চাপের মুখে দিলীপ ঘোষ
দিলীপ ঘোষ - ছবি সংগৃহীত
ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে মারাত্মক চাপের মুখে পড়েছে বিজেপি। ক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্ন সফল না হওয়ার খেসারত তাদের এখনো দিতে হচ্ছে।
বিধায়ক সংখ্যা বাড়লেও রাজপাট বহু দূরেই রয়েছে। ঘাসফুল ছেড়ে যারা পদ্মফুলে বাসা বেঁধেছিল তা এখন তারাই তা ভেঙে দিতে চাইছে। ফিরে যেতে চাইছে পুরনো দলেই। কারণ মোহভঙ্গ হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে শুক্রবার হুগলি সাংগঠনিক জেলা কার্যালয়ে দলীয় বৈঠক করতে আসেন বিজেপির পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। বৈঠক শেষে বেরনোর সময় বিজেপির কর্মীরা রাজ্য সভাপতিকে ঘিরে ধরে বিক্ষোভ দেখায়। তাতেই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে পরিবেশ। এমনকী মেজাজ হারিয়ে কর্মীদের তিরষ্কার করেন দিলীপ ঘোষ। এই ঘটনায় হুগলির এমপি লকেট চট্টোপাধ্যায়ের দাবি, তৃণমূল কংগ্রেসের মদতপুষ্ট হয়েই কিছু দলীয় কর্মী এই কাজ করেছে। কিন্তু যেখানে সংগঠনের হাল রোজ তলানিতে গিয়ে পৌঁছছে সেখানে এমন আচরণ আরো ক্ষতি করতে পারে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা।
স্থানীয় সূত্রে খবর, বিজেপির দলীয় কার্যালয়ে বৈঠক শুরুর হতেই ঘরের বাইরে দাঁড়িয়ে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন জেলার কর্মী–সমর্থকেরা। তাঁদের দাবি, ভুল প্রার্থী নির্বাচনের জন্যই জেতা আসন খোয়াতে হয়েছে বিজেপিকে। তাছাড়া জেলার বহু কর্মী এখনও ঘরছাড়া। আর জেলা বিজেপি নেতৃত্ব কোনও পদক্ষেপ করেনি বলে অভিযোগ। আবার জেলা বিজেপি সভাপতি গৌতম চট্টোপাধ্যায় ও রাজ্য সম্পাদক দীপাঞ্জন গুহকে পদ থেকে সরানোর দাবি করেন বিজেপি কর্মীরা।
বিক্ষুব্ধ বিজেপি কর্মী দেবপ্রসাদ চক্রবর্তী বলেন, ‘এই ভরাডুবি বিজেপির হতো না। শুধুমাত্র ভুল প্রার্থী নির্বাচনের জেরে এই ভরাডুবি। যারা দিনে বিজেপির সঙ্গে থেকে রাতে তৃণমূল কংগ্রেসের ঘরে গিয়ে টাকাপয়সার ভাগ করেছে তাদের প্রার্থী করা হয়েছে। বালিখাদানের বালি চোর, সিন্ডিকেটের দালাল এরা সব। আমরা অবিলম্বে জেলা সভাপতি গৌতম চট্টোপাধ্যায় ও দীপাঞ্জন গুহর অপসারণ চাই। আমরা প্রথম দিন থেকে পার্টির কাছে দায়বদ্ধ। আগে অনেকবার লিখিত দিয়েছি, কাজ হয়নি। আজ তাই বাধ্য হয়ে এই চরম সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
ঠিক কী ঘটেছে? বৈঠক সেরে বেরনোর সময় দিলীপ ঘোষকে ঘিরে ধরেন বিক্ষোভকারীরা। তারা জানান, দল ব্যবস্থা না নেয়ায় মার খেতে হচ্ছে। কাজ করেও পদ–সম্মান মিলছে না। রাজ্য সভাপতি হয়ে যেন যথাযথ চিন্তা করেন। কিন্তু ক্রমশ পরিস্থিতি উত্তপ্ত হওয়ায় মেজাজ হারান দিলীপ ঘোষ। তিনি বলেন, ‘ভদ্রভাবে কথা বলো। তোমার চেঁচামিচি শুনতে এখানে আসিনি। চেঁচাবে না। পার্টির জন্য মার খেয়েছ তো কী হয়েছে! আমি ১০বার মার খেয়েছি। তুমি কতবার মার খেয়েছ? বিজেপি করবে আর মার খেতে পারবে না! তাহলে পার্টি ছেড়ে দাও, তৃণমূল কংগ্রেস করো।’ পরে তিনি বলেন, ‘আপনাদের সকলের কথা শুনেছি। মাথায় রাখছি।’ কিন্তু ততক্ষণে ক্ষেপে গিয়েছেন কর্মীরা।
শুক্রবার দিনের ঘটনায় কার্যত বিপদের সিঁদুরে মেঘ দেখছেন দিলীপ ঘোষ–সহ রাজ্য বিজেপি নেতৃত্বের একাংশ। কারণ এমন চলতে থাকলে সংগঠন শেষ হয়ে যাবে। আর মাথা তুলে দাঁড়ানো সম্ভব হবে না। সেখানে মাথা ঠাণ্ডা করে সবাইকে নিয়ে চলা এখন কাজ। উলটে মাথা গরম করে দিলীপ ঘোষ কর্মীদের ক্ষেপিয়ে তুলেছেন বলে মনে করছেন রাজনৈতিক কুশীলবরা। বিজেপির এই বিক্ষোভ সামনে আসতেই পাল্টা তোপ দেগেছে শাসকদল। জেলা তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি দিলীপ যাদব বলেন, ‘বিজেপি এতই শৃঙ্খলাপরায়ণ দল যে নিজেদের ঘরের ঝামেলা মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে।’
সূত্র : হিন্দুস্তান টাইমস