মনসুর আব্বাসকে মেনে নিতে পারছে না ফিলিস্তিনিরা!
মনসুর আব্বাস - ছবি : সংগৃহীত
ইসরাইলে নতুন সরকার গঠনে বিরোধী নেতাদের মধ্যে যে চুক্তি হয়েছে তাতে প্রথম দুই বছরের জন্য প্রধানমন্ত্রী হতে পারেন নাফটালি বেনেট৷ এরপর প্রধানমন্ত্রী হবেন বর্তমান সংসদের বিরোধী নেতা ইয়াইয়া লাপিদ৷
সাম্প্রতিক সংঘাতের বেশিরভাগ দায় ফিলিস্তিনিদের বলে বৃহস্পতিবার মন্তব্য করেন সম্ভাব্য নতুন প্রধানমন্ত্রী নাফটালি বেনেট৷ ইসরায়েলের চ্যানেল ১২কে তিনি বলেন, ‘সত্যটা অবশ্যই বলতে হবে৷ ইসরাইল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে যে সংঘাত, সেটা এলাকা নিয়ে নয়৷ ফিলিস্তিনিরা এখানে আমাদের অস্তিত্ব স্বীকার করে না, এবং মনে হচ্ছে এই মনোভাব আরো অনেকদিন থাকবে৷'
প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশন বা পিএলওর একজন প্রতিনিধি বাসেম আল-সালহি বলছেন, যিনি প্রধানমন্ত্রী হতে চলেছেন তিনি নেতানিয়াহুর চেয়ে কম চরমপন্থী নন৷ ‘তিনি কতটা চরমপন্থী তা প্রমাণের চেষ্টা চালাবেন,' বলেন আল-সালহি৷
গাজার এক সরকারি কর্মকর্তা আহমেদ রেজিকের কণ্ঠেও একইরকম সুর শোনা গেছে৷ ‘ইসরাইলের নেতাদের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই,' বলে মনে করেন তিনি৷ ‘তারা তাদের দেশের জন্য ভালো কিংবা খারাপ৷ কিন্তু আমাদের প্রশ্নে তারা সবাই খারাপ, এবং তারা সবাই ফিলিস্তিনিদের তাদের অধিকার ও ভূমি ফিরিয়ে দিতে চান না৷'
গাজা শাসন করা হামাসও বলছে, ইসরাইলে সরকারে কে নেতৃত্বে আছে সেটা কোনো পার্থক্য নিয়ে আসে না৷ ‘ফিলিস্তিনিরা ইসরায়েলে ডান, বাম, মধ্যপন্থি এমন কয়েক ডজন সরকার দেখেছে৷ কিন্তু তারা সবাই ফিলিস্তিনিদের অধিকার প্রশ্নে বৈরী মনোভাব দেখিয়েছে,' বলেন হামাসের মুখপাত্র হাজেম কাসেম৷
এই প্রথমবারের মতো ইসরাইলি সরকারের অংশ হতে যাচ্ছে একটি ইসলামি দল৷ ইসরাইলের মোট জনসংখ্যার ২১ শতাংশ আরব সম্প্রদায়ের৷ তারাই ভোট দিয়ে ঐ দলকে সংসদে পাঠিয়েছে৷ এই আরবদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য ফিলিস্তিনের মতো, তবে তারা ইসরাইলের নাগরিক৷
ইসলামি ঐ দলের নেতা মনসুর আব্বাস বলেন, বিরোধীদের মধ্যে সরকার গঠনের যে চুক্তি হয়েছে, তার আওতায় ইসরাইলের আরব অধ্যুষিত শহরগুলোর অবকাঠামো উন্নয়ন ও সেখানে সহিংসতা কমাতে ১৬ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করা হবে৷
তবে পশ্চিম তীর ও গাজায় সমালোচনার মুখে পড়েছেন মনসুর আব্বাস৷ তিনি ‘শত্রু'র পক্ষ নিয়েছেন বলে অভিযোগ করা হচ্ছে৷
মনসুর আব্বাস সম্পর্কে গাজার বাসিন্দা বাদরি করম বলেন, ‘তিনি একজন বিশ্বাসঘাতক৷ গাজায় নতুন করে যুদ্ধ শুরু করতে যখন তার মত চাওয়া হবে তখন তিনি কী করবেন? তিনি কি তাতে সায় দেবেন এবং ফিলিস্তিনিদের হত্যার অংশীদার হবেন?'
পশ্চিম তীরে ইসরাইলের বসতি সম্প্রসারণের কট্টর সমর্থক নাফটালি বেনেট৷ তিনি সেটা চালিয়ে যেতে চান৷ তবে ফিলিস্তিনিদের জন্য কিছু শর্ত সহজ করার পক্ষে তিনি৷ ‘এ প্রশ্নে আমার ভাবনা হচ্ছে সংঘাত কমিয়ে আনা৷ আমরা এটার সমাধান করবো না৷ তবে যেখানে সম্ভব সেখানে শর্ত সহজের চেষ্টা করবো- যেমন আরো ক্রসিং পয়েন্ট বসানো, জীবনমানের উন্নতি করা, আরো ব্যবসা, আরো শিল্প স্থাপন- এসব আমরা করবো,' বলেন নাফটালি বেনেট৷
সূত্র : ডয়চে ভেলে
এই সরকার ইসরাইলের জন্য বিপজ্জনক হবে : নেতানিয়াহু
পশ্চিম তীরে ইসরাইলের রাজনৈতিক দলগুলো মিলে যে জোট সরকার গঠনে সম্মত হয়েছে, তাকে ‘বামপন্থি’ সরকার বলে সমালোচনা করেছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেনঞ্জামিন নেতানিয়াহু। তিনি মন্তব্য করেছেন, এই সরকার ইসরায়েলের ভবিষ্যতকে বিপদাপন্ন করে তুলবে। প্রস্তাবিত সরকারের বিরুদ্ধে দেশের ডানপন্থিদের একজোট হওয়ার আহ্বানও জানিয়েছেন তিনি। এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে বিবিসি।
জানা যায়, রাজনৈতিক দলগুলো ঐকমত্যে পৌঁছানোর পর প্রথম প্রতিক্রিয়ায় এক টুইটে নেতানিয়াহু বলেন, ‘এটি (নতুন সরকার) হলো ইসরাইল বাসীর জন্য শতাব্দীর সবচেয়ে বড় প্রতারণা। এটি একটি বামপন্থি সরকার। নিশ্চিতভাবেই অদূর ভবিষ্যতে এর কারণে ইসরাইলের সার্বভৌমত্ব ও জনগণের জীবন-নিরাপত্তা বিপদাপন্ন হবে। আমি নেসেটের (ইসরাইলের আইনসভা) ডানপন্থি সব সদস্যকে এই সরকারের বিরুদ্ধে অবস্থান স্পষ্ট করার আহ্বান জানাচ্ছি। এই বামপন্থিদের রুখে দিন।’
এদিকে, নেতানিয়াহুকে সরিয়ে নতুন সরকার গঠন করতে জোট তৈরি করেছে ৮টি বিরোধী দল। ইয়ামিনা পার্টি ও ইয়েশ আটিডের নেতৃত্বাধীন এই জোটে যুক্ত হয়েছে একটি আরব দল। ইসরায়েলের ইতিহাসে প্রথমবার এমনটা হলো।
আট দলের জোট সরকার গঠন করার লক্ষ্যে বুধবার রাতে ইসলামি আন্দোলনের দক্ষিণ শাখার রাজনৈতিক দল ইউনাইটেড আরব লিস্ট (রাআম) প্রধান মনসুর আব্বাসের সাথে চুক্তি স্বাক্ষর করেছে ইয়েশ আটিড দলের নেতা ইয়ার লাপিদ। তারা নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে একজোট হয়েছে।
ইসরায়েলি পাবলিক ব্রডকাস্টিং কর্পোরেশনে (কেএন) প্রকাশিত এক বিবৃতিতে মনসুর আব্বাস বলেন, যৌথ সরকার গঠণের এই চুক্তির মধ্য দিয়ে লাভবান হবে আরবরা। বিশেষ করে নেগেভ অঞ্চলের বাসিন্দারা। এখানে তাদের জন্য বড় বাজেটেরও বরাদ্দ রয়েছে।
এই প্রথমবারের মতো ইসরাইল সরকারের সাথে কোনো আরব দল যুক্ত হতে যাচ্ছে। আব্বাস বলেন, এটি খুবই কঠিন সিদ্ধান্ত ছিল। এ নিয়ে অনেক বিতর্কও রয়েছে। তবে আমরা বিশ্বাস করি যে, সরকার গঠণের জন্য এটি সুবর্ণ সুযোগ।
আলজাজিরার বরাতে জানা যায়, ইসরাইলি প্রেসিডেন্টের কার্যালয় থেকে জানানো হয়েছে ডানপন্থী ইয়ামিনা দলের প্রধান বেনেত পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব পালন করবেন এবং লাপিদ বিকল্প প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করবেন।
টুইটারে এক বিবৃতিতে ইয়ার লাপিদ বলেন, এই সরকার ইসরাইলি সমাজ কে ঐক্যবদ্ধ করতে বদ্ধপরিকর। নতুন সরকার সবার জন্য কাজ করবে, যারা আমাদের পক্ষে তাদের জন্য যারা আমাদের পক্ষে না তাদের জন্যও।