বার্সেলোনায় আর খেলবেন না মেসি?
মেসি - ছবি : সংগৃহীত
হালকা-পাতলা গায়ে গড়ন আর ঝাঁকড়া চুলে ১৩ বছরের এক কিশোর ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০০০ সালে যোগ দেন বার্সেলোনার যুব দলে। নিঃসন্দেহে সময়ের পরিক্রমায় এতো দিনে তিনি হয়ে গেছেন ইতিহাস সেরা ফুটবলারদের একজন। এখন তিনি আর কিশোর নেই। কার কথা বলছি, পাঠক হয়তো এতক্ষণে বুঝেই গেছেন। বলা হচ্ছে বার্সেলোনার সর্বকালের সেরা ফুটবলার লিওনেল মেসির কথা। ১৬ অক্টোবর, ২০০৪ সালে এস্পানিওলের বিপক্ষে লা লিগা ম্যাচ দিয়ে বার্সেলোনার প্রধান দলে যোগ অভিষেক হয় মেসির। সেদিন যাত্রাটা শুরু হয়েছিল ১-০ জয় দিয়ে। কিন্তু স্রোতের পরতে পরতে ব্লাউগ্রেনস জার্সিতে বুড়ো মেসি খেলে ফেলেছেন ২০ বছরের বেশি সময়।
শুরুটা জয় দিয়ে হলেও শেষটা কী হার দিয়ে হবে?
গুঞ্জন চলছে, মেসি আর থাকছেন না বার্সেলোনায়। সেটি আরো জোরালো হচ্ছে নতুন চুক্তিতে আবদ্ধ না হওয়ায়। ২০২০/২১ মৌসুমে আজ শেষ ম্যাচে এইবারের বিপক্ষে মাঠে নামছে কাতালান শিবির (রাত ১০ টায় ম্যাচটি শুরু হবে)। কিন্তু এই ম্যাচে খেলবেন না লিওনেল মেসি। কোচ রোনাল্ড কোম্যানের সাথে কথা বলে, গতকাল অনুশীলনেও ছিলেন না আর্জেন্টাইন সুপারস্টার। এমনটাই জানানো হয়েয়ে ক্লাবের পক্ষ থেকে। যদি এই ম্যাচে না নামেন, আর মেসি যদি বার্সার সাথে চুক্তি নববায়ন না করেন, তাহলে সেল্টা ভিগোর বিপক্ষে ম্যাচটাই ছিল বার্সার হয়ে মেসির শেষ ম্যাচ। যে ম্যাচটি বার্সা ২-১ গোলে হেরেছে। তবে কী সমাপ্তিটা হারেই লেখা হচ্ছে?
গত মৌসুমের পরই অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছিল মেসিকে নিয়ে। আর্জেন্টাইন তারকা চেয়েছিলেন বার্সেলোনা ছাড়তে। টানাপোড়েনের অবসানে থেকে গেছেন আরো এক মৌসুম। চলেতো যেতেই পারেন, ২০ বছরে কী অর্জন করেছেন, আর বার্সাকে কি দিয়েছেন?
হ্যাঁ, তিনি হয়েছেন- বার্সার ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি শিরোপাজয়ী ফুটবলার। কাতালুনিয়ার দলটির হয়ে এ পর্যন্ত ৩৫টি শিরোপার স্বাদ পেয়েছেন মেসি। ক্যাম্প ন্যু ছেড়ে যাওয়ার আগে ৩২টি ট্রফি জিতেছিলেন আন্দ্রেস ইনেয়েস্তা।
এতো শিরোপা জিততে অনেক গোলই প্রায়োজন ছিল বার্সার। মেসি ছিলেন সেই গোল ম্যাশিন। গোল করতে করতে হয়ে গেছেন বার্সার হয়ে সর্বোচ্চ গোলের মালিক। শুধু গোল নয় বার্সার হয়ে সবচেয়ে বেশি ৭৭৮ ম্যাচ খেলে করেছেন ৬৭২ গোল। নিয়ে বর্তমানে তিনি দলের সর্বোচ্চ গোলদাতা।
২০১১-১২ মৌসুমে লা লিগায় ৫০ গোল করে প্রতিযোগিতাটির এক আসরে সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ড গড়েন মেসি। লা লিগার সবচেয়ে বেশি হ্যাটট্রিকও তার (৩৪টি)।
২০০৯, ২০১০, ২০১১, ২০১২, ২০১৫ ও ২০১৯- মোট ছয়বার ব্যালন ডি’অর জিতেছেন মেসি। সবচেয়ে কম বয়সে তিনবার এই পদক জিতেছিলেন, একমাত্র খেলোয়াড় হিসেবে টানা চারবার এ মুকুট জয়ের কৃতিত্বও তার। লা লিগায় আটবার সর্বোচ্চ গোলদাতার পুরস্কার পিচিচি ট্রফি জিতেছেন মেসি। গত মৌসুমে সর্বোচ্চ গোলদাতা হয়ে তেলমো সাররার ছয় বার জয়ের রেকর্ড ছাপিয়ে যান তিনি।
ইউরোপের শীর্ষ পাঁচ লিগের হিসেবে ছয়বার সবচেয়ে বেশি গোলের কীর্তি গড়েছেন মেসি। জিতেছেন ইউরোপিয়ান গোল্ডেন শু; ২০০৯-১০, ২০১১-১২, ২০১২-১৩, ২০১৬-১৭, ২০১৭-১৮ ও ২০১৮-১৯ মৌসুমে এ সাফল্য পান তিনি।
লা লিগায় সবচেয়ে বেশি প্রতিপক্ষের বিপক্ষে গোল তার। বর্ণিল ক্যারিয়ারে লা লিগায় এ পর্যন্ত ৩৭টি দলের বিপক্ষে গোল উদযাপন ফুটবল সুপাস্টার। চ্যাম্পিয়ন্স লিগে সবচেয়ে বেশি প্রতিপক্ষের বিপক্ষে গোল। ৩৩ বছর বয়সী ফরোয়ার্ড এ পর্যন্ত ৩৫টি দলের জালে বল পাঠিয়েছেন। প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে এক ম্যাচে ৫ গোল করেনি মেসি। গার্ড মুলারকে পিছনে ফেলে বার্সেলোনা ও আর্জেন্টিনার হয়ে ৯১ গোল করে এক বর্ষপঞ্জিতে সবচেয়ে বেশি গোলের রেকর্ড করেন বার্সা ফরোয়ার্ড।
গোল করার পাশাপাশি গোল করানোতেও পারদর্শী মেসি। ইউরোপের সবচেয়ে বেশি ৩০২ অ্যাসিস্ট দাতাও তিনি। দলের পারফরম্যান্স যেমনই হোক, এই মৌসুমেও মেসি ছিলেন উজ্জ্বল, করেছেন ৩৮ গোল। ২০ বছর আগে বার্সেলোনায় যোগ দিলেন কিশোর হয়ে; এখন তিনি বুড়ো। কিন্তু পারফরম্যান্স বলে, মেসি এখন পূর্বের চেয়ে আরো দক্ষতায় রয়েছেন। দেখার অপেক্ষায় ফুটবল শিল্পকে শৈ^ল্পিকতা দানকারী এই ক্ষুদে জাদুকরের ছুটে চলা কোথায় গিয়ে থামে।
বার্সেলোনার হয়ে লিওনেল মেসি :
ম্যাচ গোল অ্যাসিস্ট হ্যাটট্রিক ট্রফি
৭৭৮ ৬৭২ ৩০২ ৪৮ ৩৫
বার্সেলোনার হয়ে ট্রফি জয় : ৩৫টি
লা লিগা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ কোপা দেল রে ক্লাব বিশ^কাপ
১০ ৪ ৭ ৩
ইউরোপিয়ান সুপার কাপ স্প্যানিশ সুপার কাপ
৩ ৮
ব্যাক্তিগত অর্জন :
ব্যালন ডি’অর গোল্ডেন শু বেস্ট প্লেয়ার ইউরোপ
৬ ৬ ২
লা লিগা সর্বোচ্চ গোলদাতা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ সর্বোচ্চ গোলদাতা
৮ বার ৬ বার
২০১১-১২ মৌসুমে লা লিগায় ৫০ গোল করে এক বর্ষপঞ্জিকায় করেছেন ৯১ গোল।