ইসলামের ভূমি রক্ষায় এক সুলতানের সংগ্রাম
সুলতান দ্বিতীয় আবদুল হামিদ - ছবি সংগৃহীত
এক হাতে তুর্কি পতাকা অপর হাতে ফিলিস্তিনি পতাকা হাতে এবার গাজার জনগণকে বিজয়োল্লাস করতে দেখা গেছে। এটাকে ‘কাকতালীয়’ বললে ভুল হবে। এ দৃশ্য সুগভীর তাৎপর্যবহ। ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ যোদ্ধাদের অন্তরে তুরস্কের জন্য রয়েছে অসীম ভালোবাসা। পাশাপাশি, তুরস্কের কাছে রয়েছে তাদের বিপুল প্রত্যাশাও। আরব আমিরাত, ওমান, বাহরাইন, সুদান ও মরক্কো যেখানে ফিলিস্তিনের মজলুম জনগণ থেকে মুখ ফিরিয়ে ইসরাইলের সাথে কূটনৈতিক সখ্য গড়ে তুলেছে, সেখানে তুরস্কের নেতা এরদোগানের ফিলিস্তিনের পক্ষে উচ্চকণ্ঠ গাজাবাসীর মনোবল চাঙ্গা ও সতেজ করেছে। অতীতে তুর্কি সুলতান খলিফারাও ছিলেন ফিলিস্তিনের প্রতি সহানুভূতিশীল। ইতিহাস তার প্রমাণ বহন করে।
গাজায় ইসরাইল-ফিলিস্তিন যুদ্ধ, আন্তর্জাতিক রাজনীতির টানাপড়েন ও হালচিত্র দেখে আজ বেশি করে মনে পড়ছে তুরস্কের উসমানীয় খিলাফতের ৩৪তম শাসক সুলতান দ্বিতীয় আবদুল হামিদের কথা। তিনি ছিলেন সাচ্চা ঈমানদার, দেশপ্রেমিক ও উম্মাহর দরদি। তার দৃঢ় মনোবল, মুসলিম ভ্রাতৃত্ববোধের জাগ্রত চেতনা, প্যান ইসলামিজমের ডাক দুনিয়ার মুসলমানদের এখনো আলোড়িত ও আন্দোলিত করে। দ্বিতীয় খলিফা ওমর রা:, উমাইয়া খলিফা আল ওয়ালিদ, আব্বাসীয় খলিফা হারুনুর রশীদ, কুতায়বা বিন মুসলিম, মুহাম্মদ বিন কাসিম আস সাকাফি, মুসা বিন নুসায়ের, তারিক বিন জিয়াদ, সুলতান দ্বিতীয় আবদুল হামিদ, সালাহউদ্দিন আইয়ুবি, বাদশাহ ফয়সাল, চেচনিয়ার জাওহার দুদায়েভের প্রয়োজন এখনো দুনিয়ার শান্তিকামী জনগণ অনুভব করে। দিন যত গড়াচ্ছে ঈমানি চেতনায় উজ্জীবিত মানুষের সংখ্যা ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে। দালাল, চাটুকার, বরকন্দাজ ও মুসাহিবদের আখড়ায় সুযোগসন্ধানীদের আনাগোনা বৃদ্ধি পেতে চলেছে। মুসলমানদের ‘ভরসা’ নাকি রাজতন্ত্রে, স্বৈরতন্ত্রে, সামরিকতন্ত্রে। জনগণের আস্থা, সমর্থন ও ম্যান্ডেটের প্রয়োজন পড়ে না। স্বীকৃত দুশমন ও চিরশত্রুর সাথে আঁতাত করে যেনতেন প্রকারে ক্ষমতার মসনদে আসীন থাকার নির্লজ্জ প্রতিযোগিতা অবাক করার মতো। ব্যক্তিস্বার্থের কাছে ইসলাম ও মুসলমানের স্বার্থ পরাভূত। শত্রুপক্ষও নিজেদের ভূ-রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্বার্থে শিখণ্ডীদের রাজক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে চায়।
আজ ২০০ কোটি মুসলমান অসহায় ও অভিভাবকহীন। আন্তর্জাতিক রাজনীতির দাবার ঘুঁটি হিসেবে মুসলিম শাসকরা ব্যবহৃত হয়ে আসছেন। এক মুসলিম দেশের সাথে আর এক মুসলিম দেশ যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার ফলে সামাজিক স্থিতিশীলতা ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির শিরদাঁড়া ভেঙে পড়ার উপক্রম। লাভ বৈশ্বিক মোড়লদের। অস্ত্রব্যবসার বাজার আবার সরগরম। যুদ্ধ বাঁধিয়ে দিতে পারলে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র বিক্রির অর্ডার পাওয়া যায়।
উদাহরণ স্বরূপ, সম্প্রতি সৌদি আরব এবং মিসরে ৪৫০ মিলিয়ন ইউরো, অর্থাৎ ৫২৬ মিলিয়ন ডলারের অস্ত্র রফতানির সিদ্ধান্ত অনুমোদন করেছে জার্মান সরকার। এর মধ্যে মিসরে যাবে প্রায় ৩০০ মিলিয়ন ইউরো মূল্যের অস্ত্র। সৌদি আরবের কাছে এই দফায় জার্মানি বিক্রি করবে ১৫০ মিলিয়ন ডলারের অস্ত্র। সৌদি আরব হচ্ছে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম সামরিক ব্যয়ের দেশ। মধ্যপ্রাচ্যে অস্ত্র কিনতে সবচেয়ে বেশি ব্যয় করে দেশটি। ২০১৬ সালের প্রথম দিকে স্টকহোমভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট জানায়, ২০১৫ সালে সৌদি আরব আট হাজার ৭২০ কোটি ডলারের অস্ত্র কিনেছে। ‘ভিশন ২০৩০’-এর আওতায় চলছে সৌদি আরবে অস্ত্র উৎপাদন বাড়ানোর এমন সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের তোড়জোড়। বিগত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প স্বাক্ষরিত চুক্তি অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে ১৫০টি অত্যাধুনিক ব্ল্যাকহক হেলিকপ্টার কিনবে সৌদি আরব। এসব হেলিকপ্টার কিনতে তাদের ব্যয় হবে ছয় বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ‘দ্য গার্ডিয়ান’ জানায়, সৌদি আরবের কাছে ১০০ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র বিক্রির বিভিন্ন চুক্তি হতে যাচ্ছে। হোয়াইট হাউজের এক কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানান, এই অস্ত্র চুক্তির মূল্য এক দশকে ৩০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে। ২০১২ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত বিশ্বের অস্ত্র আমদানি করা দেশগুলোর মধ্যে সৌদির অবস্থান দ্বিতীয়। ২০১৯ সালের এপ্রিলে সৌদি যুবরাজ মুহাম্মদ বিন সালমান ফ্রান্সের সাথে প্রায় ১.৪ বিলিয়ন ডলারের চুক্তি সই করেছেন।
আরব বিশ্বের দরিদ্র দেশ ইয়েমেনে সৌদি আরবের নেতৃত্বাধীন জোট বাহিনীর সামরিক হস্তক্ষেপের কারণে এ পর্যন্ত প্রায় এক লাখ ৩০ হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। চলমান যুদ্ধের কারণে ভয়াবহ অর্থনৈতিক ও মানবিক সঙ্কটে পড়েছে ইয়েমেন। ২০১৭ সালে রাশিয়ার কাছ থেকে এস-৩০০ সিস্টেম ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কিনেছে ইরান যার মাধ্যমে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র, ক্রুইজ ক্ষেপণাস্ত্রসহ আধুনিক যেকোনো বিমান ধ্বংস করা যায়। এসব অস্ত্র ব্যবহৃত হতে পারে প্রতিবেশী মুসলিম রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে। এ আশঙ্কা উড়িয়ে দেয়া যায় না। সাম্র্রাজ্যবাদীদের জন্য যুদ্ধ একটি ‘লাভজনক ব্যবসা’। যুদ্ধ শেষ হলেও লাভ। দেশ পুনর্গঠন ও অবকাঠামো পুননির্মাণের নামে আবার তারা এগিয়ে আসে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নিয়ে। সাহায্যের নামে অর্থ দিয়ে সুদ আদায় করে। মা হারা, বাবা হারা, স্বামী হারা ও সন্তান হারাদের মাঝে এনজিওরা সাহায্য ও অনুদানের প্রলোভনে খ্রিষ্টধর্মের প্রচারণা চালায়। যুদ্ধ তাদের জন্য ‘আশীর্বাদ’ নিয়ে আসে। এ খেলা বুঝার মানুষ কমে যাচ্ছে। আগের কথায় ফিরে আসি। তুরস্কের সুলতান দ্বিতীয় আবদুল হামিদ (১৮৪২-১৯১৮) রাজত্ব করে ছিলেন ৩৩ বছর। ১৮৭৬ সালের ২৩ ডিসেম্বর তিনি তুর্কিদের জন্য প্রথম সংবিধান প্রণয়ন ও কার্যকর করেছিলেন। তার শাসনামলে তুরস্ক আধুনিক যুগে প্রবেশ করে। টেলিগ্রাম ও রেলপথের ব্যাপক উন্নয়ন ঘটে তখন। ইসলামী শিক্ষার পাশাপাশি আইন, প্রকৌশল, ব্যবসায়, মানবিক বিদ্যা, কৃষি শিক্ষারও প্রসার ঘটে। দেশের সর্বত্র প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও সামরিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়। দারুল ফুনুন নামে তিনি একটি উচ্চতর শিক্ষা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেন যা পরবর্তীকালে ইস্তাম্বুল বিশ্ববিদ্যালয় নামে খ্যাতি অর্জন করেছে।
আবদুল হামিদ এমন সময় ক্ষমতায় আরোহণ করেন যখন অর্থনৈতিক সঙ্কট, রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং বিশেষভাবে বলকান অঞ্চলে যুদ্ধের কারণে তুরস্কের অবস্থা ছিল শোচনীয়। ব্যক্তি জীবনে তিনি ছিলেন ধর্মপরায়ণ। শায়খ সুফি মুহাম্মদ জাফর আল মাদানী নামের লিবিয়ার এক দরবেশকে তিনি ইস্তাম্বুলে নিয়ে আসেন। প্রায় সময় জিকির মাহফিলে শরিক হতেন। ৩০ বছর ওই দরবেশের সাথে সম্পর্ক রেখে চলেন।
মুসলিম জাহানের সুখ-দুঃখের ভাগী ছিলেন সুলতান। ইউরোপীয় ঔপনিবেশিকতার বিরুদ্ধে বিশ্বের মুসলমানদের একতাবদ্ধ করার প্রয়াস চালিয়েছেন। তুরস্কসহ মুসলিম বিশ্বে ইউরোপীয়ানদের হস্তক্ষেপ তিনি পছন্দ করতেন না। তার ঘোষিত প্যান ইসলামিজমের ডাকে ইউরোপীয় দেশগুলো বিশেষভাবে আলবেনিয়ার মুসলমানদের মাধ্যমে অস্ট্রিয়া, তাতার ও কুর্দিদের মাধ্যমে রাশিয়া, মরক্কোর মুসলমানদের মাধ্যমে ফ্রান্স এবং ভারতীয় মুসলমানদের মাধ্যমে ব্রিটেন সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে। আবদুল হামিদের জীবনের একটি ঘটনা কেবল অসাধারণ নয় রীতিমতো চোখ খুলে দেয়ার মতো বিস্ময়কর। ১৯০১ সালের কথা। গরুৎধৎু ছৎধংড়ি নামক এক ইহুদি ব্যাংকার তার দু’জন সহযোগীসহ ইস্তাম্বুলে সুলতান দ্বিতীয় আবদুল হামিদের রাজপ্রাসাদে আসেন এবং প্রতিনিধির মাধ্যমে সুলতানের কাছে নিম্নোক্ত প্রস্তাব পেশ করেন-
১. Allowing Jews to visit Palestine anytime they please, and to stay as long as they want “to visit the holy sites. 2. Allowing the Jews to build settlements where they live, and they wanted them to be located near Jerusalem. Sultan Abdul Hamid II refused to even meet them, he sent his answer to them through Tahsin Pasha, and the answer was, “Tell those impolite Jews that the debts of the Uthmani state are not a shame. France has debts and that doesn’t effect it.Jerusalem became a part of the Islamic land when Khalifah Omar Bin Al khattab took the city and I am not going to carry the historical shame of selling the holy lands to the Jews and betraying the responsibility and trust of my people. May the Jews keep their money, the Uthamani’s will not hide in castles built with the money of the enemies of Islam.”
He also told them to leave and never come back to meet him again.
The Jews did not give up on Abdul Hameed. Later in the same year, 1901, the founder of the Zionist movement, Theodor Herzl, visited Istanbul and tried to meet the Sultan. Sultan Abdul Hamid II refused to meet him and he told his Head of The Ministers Council “Advise Dr. Herzl not to take any further steps in his project. I can not give away a handful of the soil of this land for it is not my own, it is for all the Islamic ummah. The Islamic ummah fought Jihad for the sake of this land and they have watered it with their blood. The Jews may keep their money and millions. If the Islamic Khilafah State is one day destroyed then they will be able to take Palestine without a price! But while I am alive, I would rather push a sword into my body than see the land of Palestine cut and given away from the Islamic State. This is something that will not be, I will not start cutting our bodies while we are alive.” (The London Post, 6 September, 2014).
উসমানীয় খিলাফতের সব ঋণ শোধ করে দেয়া হবে
উসমানীয় খিলাফতের জন্য শক্তিশালী নৌঘাঁটি তৈরি করে দেয়া হবে
তুরস্কের উন্নয়নের জন্য তিন কোটি ৫০ লাখ স্বর্ণমুদ্রা বিনাসুদে দিতে হবে।
ইহুদিরা জানায়, বিনিময়ে আমরা দুটি জিনিস চাই- ইহুদিদের যেকোনো সময় ফিলিস্তিন সফরের অনুমতি দিতে হবে। পবিত্র স্থান পরিদর্শনের উদ্দেশে আমাদেরকে সেখানে অনির্ধারিত সময়ের জন্য অবস্থানের সুযোগ দিতে হবে। জেরুসালেমের কাছে ইহুদিদের বসতি স্থাপনের জন্য কিছু জমি বরাদ্দ দিতে হবে। স্মর্তব্য, আগে থেকে পবিত্র স্থান পরিদর্শনের উদ্দেশে ইহুদিরা জেরুসালেম এলে ৩০ দিন থাকার অনুমতি ছিল। এরপর তাদের ফিরে যেতে হতো। সুলতান দ্বিতীয় আবদুল হামিদ প্রতিনিধির মাধ্যমে ইহুদিদের প্রস্তাব সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেন এবং তাদের সাক্ষাৎ দিতে অস্বীকৃতি জানান। এমন প্রস্তাব নিয়ে আর না আসারও হুকুম দেন। তিনি যে জবাব দেন, তা সোনার অক্ষরে লিখে রাখার মতো মূল্যবান- ‘অভদ্র ইহুদিদের জানিয়ে দাও, ঋণ উসমানীয় খিলাফতের জন্য লজ্জার কোনো ব্যাপার নয়। ফ্রান্সের মতো দেশেরও ঋণ আছে, এতে তারা ক্ষতিগ্রস্ত নয়। হজরত উমর ইবনে খাত্তাব রা: যে ভূমি জয় করেন তা গোটা মুসলিম বিশ্বের সম্পদ। ইহুদিদের কাছে ফিলিস্তিনের ভূমি বিক্রি করে ইতিহাসে ঘৃণিত এবং জনগণ কর্তৃক প্রদত্ত দায়িত্বের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করতে পারি না। ইহুদিদের বিপুল অর্থ থাকতে পারে, কিন্তু শত্রুর অর্থ দিয়ে তৈরি করা প্রমোদ প্রাসাদে উসমানীয়রা লুকাতে পারে না।’
একই বছর জায়নবাদের নেতা Theodor Herzl পুনরায় জেরুসালেম এসে সুলতানের সাক্ষাৎ কামনা করেন কিন্তু সুলতান সাক্ষাৎ দিতে রাজি হননি। সুলতান তার প্রধান উজিরের মাধ্যমে তাদের কাছে নিম্নোক্ত বার্তা পাঠান- Theodor Herzlকে পরামর্শ দিন এ পরিকল্পনা নিয়ে যেন আর অগ্রসর না হয়। এক মুষ্টি মাটিও তাদের দেবো না, যেহেতু আমি এর মালিক নই। এটা বিশ্ব মুসলিমের সম্পদ। মুসলমানরা ফিলিস্তিনের জন্য যুদ্ধ এবং বুকের তাজা রক্ত দিয়ে এ পবিত্র ভূমিকে রঞ্জিত করেন। ইহুদিদের কোটি কোটি টাকা থাকতে পারে। কোনোদিন যদি ইসলামী খিলাফত ধ্বংস হয়ে যায় সেদিন তারা বিনা পয়সায় ফিলিস্তিন দখল করতে পারবে। কিন্তু আমি যতদিন বেঁচে থাকব, আমার বুক তলোয়ারে বিদ্ধ হওয়া পছন্দ করব; তবুও ফিলিস্তিনের ভূমি ইহুদিদের হাতে থাকা মানব না। আমি জীবিত থাকতে আমার দেহের অঙ্গকে বিচ্ছিন্ন হতে দেবো না।’ (লন্ডন পোস্ট, ৬ সেপ্টেম্বর’১৪)
ইতিহাস কত নির্মম! মাত্র আট বছরের ব্যবধানে ১৯০৯ সালে ইহুদি চক্রান্তের ফলে আবদুল হামিদ ক্ষমতাচ্যুত হন। উসমানীয় সামরিক বাহিনীর পাশ্চাত্যপন্থী অফিসাররা তাঁর শাসনের বিরোধী ছিলেন। ‘নব্যতুর্কি’ নামে পরিচিত সেনা কর্মকর্তারা সাম্র্রাজ্যের ভেতরে ও বাইরে বিভিন্ন গুপ্ত সমিতি গঠন করেন। তারা সুলতানকে Allatini নামক এক ইহুদি ধনকুবেরের গৃহে বন্দী করে রাখেন এবং ইহুদিদের ফিলিস্তিন ভূমিতে বসতি স্থাপনের সুযোগ দেন। এভাবে হারিয়ে গেলেন এক দরদি শাসক। ১৯১৮ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি এ সুলতান মারা যান। তার মৃত্যুর মধ্য দিয়ে ৬০০ বছরের উসমানীয় খিলাফতের পরিসমাপ্তি ঘটে। পরের ইতিহাস বড্ড বেদনার। মুসলিম নামধারী মুস্তফা কামাল পাশা নামক ইঙ্গ-ইহুদি অক্ষশক্তির এক শিখন্ডি তুরস্কের বুক থেকে ইসলাম ও মুসলিম ঐতিহ্যের দীপশিখা নিভিয়ে দেয়ার ব্যর্থপ্রয়াস চালান।
একশ’ বছর পর তুর্কি জাতি আবার এরদোগানের নেতৃত্বে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে শিখেছে। এখন তুরস্ক ঊনবিংশ শতকের মতো আর রুগ্ন নয়। তুরস্ক এখন ইউরোপের ‘উদীয়মান ব্যাঘ্র’। বশ্যতামূলক লুজান চুক্তির মেয়াদও শেষ হতে চলেছে ২০২৩ সালে। গ্লোবাল ফায়ারপাওয়ার-এর বিশ্লেষণ মতে, ২০২১ সালে মধ্যপ্রাচ্যে সামরিক শক্তির দিক দিয়ে তুরস্কের অবস্থান এক নম্বরে এবং ইরান তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে। পঞ্চম স্থানে রয়েছে ইসরাইল। পরিস্থিতির প্রয়োজন ও সময়ের চাহিদায় নতুন দ্বিতীয় আবদুল হামিদ ও নতুন সালাহউদ্দিন আইয়ুবির জন্ম হবে। রাজনীতির নতুন সমীকরণ তৈরি হতে চলেছে। প্রযুক্তিনির্ভর অত্যাধুনিক অস্ত্রের ভারসাম্য আসবে। ইসরাইলের সাথে চূড়ান্ত বোঝাপড়া হয়ে যাবে। মহানবী হজরত মুহাম্মদ সা:-এর বাণী ও ইতিহাসের ঘটনা পরম্পরা অন্তত তাই বলে।
লেখক : অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ও গবেষক
drkhalid09@gmail.com