শসায় দারুণ উপকার
শসা - ছবি : সংগৃহীত
শসা কাটুন চাকা চাকা করে। কুচো কুচো করেও কাটতে পারেন। যেভাবেই কাটুন, খোসা ছাড়াবেন না। বরং কাটার আগে ভালো করে শসা ধুয়ে নিন। কাটার পরে শসার সঙ্গে মেশান লেবুর রস। নুন। আর হ্যাঁ, শসা কখনই রান্না করে খাবেন না। তাতে কাজের কাজ কিছুই হয় না। বরং যেটুকু ভিটামিন ও খনিজ থাকে তা নষ্ট হয়। এখন প্রশ্ন হলো শসা খেয়ে হবেটা কী?
৩০০ গ্রাম শসায় ক্যালোরির মাত্রা থাকে ৪০ থেকে ৪৫। ফ্যাট থাকে ০। শর্করা ১১ গ্রাম। প্রোটিন ২ গ্রাম। এছাড়া থাকে একজন ব্যক্তির রোজকার দরকারের ১৪ শতাংশ পর্যন্ত ভিটামিন সি, ৬২ শতাংশ পর্যন্ত ভিটামিন কে, ১০ শতাংশ পর্যন্ত ম্যাগনেশিয়াম, ১৩ শতাংশ পর্যন্ত পটাশিয়াম, ১২ শতাংশ পর্যন্ত ম্যাঙ্গানিজ! শসা থেকে মেলে ফ্ল্যাভোনয়েডস, ট্যানিনের মতো অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। শসার ৯৬ শতাংশ পূর্ণ থাকে জলীয় উপাদানে।
সুরাং ভিটামিন এবং খনিজে পূর্ণ শসা খেলে শরীরে অদ্ভুত ধরনের ইতিবাচক পরিবর্তন দেখা দিতে থাকে।
দেখা যাক কেমন পরিবর্তন—
রোগ প্রতিরোধ (Immunity) :
শসায় থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরের ফ্রি র্যাডিকেলস ধ্বংস করে। মনে রাখতে, শরীরে ফ্রি র্যাডিকেলস বা ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থের বাড়বাড়ন্তে নানা ধরনের অসুখ বাসা বাঁধে। প্রশ্ন হলো কী এই ফ্রি র্যাডিকেলস? কোষ দ্বারা তৈরি বর্জ্যপদার্থ একধরনের ফ্রি র্যাডিকেলস। এছাড়া দূষণ, মদ্যপান, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসও শরীরে ফ্রি র্যাডিকেলসের বাড়বাড়ন্ত ঘটায়। শসায় থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট একাধারে ফ্রি রাডিকেলস ধ্বংস করে, অন্যদিকে লিভার থেকে ক্ষতিকর রাসায়নিকও বের করে দিতেও সাহায্য করে। সুতরাং নিয়মিত শসা খেলে শরীরে অসুখ বাসা বাঁধার আশঙ্কা কমবে।
শরীরে পানির ঘাটতি পূরণে :
শসার ৯৬ শতাংশই পানিতে পূর্ণ। ফলে দেহে পানির ঘাটতি পূরণ করতে শসার জুড়ি নেই। গ্রীষ্মের দিনে হাতের কাছে পানি না থাকলে, শুধু শসা খেয়ে কিছুক্ষণের জন্য তৃষ্ণা নিবারণ করা সম্ভব। এমনকী এড়ানো সম্ভব ডিহাইড্রেশন। এমনকী লবণ মাখানো শসা সাময়িকভাবে ওআরএস-এর মতোও কাজ করতে পারে!
ওজন কমাতে :
শসা ফ্যাট ঝরাতে সাহায্য করে। শরীর রাখে ঝরঝরে। এছাড়া যাদের বেশি খাবার খেয়ে ফেলার প্রবণতা আছে, তারা শসা খান বেশি করে। পেট ভরা থাকলে আর অতিরিক্ত খাবার খেতে হবে না। ওজনও বাড়বে না। বিভিন্ন সমীক্ষায় শসার ওজন কমানোর স্বপক্ষে প্রমাণ মিলেছে।
সুগার কমাতে :
ডায়াবেটিসের (Diabetes) রোগীর জন্য শসা নিশ্চিতভাবে মহৌষধ। ১০৪ গ্রাম শসায় থাকে ১৬ ক্যালোরি শক্তি। ফলে সুগার আছে বলে যারা নিক্তিতে মেপে খাবার খাচ্ছেন এবং সর্বক্ষণ খিদে পাচ্ছে বলে অনুযোগ করছেন, তারা নিশ্চিন্তে শসা খেয়ে যান। পেট ভরা থাকবে। ডায়াবেটিস চলে আসবে মুঠোর মধ্যে।
পেট পরিষ্কার :
ফাইবারশূন্য খাদ্যাভ্যাস এবং এক্সারসাইজহীন জীবনযাপনের জন্য বহু মানুষের পেট সকালে একবারে পরিষ্কার হয় না। এমনকী হতে পারে কোষ্ঠকাঠিন্য (constipation)। বারবার যেতে হয় রেস্টরুমে। অফিসে, জরুরি কাজে বেরতে অকারণে দেরি হয়ে যায়। মেজাজ হয়ে পড়ে খিটখিটে। এমন ব্যক্তিরা পেকটিন নামে বিশেষ ফাইবার সমৃদ্ধ শসা খেয়ে দেখতে পারেন। পেকটিন অন্ত্রের চলন স্বাভাবিক রাখে। পাচনতন্ত্রের উপকারী ব্যাকটেরিয়াগুলিকে খাদ্যের জোগান দেয়। ফলে নিয়মিত শসা খেলে সকালে উঠে একবারেই নিজেকে অদ্ভুতরকম হালকা বোধ করবেন।
প্রশ্ন হলো কতটা শসা খেতে পারেন? প্রতিদিন একজন সুস্থ ব্যক্তি একটা বা দু’টি করে শসা খেতে পারেন। খুব বেশি শসা খেয়ে পেট ভরতি রাখলে অন্য খাবার খাওয়া হবে না। শরীরে পুষ্টি উপাদানের ঘাটতি দেখা দেবে। তখন শরীর দুর্বল হয়ে পড়বে। আর হ্যাঁ, কিডনি রোগীরা চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে তবেই শসা খাবেন।
আবার অনেকে জানতে চান, রাতে রাতে শসা খাওয়া যাবে কি না। ফাইবার থাকায় শসা হজম হতে দেরি হয়। অন্যদিকে রাতে আমাদের মেটাবলিজমের হার কমে যায়। সেক্ষেত্রে শসা হজম করা একটু মুশকিল হয়ে পড়ে। তাই রাতের দিকে শসা খেলে পেট ফাঁপা, বুক জ্বালা করার মতো সমস্যা দেখা যেতে পারে। সুতরাং রাতের দিকে শসা খাওয়া এড়িয়ে যাওয়াই ভালো।
সূত্র : বর্তমান