মানুষের জন্য কতটা মারাত্মক এই বার্ড ফ্লু?
মানুষের জন্য কতটা মারাত্মক এই বার্ড ফ্লু? - ছবি সংগৃহীত
করোনাভাইরাসের সংক্রমণে বিধ্বস্ত পুরো বিশ্ব। চীনের উহান থেকে প্রথম ছড়ায় এই ভাইরাস। এরই মধ্যে চীনে বার্ড ফ্লুর এইচ১০এন৩ (H10N3) স্ট্রেনের সন্ধান মিলল মানব শরীরে। মানব শরীরে এর সন্ধান দেখা গেল এই প্রথম। মঙ্গলবার চীনের জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশন এই খবর প্রকাশ করেছে।
এর মধ্যেই ভারতের চিন্তা বাড়িয়েছে বার্ড ফ্লু। ন’টি রাজ্যে বার্ড ফ্লু ঘোষণা করেছে কেন্দ্র। জারি হয়েছে সতর্কতাও।
• বার্ড ফ্লু আসলে কী?
বার্ড ফ্লু বা আভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা শুধু যে পাখিদের জন্য মারাত্মক, তা নয়। হু বলছে, মানুষ বা পশু বাহকের সংস্পর্শে এলে তাদেরও ক্ষতি হতে পারে। তবে এই ভাইরাসের বেশিরভাগ প্রকৃতি শুধু পাখিদের মধ্যেই দেখা যায়। ১৯৯৭ সালে প্রথম মানুষের মধ্যে এই এইচ৫এন১ সংক্রমণ দেখা যায়।
• কীভাবে বুঝবেন এইচ৫এন১ দ্বারা সংক্রামিত হয়েছেন?
কাশি
ডায়রিয়া
শ্বাসকষ্ট
১০০ ডিগ্রির ওপর জ্বর
মাথা যন্ত্রণা
পেশীতে ব্যথা
সর্দি
গলা ব্যথা
অস্থিরতা
• কীভাবে মানুষ সংক্রামিত হন?
বার্ড ফ্লুর অনেক ধরন রয়েছে। এইচ৫এন১ মানুষের মধ্যেও সংক্রামিত হতে পারে। ১৯৯৭ সালে হংকংয়ে প্রথম এই সংক্রমণ দেখা যায়। ৮০ জন আক্রান্ত হন। মারা যান এক জন। বার্ড ফ্লুয়ে আক্রান্ত মুরগী বা পাখির মল, নাক, চোখ বা মুখ থেকে যে রস পড়ে, তার সংস্পর্শে এলে মানুষ আক্রান্ত হতে পারেন। তবে মানুষের থেকে মানুষের শরীরে এই ভাইরাস সংক্রমণের হার খুবই কম।
• কাদের এই সংক্রমণ হওয়ার আশঙ্কা বেশি?
* পোলট্রির কর্মী বা পালক
* স্বাস্থ্যকর্মী
* পশু চিকিৎসক
* ঠিকভাবে রান্না না করে মাংস বা ডিম খেলে
• চিকিৎসা কী?
এক এক ধরনের বার্ড ফ্লুর উপসর্গ এক এক রকম। চিকিৎসাও এক এক রকম। সাধারণত অ্যান্টিবায়োটিক দেয়া হয়।
• প্রতিরোধের উপায়?
* কিছু বিষয়ে সাবধান হলে বার্ড ফ্লু–র সংক্রমণ রুখতে পারবেন।
* সংক্রামিত পাখির সংস্পর্শে যাবেন না
* খোলা বাজারে না যাওয়ার ভালো
* গোশত ভালো করে রান্নার পর খান
* ডিম সুসিদ্ধ করেই খান
* প্রয়োজনে টিকা নিতে পারেন
চীনকে ঘিরে আতঙ্ক
চীনের পূর্ব জিয়াংসু প্রদেশ থেকে বার্ড ফ্লুর একটি নির্দিষ্ট স্ট্রেইন থেকে মানুষের সংক্রমণের খবর মিলেছে। করোনার সূত্র যখন খুঁজে পেতে ব্যস্ত গোটা দুনিয়া,তখনই বার্ড ফ্লু ঘিরে নয়া আতঙ্ক সেই চীন থেকেই। চীনের জিয়াংশু প্রভিন্সে প্রথম দেখা গেল বার্ড ফ্লুতে সংক্রমিত কোনো মানুষ। এর জেরে চীনের জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশন জারি করেছে নতুন অ্যাডভাইসারি।
সূত্রের খবর, হেঞ্জিয়াং শহরের বাসিন্দা ৪১ বছরের এক ব্যক্তি আক্রান্ত হন। তার শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল। হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেয়া হতে পারে বলে জানা গেছে। ওই ব্যক্তির সংস্পর্শে যারা ছিলেন, তাদের মধ্যেও কোনো সমস্যা দেখা দেয়নি। তবে এই সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া বা মহামারির আকার নেয়ার কোনো আশঙ্কা নেই বলে স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।
এনএইচসি জানিয়েছে, এর আগে বিশ্বে এইচ১০এন৩ স্ট্রেইন থেকে মানুষের সংক্রমণের কোনো ঘটনার রেকর্ড নেই। এটিই প্রথম। চাইনিজ সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন গত সপ্তাহে রোগীর কাছ থেকে রক্তের নমুনা সংগ্রহ করে। তাতে জিনোম সিকোয়েন্সিং করা হয়। তারপরেই সেটির স্ট্রেইনের বিষয়ে জানা যায়। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ আক্রান্ত ব্যক্তিকে কড়া পর্যবেক্ষণে রেখেছেন।
চীনের সরকারি বিশেষজ্ঞরা স্থানীয়দের অসুস্থ বা মৃত হাঁস-মুরগির সংস্পর্শ এড়াতে নির্দেশ দিয়েছেন। এছাড়া পাখির থেকেও দূরত্ব বজায় রাখার পরামর্শ দিয়েছেন। সেইসাথে মাস্ক পরার নির্দেশও দেয়া হয়েছে। এর পাশাপাশি জ্বর ও শ্বাসকষ্টের ক্ষেত্রে দ্রুত পরীক্ষা করানো উচিত, পরামর্শ এনএইচসি-র। এর আগে ২০১৬-১৭ সালে এইচ৭এন৯ স্ট্রেনে আক্রান্ত হয়ে প্রায় ৩০০ মানুষ মারা গিয়েছিল। তার পর থেকে অবশ্য মানব শরীরে আর সে অর্থে বার্ড ফ্লুর সংক্রমণের খবর পাওয়া যায়নি।
চীনের উহান ভাইরোলজি ল্যাব থেকে করোনার জন্ম নিয়ে বিতর্ক চলছে। এই পরিস্থিতিতে বার্ড ফ্লু ঘিরে নয়া আতঙ্ক চীনেই। এবার ওই দেশেরই জিয়াংসু নতুন করে বার্ড ফ্লুয়ের স্ট্রেইন মিলতেই বিতর্ক দানা বাঁধছে।
সূত্র : আজকাল ও এই সময়