আমপানের মতো ভয়াবহভাবে আঘাত কেন হানেনি ইয়াস?
আমপানের মতো ভয়াবহভাবে আঘাত কেন হানেনি ইয়াস? - ছবি : সংগৃহীত
ঘূর্ণিঝড় ইয়াস-পর্বের অবসান হয়েছে। বাংলাদেশ, পশ্চিমবঙ্গ ও বিহারের কিছু কিছু এলাকায় তুলনামূলক অল্প ক্ষতি করে মিলিয়ে গেছে ঝড়টি। যেমনটি শুরুতে আশঙ্কা করা হয়েছিল, তেমন বিপর্যয় সৃষ্টি করেনি ইয়াস। এর কারণ এখন বিশ্লেষণ করছেন বিশেষজ্ঞরা।
অতি শক্তিশালী ঘূ্র্ণিঝড় হলেও ‘ইয়াস’-এর চোখই তৈরি হয়নি। আমপানের তুলনায় সেই কারণেই এই ঝড়ের চরিত্র অনেকটাই আলাদা, আর এটিই ‘ইয়াস’-এর স্বকীয়তা, জানালেনও আবহওয়াবিদেরা।
বুধবার ওড়িশায় আছড়ে পড়েছে ইয়াস। ওড়িশা থেকে ঝাড়খণ্ডে যাওয়ার রাস্তায় ঝড়বৃষ্টির তাণ্ডব চলেছে। তবে শক্তির নিরিখে অতি শক্তিশালী হলেও ইয়াস চোখ বা ‘আই’হীন একটি ঘূর্ণিঝড় বলে জানিয়েছেন ভুবনেশ্বর আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা হাবিবুর রহমান বিশ্বাস। শুধু তাই নয়, দক্ষিণ-পশ্চিম দিক করে ইয়াস অল্প হেলে ছিল বলে জানিয়েছেন আলিপুর আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা গণেশকুমার দাসও। দুই বৈশিষ্ট্য মিলিয়ে আমপানের থেকে এর চারিত্রিক স্বতন্ত্র ধরা পড়েছে বিজ্ঞানীদের চোখে।
সাইক্লোন বা ঘূর্ণিঝড়ের জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত কয়েক দিনের মধ্যে একাধিক পর্যায়ে চলে ভাঙাগড়ার কাজ । এর মধ্যেই গড়ে ওঠে তার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যও। একটি ঘূর্ণিঝড়ের চোখ হওয়ার জন্য দরকার পর্যাপ্ত শক্তি। ঘূর্ণিঝড়ের শক্তি কতটা, সেই ভিত্তিতে আবহওয়া দফতর নম্বর বিভাজন করে ঘূর্ণিঝড়গুলো। হাওয়া অফিসের শক্তি পরীক্ষায় ৪.৫-এর উপর নম্বর না পাওয়ার অর্থ ওই ঝড়ের চোখ তৈরি হয়নি। সে দিক থেকে ইয়াসের প্রাপ্ত নম্বর ৩.০। সুপার সাইক্লোন আমপানের প্রাপ্ত নম্বর ছিল ৬.০। ধারে ভারে সেই ঝড় ছিল অনেক বেশি শক্তিশালী।
আমপানের মতো সুপার সাইক্লোনের মধ্যে কয়েক কিলোমিটার জায়গা জুড়ে থাকে চোখ। তবে, ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের চোখই তৈরি হয়নি। এখানেই সে আলাদা। কিন্তু সেই স্বাতন্ত্র্য আপাতভাবে ধরা পড়ে না, তাই সব ঘূর্ণিঝড়কে একই মনে হয়। বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে শক্তি ও বৈশিষ্ট্যের নিরিখে একাধিক প্রকারের ঘূর্ণিঝড় রয়েছে। ইয়াস সেই তালিকায় ‘সিয়ার প্যাটার্নের’ ঘূর্ণিঝড় বলে জানিয়েছেন গণেশকুমার দাস।
কেমন সেই ধরণ? ইয়াসের ক্ষেত্রে মেঘের অবস্থান থেকে অল্প দূরে ছিল ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্রবিন্দু। অর্থাৎ ইয়াসের সঙ্গে থাকা মেঘের অবস্থান ছিল ঘূর্ণিঝড়ের সামনের দিকে। ইয়াস হেলে থাকার কারণেই ওড়িশায় বৃষ্টির পরিমাণ বেশি হয়েছে। আবার একই কারণে দিঘা-সহ পূর্ব মেদিনীপুরে ঝড়ের দাপট ছিল বেশি।
জন্ম বঙ্গোপসাগরে, ‘ভূমিষ্ঠ’ ওড়িশায়, বুধবার রাতে ওড়িশাতেই ইয়াস-এর মৃত্যু
সোমবার (২৪ মে) সকাল সাড়ে ৮টায় শুরু হয়েছিল যে ঘূর্ণিঝড় ইয়াস, ৬৩ ঘণ্টার জীবনচক্র পেরিয়ে বুধবার (২৬ মে) রাত সাড়ে ১১টায় তা শেষ হয়ে যায়। বুধবার সকালে স্থলভাগে আছড়ে পড়ার পর থেকে ক্রমশ শক্তি হারাতে থাকে ইয়াস। মৌসম ভবন জানিয়েছে, শক্তি ক্ষয় করতে করতে বুধবার রাতেই ঘূর্ণিঝড় ইয়াস ফের অতি গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়। অর্থাৎ মৃত্যু হয়ে যায় ইয়াস-এর।
বঙ্গোপসাগরে আন্দামান-নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের কাছে শুরু হওয়া নিম্নচাপ ধীরে ধীরে শক্তি বাড়িয়ে সোমবার সকালে পরিণত হয়েছিল ঘূর্ণিঝড় ইয়াস-এ। তার পর থেকে ক্রমশ শক্তি বাড়িয়ে প্রথমে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় ও তার পর অতি শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয় ইয়াস। বুধবার সকাল ৯টা ১৫ নাগাদ ওড়িশার বালেশ্বরের দক্ষিণে স্থলভাগে আছড়ে পড়ে এই ঘূর্ণিঝড়।
স্থলভাগে আছড়ে পড়ার প্রক্রিয়া শেষ হয়ে গিয়েছে অতি শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় ইয়াস-এর। ধীরে ধীরে শক্তি হারায় ইয়াস। বুধবার রাতের মধ্যে শক্তি হারিয়ে ইয়াস ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয় বলেই জানিয়েছে মৌসম ভবন।
সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা