রেড ইন্ডিয়ানদের উৎখাত করে যেভাবে গঠিত হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র
যুক্তরাষ্ট্রের রেড ইন্ডিয়ান - ছবি সংগৃহীত
আজকের ফেডারেল আমেরিকা রাষ্ট্র ১৭৭৬ সালের ৪ জুলাই জন্ম নিয়েছিল। আর এর আগের কলোনিয়াল আমেরিকা বলতে তা ব্রিটিশসহ ইউরোপের বহু রাষ্ট্রেরই ছোট ছোট কলোনি বা দখলকৃত ভূমি হিসেবে ছিল। আর ওই দখলকৃত ভূমিগুলো আবার ব্রিটিশসহ নানান ইউরোপীয় দখলদারেরা নিজ নিজ দেশ থেকে ‘বিনা পয়সায় জমি দেয়া হবে, শুরুর বিনিয়োগ দেয়া হবে’ ইত্যাদি নানা প্রলোভনের কথা বলে গরিব ইউরোপীয় বাসিন্দাদের মাইগ্রেট করে জাহাজে ভরে ভরে এককালে আমেরিকায় এনেছিল।
এসব গরিব ইউরোপীয় বাসিন্দাই জমি পাবার লোভে স্থানীয় আদি বাসিন্দাদেরকে (‘রেড ইন্ডিয়ান’ বলে এরা ডাকত যাদের) খেদিয়ে দিয়েছিল, কখনো মেরে ফেলা হয়েছিল অথবা আরো গহিন বন জঙ্গলে পালাতে বাধ্য করা হয়েছিল। আর এভাবেই সাদা চামড়ার কলোনি মালিকেরা সাদা ইউরোপীয় মাইগ্রেন্টদের এনে বসতি স্থাপনে বিভিন্ন ছোট শহর বা রাজের আমেরিকা কলোনি স্থাপন সম্পন্ন করেছিল। এই প্রথমপর্বের পরে মালিকেরা এরপর সেখানে নিয়ে আসে আফ্রিকানদেরকে ‘কালো দাস’ নামে, একইভাবে মাইগ্রেট করিয়ে। তফাত খালি এরা পায়ে শিকল পরানো দাস হিসেবে এসেছিল এবং আফ্রিকা থেকে। আর এই দাসদেরকেই পরিচালনা করত সাদা মাইগ্রেন্টরা তবে সাদা মালিকদের পক্ষ থেকে। আর রাশিয়ান সোভিয়েত শ্রমশিবিরের চেয়েও ভয়াবহভাবে শিকলে বাঁধা দাসশ্রমিক হিসেবে। তবু যতই দিন গেছে, আর কালো মানুষেরা যত পোষ মেনেছে, ততই শিকল আলগা করে দিতে হয়েছে।
ওদিকে ব্রিটিশেরা ভারতে কলোনি দখল ও শাসন শুরু করেছিল-আমেরিকার কলোনিমুক্ত বা স্বাধীন হবার মাত্র কুড়ি বছর আগেই। ব্রিটিশেরা ভারতীয়দের পায়ে শিকল না দিলেও কলোনির হুকুম ও বাধ্যবাধকতার ভিতরে রেখেছিল যা আমাদের প্রায়ই অসহ্য হয়ে উঠলে বিদ্রোহের ঘটনা ঘটত। কিন্তু আমেরিকার বেলায় নানান শহর ও রাজ্যের সাদা মাইগ্রেন্টরাই এক সময় তাদেরই মাস্টার বা সাদা মালিকদের শাসনের বিরুদ্ধে শুধু বিদ্রোহ নয় একবারে বিপ্লব- মানে পালটা ক্ষমতা দখল করে বসেছিল। এটাই আমেরিকান কলোনিতে ‘নয়া আমেরিকান বিপ্লব’ নামে পরিচিত, যার সময়কাল ১৭৭৬ সালের আশপাশের সময়। সোজা কথা, ব্রিটেনে বসে কলোনি ব্যবসায়ী মালিকেরা আমেরিকায় তাদের নানা শহর বা রাজ্যের কলোনিগুলো সাদা ইউরোপীয় মাইগ্রেন্টদের দিয়ে পরিচালনা করবে, এই সুযোগেরই পরিসমাপ্তি ঘটেছিল এতে। এরপর স্বাধীন সেসব শহর ও কোথাও পুরা রাজ্যটাই স্বাধীন এবং এবার তারা একত্রে হবার জন্য সম্মিলিত হয়ে বসেছিল; যেটাকে তারা আমেরিকা মহাদেশীয় সম্মেলন (আমেরিকান কন্টিনেন্টাল কংগ্রেস ১৭৭৫) নামে ডাকে। এরপর এক ফেডারেল আমেরিকা রাষ্ট্রে তারা সম্মিলিতভাবে গঠিত হয় পরের বছর।
লক্ষণীয় যে, এখানে শহর বা রাজ্যগুলো আগে স্বাধীন ও কলোনিমুক্ত হয়েছে; পরে স্বাধীন রাজ্যগুলো একটা রাষ্ট্রে একত্রিত হতে এসেছিল। এটাই ১৭৭৬ সালের ৪ জুলাই জন্মের ঘোষণা দেয়া আজকের ফেডারেল আমেরিকা রাষ্ট্র ও এর বৈশিষ্ট্য। তবে আজকের ৫০ রাজ্যের আমেরিকা যা আমরা দেখছি তা শুরুতে ছিল না। মাত্র ১৩টা রাজ্য কনফেডারেশনে এ ফেডারেল রাষ্ট্র গড়তে সম্মতি দিয়েছিল। কেন? কারণ সবার ভয় ছিল নতুন এই ফেডারেল রাষ্ট্র গড়তে গিয়ে আবার আগের মতো কোনো রাজ্য আরেক রাজ্যের ওপর কলোনির মতো আচরণ শুরু করে কি না- সেটাই সবাই আগে নিশ্চিত হতে চেয়েছিল। তাই দ্বিধা ও দেরি। তাই ধীরে ধীরে আস্থা আসার পক্ষে আইন-কানুন কী তৈরি হচ্ছে সেগুলো এবং গঠনতন্ত্র কী রাখা হচ্ছে, কাঠামো কী ইত্যাদি দেখে আর কিছুটা প্র্যাকটিসে নিশ্চিত হবার পরে ১৩ রাজ্য থেকে সেটা আজ ৫০ রাজ্যের আমেরিকা।