বিজেপি হেরেছে শুভেন্দুর কারণে!
মমতা ও শুভেন্দু - ছবি : সংগৃহীত
‘ইস বার দোশো পার’, এই স্লোগানকে মূল হাতিয়ার করে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে বিজয় রথের ধ্বজা ওড়াবার স্বপ্ন দেখেছিল নরেন্দ্র মোদির দল ভারতীয় জনতা পার্টি। ভারতের প্রধানমন্ত্রী থেকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব, অন্য রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী থেকে শুরু করে অন্যান্য কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নির্বাচনী প্রচারে বাদ ছিলেন না কেউই। কিন্তু তাও কী এমন হলো, যে ৭৭ টি আসন পেয়েই থেমে গেল বিজেপি-র বিজয় রথ? ২০২১ বিধানসভা নির্বাচন শেষ হয়ে গেলেও নির্বাচনের ফল নিয়ে কাঁটাছেড়া অব্যাহত গেরুয়া শিবিরে।
এরই মধ্যে সামনে এসেছে করোনা অতিমারির মোকাবিলায় টিকা থেকে শুরু করে অক্সিজেন, ওষুধ নিয়ে কেন্দ্র রাজ্য সংঘাত। পাশাপাশি ঘূর্ণিঝড় ইয়াস নিয়ে মোদি-মমতা বৈঠক নিয়ে তরজাও চলে এসেছে সামনে। তবে সামনে যাই হোক না কেন, ভিতরে ভিতরে বিজেপির অন্দরে রাজ্যে তাদের এই হারকে যে মেনে নেয়া সম্ভব হয়নি বা দলের অন্দরে যে ভোটের ফল নিয়ে অসন্তোষ রয়েছে তা প্রকাশ্যে না বলা হলেও মেনে নিচ্ছেন অনেকেই।
ইতিমধ্যেই সামনে এসেছে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে বিজেপির ভোটের হারের তদন্তের রিপোর্টের কিছু অংশ। সূত্রের খবর, নির্বাচনের ফল বেরনোর পরই কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাকে দিয়ে এই রিপোর্ট তৈরি করানো হয়। জানা গিয়েছে, প্রায় ২৮০ পাতার এই বিস্তারিত রিপোর্ট। তবে, এই বিষয় মুখ খুলতে নারাজ বিজেপি রাজ্য নেতারা।
কী রয়েছে সেই রিপোর্টে :
সেই রিপোর্টে যে উল্লেখযোগ্য পয়েন্টগুলি উঠে এসেছে, সেগুলি হল,
মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি আক্রমণ করাটা এরাজ্যের মহিলারা ভালোভাবে মেনে নেননি।
পশ্চিমবঙ্গের জেলায় জেলায় নির্বাচনী প্রচারে অবাঙালি অর্থাৎ মূলত হিন্দিভাষী নেতৃত্বের বক্তৃতা অনেকেই বুঝতে পারেননি। বিশেষত গ্রামীণ এলাকার মহিলারা একেবারেই বুঝতে পারেননি, কী বলতে চাইছে বিজেপি।
ঘনঘন কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব নির্বাচনী প্রচারে এরাজ্যে এসেছেন। এসেছেন অন্য রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীসহ অন্যান্য মন্ত্রীও। ফলে পশ্চিমবঙ্গে পশ্চিমবঙ্গীয় বিজেপি নেতাদের গুরুত্ব কমে গিয়েছে।
তারকাদের দিয়ে প্রচার করানো হয়েছে। তারকাদের দেখতে মানুষ ভিড় জমিয়েছেন, তাই সেই প্রচারে লোক এসেছেন, কিন্তু ভোট আসেনি।
‘জয় শ্রী রাম’ ধ্বনি ভোট কেটেছে বাঙালি হিন্দুদেরও। মনে করা হয়েছে, শহুরে, মধ্যবিত্ত এমনকি গ্রাম পশ্চিমবঙ্গের হিন্দু বাঙালিরা এই স্লোগানের সঙ্গে একাত্ম হতে পারেনি। ওই রিপোর্টে কারণ হিসেবে দেখানো হয়েছে রামচন্দ্র পশ্চিমবঙ্গের কোনো উপাস্য দেবতা নন। কেবলমাত্র বজরংবলী বা হনুমান পুজোর সময় রামচন্দ্রের ছবি ব্যবহার করা হয়। তার তুলনায় বাঙালি হিন্দুদের কাছে দুর্গোৎসব ও শ্যামা পুজো অনেক বেশি জনপ্রিয়। কিন্তু প্রচারে তাতে গুরুত্ব দেয়া হয়নি।
অন্য দল থেকে অর্থাৎ মূলত তৃণমূল কংগ্রেস থেকে এসে যারা বিজেপিতে প্রার্থী হয়েছিলেন, তাদের অধিকাংশই ছিলেন দুর্নীতিগ্রস্ত ও জনপ্রিয়তাহীন। তাদের মানুষ ভোট দেননি।
বিজেপির নেতাদের কিছু ক্ষেত্রে উগ্র সাম্প্রদায়িক বক্তব্য এবং আস্ফালন দেখে সংখ্যালঘু ভোটব্যাঙ্ক শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের দিকে ঘুরে গিয়েছে।
নির্বাচনী তহবিল বাবদ প্রার্থীদের যে টাকা দেয়া হয়েছিল দলের তরফ থেকে, সেই টাকা তারা ঠিকমত খরচ করেছেন কিনা, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়েছে ওই রিপোর্টে বলে জানা গিয়েছে।
এছাড়া, জেলাস্তরের কিছু বিজেপি নেতার হঠাৎ করেই বিলাসবহুল জীবনযাত্রা নজর কেড়েছে। এর ফলে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে বিধানসভা নির্বাচনে।
একইসঙ্গে ওই রিপোর্টে শুভেন্দু অধিকারী ও মুকুল রায়সহ প্রায় ৩০ জনের বিরুদ্ধে নৈতিক জীবন যাত্রা নিয়েও বিভিন্ন অভিযোগ তোলা হয়েছে বলেও জানা গিয়েছে।
এছাড়া, রিপোর্টে আশঙ্কা করা হয়েছে, বিজেপির বর্তমানে যে কজন বিধায়ক আছেন তাদের মধ্যে অনেকেই শাসক দলের সঙ্গে চলে যেতে পারেন।
যদিও প্রথম কলকাতার তরফে এই রিপোর্টের বক্তব্য আলাদাভাবে যাচাই করা হয়নি।
কিন্তু প্রশ্ন এই রিপোর্টের ভিত্তিতে বাংলায় কী নিজেদের রণকৌশল পাল্টাবে বিজেপি ? তা তো সময়ই বলবে।
সূত্র : প্রথম কলকাতা