স্তনে শক্ত চাকাই কি ক্যান্সারের লক্ষণ!
স্তনে শক্ত চাকাই কি ক্যান্সারের লক্ষণ! - ছবি সংগৃহীত
দিনে দিনে স্তন ক্যান্সারে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। কিবা যুবতী কিংবা বয়স্ক সবাই ঝুঁকি থেকে মুক্ত নন। আমেরিকার মতো জায়গায় প্রতি চারজনের মধ্যে একজনের স্তনে ক্যান্সার হওয়ার আশঙ্কা থাকে। আমাদের দেশেও অনেক মা-বোনই স্তন ক্যান্সারের সমস্যায় ভোগেন, লজ্জায় এবং সঙ্কোচে প্রাথমিক অবস্থায় ডাক্তারের কাছে যেতে চান না। যখন ধরা পড়ে তখন রোগটি বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে। সীমার অবস্থাটাও তেমনি। অনেক দূর অসুখটা ছড়িয়ে পড়ার পর ডাক্তারের কাছে গেছেন। মাত্র ইউনিভার্সিটি শেষ করে একটি প্রাইভেট ফার্মে জয়েন করেছেন। ডান স্তনে একটি শক্ত গোল চাকা কোনো দিকেই নড়ে না ব্যথাও তেমন নেই, ওপরের চামড়াটা একটি লালচে তামাটে বর্ণের। কিন্তু নিপলে চাপ দিলে সামান্য রক্ত আসে। ডান বগলের নিচে একটু ফোলা ফোলা মনে হয়।
মাঝে মধ্যে চাকাটায় ব্যথাও অনুভূত হচ্ছে। মাকে বলার পর স্থানীয় একজন মহিলা ডাক্তারকে দেখানো হলো। তিনি বায়োপসি নামক পরীক্ষাটি করতে দিলেন। রিপোর্টে ধরা পড়ল স্তন ক্যান্সার। সীমার মা প্রথমে বিশ্বাসই করেননি। রিপোর্টে আজকাল কত কি গোলমাল থাকে। আরো বড় নামকরা হাসপাতালে নিয়ে পুনরায় পরীক্ষা করানো হলো। একই রিপোর্ট এলো। সিদ্ধান্ত হলো অপারেশন করে স্তন বাদ দিতে হবে। ৯ বছর ওষুধের মাধ্যমে চিকিৎসা দিতে হবে সেটিকে বলে কেমোথেরাপি। সীমার স্তন বাদ দেয়ার পর কেমো দেয়ার পর চুল সব পড়ে গেল, গায়ের রঙ হলো তামাটে। অত্যন্ত দুর্বল শরীর। কিন্তু বন্ধু-বান্ধবের সাহস এবং আন্তরিক সহানুভূতিতে একেবারেই সাহস হারায়নি। চাকরিতে ছয় মাস যেতে পারেনি। ডাক্তার বলেছেন স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারবে সীমা।
এ জন্যই বলছি প্রতি মাসেই আপনি আপনার নিজের স্তন অত্যন্ত যত্ন সহকারে পরীক্ষা করুন। হাতে কোনো চাকা লাগে কি না ভালোভাবে দেখুন। কোনো অসঙ্গতি ধরা পড়লে সাথে সাথে স্থানীয় স্বাস্থ্য ক্লিনিকে যোগাযোগ করুন। সেখানে মহিলা কর্মী পাবেনই। আপনার সমস্যার কথা খুলে বলুন। যদি ডাক্তার আপনাকে দেখার পরে বায়োপসি কিংবা আল্ট্রাসনোগ্রাম করতে বলে অবশ্যই করাবেন। এখানে সময় নষ্ট একদম করবেন না। স্তন ক্যান্সারে তাদের বেশি হয় যাদের মা বোনের খালার ইতিহাস আছে। যারা ব্যায়াম করেন না, কিংবা চর্বিযুক্ত খাবার বেশি খান তারাও ঝুঁকির মধ্যে পড়েন, যারা বেবিকে বুকের দুধ পান করাননি তারাও ঝুঁকি থেকে বাদ পড়েন না। যাদের এক স্তনে ক্যান্সার ধরা পড়েছে তাদের অন্য স্তনেও হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
প্রাথমিক অবস্থায় ধরা পড়লে রোগের চিকিৎসা বেশ সহজ হয়। কিন্তু দেরি মানেই যত বিপত্তি। স্তন পরীক্ষার কথা আপনি মা-বোন খালা চাচী আশপাশের সবাইকে বলুন। এটিতে লুকোনোর কিছু নেই। স্তন ক্যান্সারে যেন আর একটি মেয়ের জীবন নষ্ট না করে সে জন্য আপনি এখন থেকেই সচেতন থাকুন। আপনার এই সচেতনতা আপনার মূল্যবান জীবনকে রক্ষা করবে। বগলের নিচে থেকে ফোলা অনুভব করলেও ডাক্তারের পরামর্শ নিন। মোটকথা সচেতনতাই আপনাকে এই মরণব্যাধি থেকে অনেকখানি সুস্থতা দিতে পারে।