ট্রাম্পের উপেক্ষার জবাব দিচ্ছে মিসর
ডোনাল্ড ট্রাম্প - ছবি সংগৃহীত
এমনিতেই বিগত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের তথাকথিত শান্তি চুক্তির সময় সমঝোতার ব্যাপারে সৌদি আরব ও আমিরাতসহ উপসাগরীয় দেশসমূহকে অগ্রাধিকার দিয়ে তাদের সাথেই মূল আলোচনা করা হয়েছে। উপেক্ষিত থাকে মিসর ও জর্দানের মতো দেশ। তখন ধরে নেয়া হয়, সৌদি আরব ও ইউএই ইসরাইলের সাথে থাকলে অন্য কারো কিছু করার থাকবে না। মিসর ও জর্দান এটিকে মোটেই ভালোভাবে নেয়নি।
গোয়েন্দা পর্যায়ে ইরান ও তুরস্ক দুই দেশের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে চলে মিসর। ইসরাইল যেখানে লিবিয়ার ব্রাদারহুড ইস্যুকে কেন্দ্র করে তুরস্কের সাথে যুদ্ধ পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চেয়েছে এবং ভূমধ্যসাগর প্রশ্নে গ্রিস সাইপ্রাস বলয়ে মিসরকে আটকাতে চেয়েছিল, সেখানে মিসর ও তুরস্ক সঙ্ঘাত থেকে সরিয়ে নিজেদের মধ্যে সহযোগিতার সম্পর্ক নির্মাণের চেষ্টা করছে। এ ব্যাপারে অনানুষ্ঠানিক পর্ব পেরিয়ে তুরস্ক-মিসর আনুষ্ঠানিক আলোচনায় প্রবেশ করেছে।
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী পর্যায়ের আলোচনায় দু’দেশের দূরত্ব ও বিরোধ কাটিয়ে সহযোগিতার সম্পর্ক প্রতিষ্ঠায় বেশ অনেক দূর অগ্রসর হয়েছে তুরস্ক-ইসরাইল। ইসরাইল যেখানে মিসরের প্রয়োজনীয় নীল নদের পানি প্রত্যাহার এবং সুয়েজ খালের বিকল্প নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে সেখানে তুরস্ক ভূমধ্যসাগরের তেল গ্যাস অনুসন্ধানে সহযোগিতা দানের প্রস্তাব করেছে কায়রোকে।
মিসরের কূটনৈতিক প্রচেষ্টার ফলে গত ২১ মে হামাস ও ইসরাইলের মধ্যে যুদ্ধবিরতি চুক্তি স্বাক্ষর করা হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সমন্বিতভাবে করা এই চুক্তিতে ১১ দিনের প্রচণ্ড লড়াই শেষ হয়েছে। সঙ্ঘাত চলাকালে ফিলিস্তিনিদের শক্তিশালী রাজনৈতিক সমর্থন দিয়েছে মিসর। মিসরীয় রাষ্ট্রপতি আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি ফিলিস্তিনের ভূখণ্ডে সেনা অভিযান বন্ধ করতে এবং একটি স্বাধীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার চুক্তিতে পৌঁছানোর জন্য ইসরাইলের ওপর চাপ সৃষ্টির আহ্বান জানান। আমেরিকান প্রেসিডেন্ট বাইডেন এ সময় প্রথম মিসরীয় প্রেসিডেন্টের সাথে ফোনে কথা বলেছে।
ইসরাইলের হামলার পরে হামাস শাসিত গাজা উপত্যকা পুনর্গঠনের জন্য আল সিসি ৫০০ মিলিয়ন ডলার সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। দু’পক্ষের মধ্যে যুদ্ধবিরতি ও দীর্ঘমেয়াদি শান্তিকে সুরক্ষিত করার লক্ষ্যে মিসরীয় রাষ্ট্রপ্রধান ২০ মে গাজা ও ইসরাইলে দুটি নিরাপত্তা প্রতিনিধি প্রেরণ করেন। এ ছাড়া মিসরীয় সরকার গাজায় সহায়তার জন্য বোঝাই করা ১৩০টি ট্রাকের একটি বিশাল সহায়তা কাফেলাও পাঠিয়েছে আর চিকিৎসা পাওয়ার জন্য আহত ফিলিস্তিনিদের প্রবেশের অনুমতি দিতে গাজার রাফাহ সীমান্ত ক্রসিংটি পুনরায় চালু করেছে। এই ক্রসিংটি মিসরের সিনাই উপদ্বীপের সাথে গাজা ভূখণ্ডের সংযোগ স্থাপন করেছে।
মিসরের ওপর ইসরাইলের চাপ সৃষ্টির নানা উদ্যোগ নেয়ার পর হামাসের বিষয়ে দেশটির রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে আলোচনায় সুর পরিবর্তনের বিষয়টিও লক্ষ্য করা যায়। বেশির ভাগ সংবাদপত্রই ইসলামী দল এবং অন্যান্য সশস্ত্র দলকে প্রতিরোধ আন্দোলন এবং ইসরাইলকে দখলদার হিসেবে অভিহিত করেছে। রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে হামাসের আগের নেতিবাচক কভারেজ থেকে এটি একটি বড় অগ্রগতি ছিল। হামাসের বিরুদ্ধে, মিসরের জাতীয় নিরাপত্তাকে ক্ষতিগ্রস্ত করা এবং মুসলিম ব্রাদারহুডকে সহযোগিতা করার কথা বলে ২০১৩ সালে কায়রো হামাসকে ‘কালো তালিকা’ভুক্ত করেছিল। নতুন পরিস্থিতিতে মিসরীয় সরকার হামাসের সাথে তার মতের পার্থক্যকে এক পাশে সরিয়ে রেখেছে।
মিসরের কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনার জন্য হামাসের রাজনৈতিক প্রধান ইসমাইল হানিয়ার ২০১৩ সালে কায়রো সফরের পরে মিসর ও হামাসের সম্পর্ক উষ্ণ হতে শুরু করে। এই সফরের পরে, কায়রো আন্ত-ফিলিস্তিন দ্বন্দ্ব নিরসনের জন্য ফিলিস্তিনি দলগুলোর মধ্যে সংলাপের পৃষ্ঠপোষকতা শুরু করেছিল।
কায়রোর সাথে সম্পর্কের উন্নতির লক্ষণ হিসেবে হানিয়া ফিলিস্তিনিদের প্রতি দৃঢ় সমর্থন দেয়ায় এবং ইসরাইলি আক্রমণ রোধে মিসরীয় ভূমিকার জন্য মিসরকে ধন্যবাদ জানাতে ২১ মে কাতারের রাজধানী দোহায় একটি বড় সমাবেশ করেছেন।
ইসরাইলের সাথে যুদ্ধবিরতি শক্তিশালীকরণ এবং গাজা উপত্যকা পুনর্গঠন বিষয়ে মিসরীয় কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনার জন্য কয়েক দিনের মধ্যে হানিয়া কায়রো সফরে যাওয়ার কথা রয়েছে। হানিয়ার এই সফরের খবরটি এসেছে যখন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন গত ২৬ মে গাজা যুদ্ধবিরতি স্থায়ীকরণ এবং ছিটমহলটি পুনর্নির্মাণের বিষয়ে মিসরীয় কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনার জন্য মধ্য প্রাচ্যের সফরের অংশ হিসেবে কায়রো পৌঁছেন।
কায়রোতে অবস্থিত মার্কিন দূতাবাসে একটি অনুষ্ঠানে যোগ দেয়ার আগে ব্লিংকেন প্রেসিডেন্ট সিসির সাথে বৈঠক করেন, যেখানে তিনি বলেন যে, ওয়াশিংটন এবং কায়রো ইসরাইলি ও ফিলিস্তিনিদের নিরাপদে বাস করার জন্য একত্রে কাজ করছে। তিনি ইসরাইল ও ফিলিস্তিনিদের মধ্যে সর্বশেষ সহিংসতার মোকাবিলায় মিসরকে একটি ‘সত্যিকারের এবং কার্যকর অংশীদার’ হিসেবে বর্ণনা করেন। গত সপ্তাহে, সিসি মার্কিন রাষ্ট্রপতি বাইডেনের সাথে গাজা যুদ্ধবিরতি ঘোষণার আগে ও পরে দু’বার কথা বলেছেন।