ইসরাইলকে কেন যুক্তরাষ্ট্র সমর্থন দেয়?
নেতানিয়াহু ও ট্রাম্প - ছবি : সংগৃহীত
ইসরাইল কেন এতটা শক্তিশালী? এই প্রশ্নের উত্তর হলো আমেরিকা সমর্থন। শুধু এতটুকুই নয়। এর রাজনৈতিক, ভৌগোলিক ও ঐতিহাসিক কারণও আছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জার্মানি ও পোল্যান্ডে ইহুদিদের ওপর গণহত্যা চালানো হয়। ইহুদিদের দাবি অনুযায়ী ৬০ লাখ ইহুদি এই গণহত্যায় হত্যা করা হয়। এই গণহত্যাকে 'Holocaust' বলা হয়। এই গণহত্যার অজুহাতে ব্রিটেন তাদের দখলে থাকা ফিলিস্তিনি ভূমিতে ইহুদি রাষ্ট্র ইসরাইল প্রতিষ্ঠা করতে দেয়। আমেরিকাও ইসরাইলকে সমর্থন দেয়। আজ আমেরিকা ও ব্রিটেন এই দুটি দেশ ইসরাইলকে রক্ষা করাকে নিজেদের দায়িত্ব মনে করে থাকে। এর একটি কারণ হলো আমেরিকা ও অন্যান্য পশ্চিমা দেশ মনে করে থাকে ইসরাইলই মধ্যপ্রাচ্যের একমাত্র দেশ যা যুদ্ধ ও শান্তি দুই অবস্থাতেই মধ্যপ্রাচ্যে তাদের স্বার্থ রক্ষা করবে। এ জন্য আমেরিকা ও পশ্চিমা দেশগুলো ইসরাইলকে সব রকম সাহায্য ও সমর্থন দেয়। ইসরাইল এই সমর্থনকে তাদের পররাষ্ট্রনীতিতে তুরুপের তাস হিসেবে ব্যবহার করে। ফলে আন্তর্জাতিক নিন্দা সত্ত্বেও আজ পর্যন্ত ইসরাইলের তেমন কোনো ক্ষতি কেউ করতে পারেনি।
আমেরিকার সমর্থনের পর যে জিনিস ইসরাইলকে সবচেয়ে বেশি শক্তি দেয় তা হলো এর নিজস্ব প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি। এছাড়া আমেরিকা, ব্রিটেন ও ফ্রান্স তাদের তৈরি অত্যাধুনিক অস্ত্র বাধ্যতামূলকভাবে ইসরাইলকে সরবরাহ করে থাকে। আমেরিকা, ফ্রান্স ও ব্রিটেন সামান্য পরিমাণ মানবাধিকার লঙ্ঘিত হলে যেকোনো দেশের অস্ত্রের সরবরাহ আটকে দেয়। কিন্তু এর চেয়েও গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘিত হলেও আমেরিকা, ফ্রান্স ও ব্রিটেন ইসরাইলকে অস্ত্র সরবরাহ করা বন্ধ করে না। উদাহরণ স্বরূপ ২০০৬ সালের ইসরাইল-লেবানন যুদ্ধের কথা বলা যায়। তখন ইসরাইলি বিমান হামলায় নিহত শিশুদের ছবি সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়েছিল।
তাও আমেরিকা এফ-১৬ বিমান সরবরাহ করেছিল ইসরাইলকে। আমেরিকা এর জবাবে বলছিলো- 'যদি আমেরিকা এখন ইসরাইলের সাথে অস্ত্র বিক্রির চুক্তি ভেঙ্গে ফেলে তাহলে ভবিষ্যতে আর কোনো দেশ আমেরিকার ওপর বিশ্বাস করবে না।' যদিও এর মাত্র ১৬ বছর আগে পাকিস্তানকে এফ-১৬ সরবরাহ করতে অস্বীকার করে। অথচ এর মূল্য পাকিস্তান আগেই পরিশোধ করেছিলো। ২০১৬ সালে আমেরিকার সাথে একটি চুক্তি করে ইসরাইল। এই চুক্তি অনুযায়ী ১০ বছরে ৩৮ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র পাবে আমেরিকা থেকে। তাও একেবারে বিনামূল্যে। ইসরাইলের কাছে মোট ৬ লক্ষ ৪৩ হাজার সেনাসদস্য আছে। যার মধ্যে ১ লক্ষ ৭০ হাজার সক্রিয়। আছে ৫৯৫টি যুদ্ধ বিমান। ৬৫টি যুদ্ধ জাহাজ ও ১৬৫০টি ট্যাংক আছে। কিছু কিছু হিসেব মতে ট্যাংকের সংখ্যা ২৬০০-এর বেশি। ইসরাইলের কাছে এফ-১৫, এফ-১৬ এবং পঞ্চম প্রজন্মের এফ-৩৫ বিমানও আছে। এফ-৩৫ শত্রুর দৃষ্টি এড়িয়ে লক্ষ্য বস্তুতে আঘাত করার ক্ষমতা রাখে।
ইসরাইলের কাছে ১ লাখ ৭০ হাজার সক্রিয় সৈন্য রয়েছে। এটা আরব দেশগুলোর তুলনায় কম মনে হলেও ইসরাইলের কাছে ৪ লাখ ৬৫ হাজার রির্জাভ সৈন্যও আছে। এছাড়া প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক ইসরাইলি নাগরিক সামরিক প্রশিক্ষণ পেয়ে থাকে। এ হিসেবে বলা যায় ইসরাইলের পুরো জনসংখ্যাই সেনাবাহিনী। গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ারের র্যাংকিং অনুযায়ী ইসরাইল ২০তম সামরিক শক্তি। যেখানে বাংলাদেশ ৪৫তম। আমেরিকা ১ম, রাশিয়া ২য়, চীন ৩য় ও ভারত ৪র্থ। ইসরাইলের এ বছরের প্রতিরক্ষা বাজেট ২০.৫ বিলিয়ন ডলার। যেখানে বাংলাদেশের মাত্র ৩.৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। বাংলাদেশ আয়তনের দিক দিয়ে ইসরাইলের চেয়ে ৮ গুণ বড়। আর জনসংখ্যার হিসাবে ১৭ গুণ বড়। কিন্তু তাও বাংলাদেশের চেয়ে ৬ গুণ বেশি শক্তিশালী ইসরাইল।
আমেরিকার সাহায্যে ইসরাইল অস্ত্র নির্মাণ শিল্পে বেশ উন্নতি করেছে। ইসরাইল ৮ম বৃহৎ অস্ত্র বিক্রিকারী দেশ এবং সবচেয়ে বড় ড্রোন বিক্রিকারী দেশ। ইসরাইলের অস্ত্র বিক্রি ২০১৮ সালে ৯ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করে। যা ২০২০ সালে ৮.৩ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে। ইসরাইল অটোমেটিক অস্ত্র, রাতে অনেক দূর পর্যন্ত দেখতে পাওয়ার যন্ত্র এবং দেয়ালের ওপার থেকে মানুষের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করার যন্ত্র নিজেই তৈরি করে। এছাড়া ইসরাইলের কাছে নিজস্ব এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম 'আয়রন ডোম' ও আছে। যা যেকোনো মিসাইলকে ধংস করতে সক্ষম আকাশেই। তবে সাম্প্রতিক ইসরাইল-হামাস সঙ্ঘাতে আয়রন ডোমের দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। আর ইসরাইলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী আমেরিকা গিয়েছেন আয়রন ডোমের আধুনিকায়নের জন্য এক বিলিয়ন ডলারের আমেরিকান সাহায্যের জন্য।