লঘু চাপে মিরারেজ ঘূর্ণি
লঘু চাপে মিরারেজ ঘূর্ণি - ছবি : সংগৃহীত
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হয়েছে লঘুচাপ, যা রূপ নিতে পারে ঘূর্ণিঝড়ে। বাংলাদেশের বন্দরে বন্দরে উঠেছে তাই ১ নম্বর সতর্ক সংকেত।
বাংলাদেশ ক্রিকেটের হালফিল ‘লঘু চাপ'-এর চেয়ে একটু বেশিই বরং। সর্বশেষ ১০ আন্তর্জাতিক ম্যাচে ৯ পরাজয় তো তৈরি করে রীতিমতো ‘গুরু চাপ'! শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডেতে হেরে গেলে সেটি রূপান্তরিত হতে পারতো ক্রিকেট বিপর্যয়ের ‘ঘূর্ণিঝড়'-এ। সতর্ক সংকেত লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়ে যেতো ৫, ৭ কিংবা ৯-এ।
ভাগ্যিস, তা হয়নি! ৩৩ রানের জয়ে সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল বাংলাদেশ। ২০২৩ বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে যোগ করলে আরো ১০ পয়েন্ট। এবং সবচেয়ে বড় ব্যাপার, চাপ সরিয়ে স্বস্তির হিমেল হাওয়া ফিরলো খানিক। ক্ষণিকের জন্য হলেও!
টস জিতে আগে ব্যাটিং করে ৬ উইকেটে ২৫৭ রান বাংলাদেশের। খুব সহজেই তা ২৭০-২৮০ হতে পারতো। কারণ, ৪০ ওভার শেষে দলের রান ছিল ৪ উইকেটে ১৯৩। উইকেটে দুই সেট ব্যাটসম্যান মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদ উল্লাহ। প্রথম জনের ব্যাটে সেঞ্চুরির সৌরভ; পরের জনের ফিফটির। হাতে ৬ উইকেট নিয়ে শেষ ১০ ওভারে ৮০-৯০ রান তো হতেই পারতো।
হয়নি বাংলাদেশ হঠাৎ খেই হারিয়ে ফেলায়। রিভার্স সুইপের চেনা চোরাবালিতে ডুবে মুশফিক হারিয়ে আসেন প্রাপ্য সেঞ্চুরি। ৮৭ বলে ৮৪ রানের ইনিংসেও তাই হতাশা না থেকে পারে না। মাহমুদউল্লাহ ফিফটি পেলেও সময়ের দাবি মেটানো ব্যাটিং করতে পারেননি। ৭৬ বলে ৫৪ রানের ইনিংসেও তাই আক্ষেপ না থেকে পারে না। শেষ ১০ ওভারে মাত্র ৬৪ রান করে বাংলাদেশের ইনিংস থেমে যায় ছয় উইকেটে ২৫৭ রানে।
থেমে থেমে বল আসা মিরপুরের চিরাচরিত উইকেটের জন্য এটিই পরে যথেষ্ট বলে প্রমাণিত। আর শ্রীলঙ্কার ১০২ রানে ছয় উইকেট তুলে নিয়ে তা তো একরকম নিশ্চিত করে ফেলেন বাংলাদেশের বোলাররা। আরো নির্দিষ্ট করে বললে মেহেদী হাসান মিরাজ। নতুন বলে প্রথম ব্রেক থ্রু এই অফ স্পিনারের; ৪ ওভারের প্রথম স্পেলে খরচ মোটে ১১ রান। ফিরে এসে আরো তিন উইকেটে। শ্রীলঙ্কার প্রথম ৬ ব্যাটসম্যানের চারজনই মিরাজের শিকার। বোলিং ফিগার তখন দেখাচ্ছিল ৮.৩ ওভারে ১৪ রানে ৪ উইকেট।
শেষে ১০-২-৩০-৪ বোলিং ফিগারটায় রান তাই একটু বেশি দেখাচ্ছে বটে, তবে ততক্ষণে বাংলাদেশের জয়ের ভিতটা তৈরি করে দিয়েছেন মিরাজ।
সেটি আবার আরেক দফা অনিশ্চয়তায় হাসারাঙ্গা ডি সিলভার ব্যাটে। ‘ইয়াস' ঘূর্ণিঝড়ের মতো ঝড় ওঠে তার ব্যাটে। দারুণ সাহসী এক ইনিংস খেলেন তিনি ৮ নম্বরে নেমে। মাত্র ৩১ বলে ফিফটিতে পৌঁছে যান। তিন উইকেটের পুঁজিতে শেষ ৬০ বলে ৬৭ রানের প্রয়োজনীয়তার সামনে নিয়ে আসেন শ্রীলঙ্কাকে। আবার চাপে তাই বাংলাদেশ।
ওই চাপ কেটে যায় সাইফউদ্দিনের বলে। তার করা ৪৪তম ওভারের শেষ বলে পুল করতে গিয়ে হাসারাঙ্গা (৬০ বলে ৭৪) আউট হলে শেষ আশাটাও শেষ হয়ে যায় সফরকারীদের। তাদের ৪৮.১ ওভারে ২২৪ রানে অলআউট করে বাংলাদেশ ম্যাচ জেতে ৩৩ রানে।
দিনের শুরুতে ম্যাচ মাঠে গড়ানো নিয়েই তৈরি হয়েছিল সংশয়। কারণ, শ্রীলঙ্কার দুই ক্রিকেটার ইসুরু উদানা, শিরান ফার্নান্ডো এবং বোলিং কোচ চামিন্ডা ভাস আগের দিনের কোভিড পরীক্ষায় হন পজিটিভ। ম্যাচের ঘন্টা দুয়েক আগে পাওয়া দ্বিতীয় কোভিড টেস্টের ফলে অবশ্য উদানা-ভাস নেগেটিভ হয়ে যান। আইসিসির প্রটোকল মেনে খেলা চালিয়ে যাওয়া নিয়ে কোনো বাধা থাকে না।
কিন্তু মাঠের ক্রিকেটে বাংলাদেশের সামনে ‘বাধা' আসে বেশ কয়েকবার। শুরুতে লিটন দাসের শূন্য রানে আউট হওয়া, ধুঁকতে থাকা সাকিবের (৩৪ বলে ১৫) রান বাড়ানোর মরিয়া চেষ্টায় লং অনে ধরা পড়ায় ৪৩ রানে দুই উইকেট হারায় বাংলাদেশ।
তামিম অন্য প্রান্তে খেলছিলেন তামিমের মতোই। ব্যাটিং অ্যাপ্রোচ নিয়ে প্রশ্ন না করার অনুরোধ ছিল ম্যাচের আগের দিনের সংবাদ সম্মেলনে। ইনিংস ‘অ্যাংকর' করার সেই অ্যাপ্রোচেই ৬৬ বলে ফিফটিতে পৌঁছে যান বাংলাদেশ অধিনায়ক। এরপর যখন আরো বড় ইনিংসের প্রতিশ্রুতি, তখনই শাফল করতে গিয়ে এলবিডাব্লিউ তামিম। ৭০ বলে ৫২ রান করে।
ঠিক পরের বলেই মোঃ মিঠুন (০) প্যাডেল সুইপ করতে গিয়ে এলবিডাব্লিউ। ৯৯ রানে চার উইকেট হারিয়ে আরেকটি মিনি-বিপর্যয়ের মুখে বাংলাদেশ।
এরপর মুশফিক-মাহমুদউল্লাহর ১০৯ রানের জুটি। শেষ দিকে প্রত্যাশিত রান না হওয়া। তবু আড়াই পেরোনো। মিরাজের ঘূর্ণিজাদু। হাসারাঙ্গার প্রতিরোধ ভেঙে বাংলাদেশের জয়।
ঢাকায় এখনো জৈষ্ঠ্যের ভ্যাপসা গরম। তবে বাংলাদেশ ক্রিকেটের গুমোট হাওয়া কাটিয়ে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে জয়টি যে ‘আরাম' হয়ে এসেছে, তা আর বলতে!
সূত্র : ডয়চে ভেলে