রাজ্যকে দাবড়ে রাখার সব মেকানিজম, দ্বৈত ক্ষমতাকর্তৃত্ব-ব্যবস্থা- এসবই হবে এর হাতিয়ার। এর উপর মোদি নিজেই মমতাকে একটা শিক্ষা দিয়ে অধীনস্থতায় আসতে বাধ্য করতে চাচ্ছেন। তাই সব মিলিয়ে এটা ভয়াবহ।

এখন মমতা ওই সভায় রাজ্যের প্রধান সচিবকে সাথে নিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু ইচ্ছা করেই সম্ভবত কেবল মোদির সাথে সাক্ষাৎ করেই, কোনো মিটিং না করেই ফিরে চলে আসেন। শুধু তাই নয়, ওই রাজ্যের মুখ্যসচিবও মোদির মিটিং বর্জন করে চলে আসেন।

স্বভাবতই এটা মোদির জন্য অপমানবোধের। তিনি মুখ্যসচিবকে শোকজ করেন এবং দিল্লিতে এসে রিপোর্ট করতে বলেন। কিন্তু মুখ্যসচিব এর জবাবে লেখেন, তিনি মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে মানে কথা শুনে মোদির ওই সভায় থাকেননি। অর্থাৎ তিনি যেন বলছেন, আমিও কেন্দ্রীয় সরকারের কর্মচারী অবশ্যই। কিন্তু আমার রিপোর্টিং জনপ্রতিনিধি হলেন মুখ্যমন্ত্রী; প্রধানমন্ত্রী নন। কাজেই মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশকেই তাকে ফলো করতে হয়েছে। অর্থাৎ এটাও আসলে এক দ্বৈত ক্ষমতা ব্যবস্থার পরিণতি এবং তা বুরোক্র্যাসিতে।
এমনিতেই সবখানে জাতিবাদের শ্রেষ্ঠত্ববাদের তোড়ে ভারত ডুবছে। এর ওপর তাদের আরেক ভ্যানিটি হলো, ভারতের ব্যুরোক্র্যাসি নাকি ‘স্টিলের তৈরি’, তাই এটা এতই শক্ত। আর ক্রেডিট হলো নাকি বল্লভভাই প্যাটেলের। তিনি এক গুজরাটি লোক। তাই মোদি গুজরাটে তার রেকর্ড উঁচু এক স্ট্যাচু বানিয়ে নিজেই আরো বিখ্যাত হওয়ার চেষ্টা করেছেন। আর সেই প্যাটেল হলেন আবার নেহরুর সব আকাম বা জবরদস্তি ঘটানো যে কোনো কাজের ডানহাত। যেমন ১৯৪৭ সালে সেনাবাহিনী পাঠিয়ে করদ রাজাদের ভারতে অন্তর্ভুক্ত হতে বাধ্য করার নেতা তিনি ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে।
এখন বাস্তবে এই স্টিলের ব্যুরোক্র্যাসির যে দ্বৈত শাসনব্যবস্থা সেটাই ভেঙে পড়তে যাচ্ছে তা বুঝতে পারা বা বিপদ অনুভব করার কেউ আছেন এমন দেখা যাচ্ছে না।

কাজেই এভাবে চললে মোদির টার্ম শেষ হতে হতে ২০২৪ সাল নাগাদ নেহরুর ছাপ মারা এই ভারত মানে, এই নেহরুভিয়ান ভারতরাষ্ট্র তার জন্মদুর্বলতায় ক্রমেই আরো কয়েক ধাপ ভাঙনের দিকেই এগিয়ে যাবে। এর সোজা প্রকাশ আমরা দেখতে পাবো পরবর্তীতে কথিত কেন্দ্রীয় সরকার গঠনে। আমরা দেখব, কোনো সর্বভারতীয় দল যেমন কংগ্রেস বা বিজেপি আর কেন্দ্রে সরকার গড়তে পারছে না। কোয়ালিশনই একমাত্র ভরসা হিসেবে উঠে আসছে।

এটাই রাষ্ট্র ভেঙে পড়ার পূর্বাভাস। এমনিতে রাষ্ট্র ভেঙে পড়া মানেই তা খারাপ, তা কিন্তু নয়। কারণ গড়তে গেলে তো আগে তা ভাঙতেই হবে। কিন্তু এটাই বিরাট বিপদের হবে যখন ভাঙার পরে গড়বেন কিভাবে, কী গড়তে চান, এনিয়ে আপনি একেবারেই অপ্রস্তুত ও পরিকল্পনাহীন! সারা ভারতের দশা আবার এটাই বলে মনে হয়!
লেখক : রাজনৈতিক বিশ্লেষক

goutamdas1958@hotmail.com


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us