করোনার কারণে ত্বকের পচন?
করোনার কারণে ত্বকের পচন? - ছবি সংগৃহীত
করোনাভাইরাস সংক্রমণের ফলে গ্যাংরিন বা ত্বক ও অঙ্গের পচনের সমস্যাও দেখা দিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে ভারতের রাজধানী দিল্লির বেশ কয়েকজন চিকিৎসক এমনই দাবি করেছেন সংবাদমাধ্যমের কাছে।
দিল্লির রাম মনোহর লোহিয়া হাসপাতালে হালে এক রোগীর দেহে গ্যাংরিন লক্ষ্য করেন চিকিৎসকেরা। এই সরকারি হাসপাতালে ভর্তি ৬৫ বছরের ওই ব্যক্তির কোভিড সংক্রমণ ছাড়া আর কোনও শারীরিক সমস্যা ছিল না। তবে ঘটনাটি ওই এক রোগীর মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকেনি। পরে সরকারি এবং বেসরকারি হাসপাতাল মিলিয়ে আরও বেশ কয়েকজন কোভিড আক্রান্তের গ্যাংরিনের সমস্যা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা। সেখান থেকেই তাঁরা মনে করছেন, কোভিডের ফলে অঙ্গের পচনের মতো সমস্যাও দেখা দিতে পারে কারও কারও ক্ষেত্রে।
কী এই গ্যাংরিন? মূলত রক্ত সঞ্চালনের অভাবে ত্বকের কোষ মরতে শুরু করে এই অসুখে। ক্রমে তা ছড়িয়ে পরে ভিতরের অঙ্গেও। হাতের আঙুল, পায়ের পাতা তো বটেই চিকিৎসায় দেরি হলে ক্রমশ গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলোও আক্রান্ত হতে পারে গ্যাংগ্রিনে। অতি দ্রুত চিকিৎসা দরকার এই অসুখের ক্ষেত্রে।
কেন কোভিড আক্রান্তদের ক্ষেত্রে এই সমস্যা হচ্ছে? চিকিৎসকেরা বলছেন, রক্ত জমাট বেঁধে এই সমস্যা হতে পারে। এসএসকেএম হাসপাতালের চিকিৎসক হৃদরোগবিদ সরোজ মণ্ডলের মতে, ‘‘কোভিড আক্রান্তদের অনেকেই রক্ত জমাট বাঁধার সমস্যায় ভুগছেন। রক্ত জমাট বাঁধা থেকে হৃদরোগ তো বটেই অন্যান্য সমস্যাও হতে পারে।’’ তবে কোভিডের ফলে গ্যাংরিনের মতো সমস্যা হলেও তার পিছনে প্রকৃত কারণ কী, তা নিয়ে এখনো সন্দেহ রয়েছে চিকিৎসকদের মধ্যে।
যাদের রক্তে শর্করার মাত্রা বেশি, অন্য জটিল অসুখ আছে, তাদের বেশি মাত্রায় সতর্ক থাকতে পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকেরা। ত্বকের কোথাও দুর্গন্ধ যুক্ত প্রদাহ হলে তখনই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে বলছেন তারা।
কোভিড আর্ম কী? কী করে রেহাই পাবেন এই সমস্যা থেকে
কোভিড-টিকা নেয়ার পর হাতে প্রচণ্ড ব্যথার অভিযোগ করছেন অনেকেই। খুবই হাতোগোনা কিছু ক্ষেত্রে টিকা নেয়ার কয়েক দিন পর হাতে ব্যথার জায়গায় একটু লালচে হয়ে ফুলে যেতে পারে। সামান্য র্যাশও বেরতে পারে। তেমন হলে, ভয়ের কোনো কারণ নেই। প্রতিষেধক নেয়ার এই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার নাম ‘কোভিড আর্ম’।
সেন্টার ফর ডিজিস কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন বা সিডিসি’র অনুযায়ী টিকার প্রথম ডোজ নেয়ার কয়েক দিন পর হাতে এই ধরনের র্যাশ বেরতে পারে। যার নাম ‘কোভিড আর্ম’। ডাক্তারি ভাষায় এটাকে ‘ডিলেয়ড কিউটেনাস হাইপারসেনসিটিভিটি’ও বলা হয়। মানে প্রতিষেধকের জন্য ত্বকের মধ্যে এক ধরনের প্রতিক্রিয়া হয়, কিন্তু একটু দেরিতে। র্যাশ বা লালচে হয়ে ফুলে যাওয়া, বা টিকা নেয়ার জায়গাটা খুব বেশি সেনসিটিভ হয়ে যাওয়া— এই লক্ষণগুলো সবচেয়ে বেশি দেখা যায় এ ক্ষেত্রে। টিকা নেয়ার ৮ দিন পরও হতে পারে এই র্যাশ।
‘নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অফ মেডিসিন’এ প্রকাশিত একটি রিপোর্ট অনুযায়ী মডার্নার টিকা নেয়ার পর ১২ জনের ‘কোভিড আর্ম’ ধরা পড়েছিল। তবে এগুলো প্রথমে অস্বস্তিকর হলেও কিছু দিনের মধ্যে মিলিয়েও গিয়েছিল। এই ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ফাইজার টিকার ক্ষেত্রে তুলনামূলকভাবে কম চোখে পড়েছে। তবে মাথায় রাখবেন, যে কোনও কোভিড প্রতিষেধকের ক্ষেত্রেই এই র্যাশ হতে পারে। কিন্তু এতে দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই। প্রত্যেকটা ক্ষেত্রে, নিজে থেকেই র্যাশ মিলিয়ে যায়।
কোভিশিল্ড বা কোভ্যাক্সিন নেয়ার পর হাতে ব্যথা অনেকেরই হয়ে থাকে। সেটা সারাতে কোনো ব্যথা কমানোর ওষুধ প্রথমেই না খাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকেরা। তার বদলে বরফ লাগাতে পারেন। কোনো রকম র্যাশ বেরলে প্রথমেই ঘাবড়ে না গিয়ে একবার আপনার চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে নিন। এবং কোনোভাবেই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ভয়ে প্রতিষেধক নিতে দ্বিধা করবেন না।
সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা