স্রেফ ঘুমালেই বাড়বে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা

অন্য এক দিগন্ত ডেস্ক | May 29, 2021 01:35 pm
ঘুম

ঘুম - ছবি সংগৃহীত

 

কেবল বাংলাদেশ নয়, বিশ্বজুড়েই এখন অতিমারী পরিস্থিতি। প্রায় প্রতিদিনই চেনা পরিচিত কারো না কারো করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে। অনেক বিখ্যাত লোক মারাও গেছেন। প্রায়ই চারদিকে বেড, অক্সিজেনের হাহাকারের কথা শোনা যায়। ভারতে তো আরো ভয়াবহ অবস্থা। গঙ্গার পানিতে লাশ ভাসার মতো শিউরে দেয়া খবর আসছে প্রতিবেশী দেশ থেকে। এমন পরিস্থিতিতে প্রায় ঘরবন্দি জীবন। অশান্ত মনে ঘুম জানালা দিয়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য। কিন্তু, কষ্ট করে হলেও নির্দিষ্ট সময় ঘুমাতে আপনাকে হবেই! এমনটাই বলছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে ঘুমের মধ্যেই লুকিয়ে আছে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর শক্তি।

এমনিতেই পর্যাপ্ত ঘুমের কথা বলে থাকেন চিকিৎসকরা। কারণ এই সময় মানুষের শরীর সম্পূর্ণ বিশ্রাম পায়। আর এই সময়ই শরীরের কোষ আর স্নায়ুগুলো সক্রিয় হয়ে ওঠে এবং ক্ষতিকারক জীবাণু ও সংক্রমণের সঙ্গে লড়াই করে। মনের মধ্যে যতই দুশ্চিন্তা থাক, দেখবেন সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠলে তার প্রভাব অনেকটাই কমে গিয়েছে। তেমনই স্নায়ুর উপর চাপ পড়লে মস্তিষ্ক এবং শরীরে ক্লান্তি আসে। ঘুমের মাধ্যমেই তা কাটানো সম্ভব।

এবার আসা যাক টি-সেলের (T cell) কথায়। এটি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার অন্যতম প্রধান হাতিয়ার বলে দাবি গবেষকদের একাংশের। তাদের যুক্তি, শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে কয়েক গুন বাড়িয়ে দিতে পারে এই কোষ। কোনো বেগতিক দেখলেই নাকি কোষে কোষে বিপদ সংকেত পাঠিয়ে দেয় টি-সেল। যাতে কোষগুলো রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার জন্য তৈরি থাকে। ঘুমের সময়ই এই কোষের আধিক্য দেখা যায়।

কতক্ষণ একজন মানুষের ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত? ব্যক্তি বিশেষে সময়ের পার্থক্য থাকতে পারে। তবে, প্রাপ্তবয়স্ক একজন মানুষের ৮ ঘণ্টা ঘুমকে পর্যাপ্ত মনে করা হয়। গবেষকরা বলছেন, এর কম ঘুম হলে শরীরের ক্ষতি হতে পারে। আর যারা ৬ ঘণ্টার কম ঘুমোন তাদের শরীর সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও সবচেয়ে কম থাকে।
হ্যাঁ, এই অশান্ত সময়ে অনেকেরই রাতে ঘুম হচ্ছে না। একটু চেষ্টা করতেই হবে। কিছু নিয়ম মানতে পারেন। রাতে শোয়ার আগে ভালো কিছু দেখুন বা শুনুন। সুগন্ধী তেল ব্যবহার করলেও মন শান্ত হয়। আর মোবাইল বা ল্যাপটপের সময় শোয়ার সময় অবশ্যই দূরত্ব বজায় রাখবেন। লড়াই করার শক্তি পেতে গেলে একটু বিশ্রাম তো নিতেই হবে।

ঘুম না হলে যা হতে পারে
ঘুম কম হবার কারণে শারীরিকভাবে নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে। পৃথিবীজুড়ে ১৫৩টি গবেষণা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, কম ঘুমের কারণে ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ এবং মোটা হয়ে যাবার সম্পর্ক আছে। প্রায় ৫০লাখ মানুষের উপর এসব গবেষণা চালানো হয়েছে।

গবেষণায় দেখা গেছে, একটানা কয়েক রাত যদি ঘুম কম হয় তাহলে সেটি ডায়াবেটিসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যেতে পারে। এ ধরনের নিদ্রাহীনতা রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে শরীরের কার্যকারিতা কমিয়ে দেয়।

ডা. মনিলাল আইচ লিটু বলছেন তিন মাস কারও নিয়মিত সঠিক মাত্রায় ঘুম না হলে অকাল মৃত্যু, হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের আশংকা দশ গুণ বেড়ে যায়।

'দেরিতে ঘুমানো বা কম ঘুমানোর কারণে প্যানিক (আতঙ্কিত হওয়া), ফোবিয়া (ভীতি) ও ফ্যানটম পেইন (অকারণ অস্বস্তি)তৈরি হয় যার ফলে বিষণ্ণতা এবং উদ্বিগ্নতা বেড়ে যায়। আর বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে ঘুমের সংস্কৃতি না থাকায় ঘুম জনিত সমস্যার প্রকোপও বাড়ছে,' বলছেন তিনি।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডাঃ মুশতাক হোসেন বলছেন, "সঠিক মাত্রায় নিয়মিত ঘুম হলে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সর্বোচ্চ মাত্রায় পৌঁছায়। আবার নিয়মিত ঘুমের ব্যাঘাত বা অনিদ্রা হলে তা একজন মানুষকে গুরুতর শারীরিক ও মানসিক সমস্যায় ফেলে দিতে পারে," বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন তিনি।

আরেকজন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. শারমীন ইয়াসমিন বলছেন ঘুম ঠিক মতো না হলে শারীরিক সমস্যা যেমন হতে পারে তেমনি এটি একজন ব্যক্তির পেশাগত জীবনকে হুমকির মুখে ফেলে দিতে পারে।

'ঘুম না হলে তা কাজের ক্ষেত্রে মারাত্মক প্রভাব ফেলে। কারণ ঘুমের অভাবে মনোযোগ দেয়ার ক্ষমতা কমে যায়। স্বাভাবিক যেসব কাজ তা ঠিক মতো করাটা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়,' বলছিলেন তিনি।

তিনি বলেন, 'কাজের ক্ষেত্রে প্রভাব পড়বে। মনোযোগ নষ্ট হবে। স্নায়ুজনিত সমস্যা তৈরি হবে। মানসিক অস্থিরতা দেখা দেবে। তাই দিনে অন্তত ৪/৫ ঘণ্টা হলেও সাউন্ড স্লিপ জরুরি।'

তিনি বলেন, এ ঘুমের সমস্যা থেকে উদ্ভব হওয়া মানসিক সমস্যার কারণে পারিবারিক সুখ শান্তিও নষ্ট হতে পারে।

আর এসব সমস্যা থেকে মুক্ত থাকতে নিয়মিত মাত্রায় সঠিক ভাবে ঘুমানোর অভ্যাসের ওপর জোর দিয়েছেন ডা. মনিলাল আইচ লিটু।

সূত্র : সংবাদ প্রতিদিন ও বিবিসি


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us