মেয়েদের মূত্রথলিতে সংক্রমণ ও তার প্রতিকার
মেয়েদের মূত্রথলিতে সংক্রমণ - ছবি সংগৃহীত
মেয়েদের মূত্রথলির সংক্রমণ একটি অতি সাধারণ সমস্যা। এটি সাধারণত ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমণ যার ফলে মূত্রথলি এবং মূত্রনালী সংক্রমিত হয়। এই সংক্রমণের ফলে যে সমস্ত উপসর্গ দেখা যায়, সেগুলোর মধ্যে বেশি হলে প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া, ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া, তলপেটে ব্যথা করা, একবার প্রস্রাব করলে মনে হয় আরো কিছু প্রস্রাব মূত্রথলীতে বাকি আছে সেটাকে বলে ইনকমপ্লিট ইভাকিওয়েশান অনুভূতি অনেক সময় জ্বরও আসতে পারে, শরীর দুর্বল লাগা, একটু কাজকর্ম করলেই ক্লান্তি অনুভব করা, প্রস্রাবের নালীপথে অর্থাৎ মূত্র নালীপথে জ্বালা অনুভব করা, বমি বমি ভাব লাগা ইত্যাদি উপসর্গও দেখা দিতে পারে। যদি চিকিৎসা না করা হয় তবে এই সংক্রমণটি আরো ওপরের দিকে উঠে যখন কিডনির কিছু অংশে বাসা বাঁধে তখন রোগীর সমস্যা আরো বেশি হয় সেটাকে বলা হয় পাইনো নেক্সাইটিস। তখন রোগী পেছন দিকে পাঁজরের নিচে ব্যথা অনুভব করতে থাকে।
সাধারণ ই. কোলাই নামক একটি ব্যাকটেরিয়া দিয়ে এই সংক্রমণটি বেশি হয়। মহিলাদেরই এই সংক্রমণ বেশি হয়। তবে একবার হলে এবং ঠিকমতো শনাক্ত করে চিকিৎসা না করালে আবারো এই সংক্রমণটি দেখা দিতে পারে। এটি শনাক্ত করতে উপসর্গগুলো ভালোভাবে বুঝতে হবে এবং রোগীকে প্রস্রাব পরীক্ষা করে দেখতে হবে। অনেক সময় রোগীর প্রস্রাবটি কালচার নামক একটি পরীক্ষা করাতে হতে পারে। যদি সংক্রমণটি জটিল হয় কিংবা বারবার হয় কিংবা ওষুধ খেয়েও ভালো না হয়। যাদের বারবার এই সংক্রমণ হয় তারা কিন্তু সতর্ক থাকবেন, উপসর্গ দেখা দিলেই অবশ্যই ডাক্তারের কাছে যাবেন। কোনোভাবেই অবহেলা করবেন না। ডাক্তার যদি অ্যান্টিবায়োটিক, ব্যথার ওষুধ দেন সেগুলো অবশ্যই সঠিকভাবে খাবেন। অনেক দু-এক দিন ওষুধ খেয়ে বাদ দিয়ে দেন; বলেন, আমার তো এখন উপসর্গ নেই আমি ওষুধ খাবো কেন? এ রকমটি একদমই করা যাবে না। কারণ এতে আপনারই ক্ষতি হবে আরো বেশি ওই অ্যান্টিবায়োটিকটি আরো ঝামেলা করবে এবং পরবর্তীতে হয়তো ওই ওষুধটি আপনার শরীরে আর কাজ নাও করতে পারে।
ব্যক্তিগতভাবে পরিচ্ছন্ন থাকলে এই রোগ থেকে অনেক সময় নিরাপদ থাকা যায়। মাসিকের সময় ভালো স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহার করা উচিত। প্রস্রাব অতিরিক্ত সময় কখনই চেপে রাখবেন না। এটিও আপনার ক্ষতি ছাড়া উপকার করবে না। অনেকে মাসিকের পথে কথায় কথায় স্যাভলন ব্যবহার করেন। এটিও ঠিক নয়, নিজেকে পরিসরে পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। মাসিকের সময় ন্যাপকিন না ভিজলেও চার পাঁচ ঘণ্টা পরপর পাল্টানো উচিত।
যারা পানি কম পান করেন, যাদের ডায়াবেটিস আছে, যারা পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতাকে ততটা গুরুত্ব দেন না, যাদের শরীরে রক্তশূন্যতা আছে এবং অনেক দুর্বলতা এবং যাদের মাসিক চিরতরে বন্ধ হয়ে গেছে, তাদের ক্ষেত্রে প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায় এবং ঘন ঘন সংক্রমণ হতে পারে।
মোটকথা, আপনি প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া অনুভব করলে কিংবা ঘন ঘন প্রসাব হলে, জ্বর এলে, তলপেটে ব্যথা করলে, বমি বমি ভাব লাগলে কিংবা শরীর অতিরিক্ত দুর্বল লাগলে অবশ্যই চিকিৎসকের কাছে যাবেন, দেরি করবেন না। চিকিৎসক যদি কোনো পরীক্ষা-নিরীক্ষা দেন সেটা করাবেন এবং ওষুধ নিয়মমাফিক খাবেন, তাহলে ভালো থাকবেন।