বাইডেন ও ইসরাইল
বাইডেন ও নেতানিয়াহু - ছবি : সংগৃহীত
আইপেক (AIPAC)। পুরো কথায় : ‘অ্যামেরিকান ইসরাইল পাবলিক অ্যাফেয়ার্স কমিটি’। এটি ইসরাইল-সমর্থক একটি মার্কিন লবিং গ্রুপ। যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসে ও নির্বাহী শাখায় যাতে ইসরাইলপন্থী নীতি ও সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়, সে ব্যাপারে এরা নিরলস লবিং চালায়। বেস্টি বার্নস কর্ন আইপেকের বর্তমান প্রেসিডেন্ট। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বেশ কয়েকটি ইসরাইলপন্থী লবিং গ্রুপের অন্যতম এটি। এরা দাবি করে, এদের সদস্যসংখ্যা এক লাখ। আছে ১৭টি আঞ্চলিক অফিস। রয়েছে বহু ডোনার। তাদের আরো দাবি : এটিই একমাত্র গুরুত্বপূর্ণ সংগঠন, যেটি যুক্তরাষ্ট্র-ইসরাইল জোট জোরদার করার কাজে নিয়োজিত। আইপেক যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিবিদদের মাঝে লবিং চালায়, যাতে তারা ইসরাইলের প্রতি শর্তহীন রাজনৈতিক সমর্থন জারি রাখেন। এদের প্রয়াসেই গাজায় সাম্প্রতিক ইসরাইলি হামলার ঠিক এক সপ্তাহ আগে গত ২২ এপ্রিল কংগ্রেসের ৪৩৫ সদস্যের মধ্যে ৩৩০ জন সদস্য স্বাক্ষরিত একটি চিঠি পাঠানো হয় হাউজ অ্যাপ্রোপ্রিয়েশন কমিটির চেয়ারম্যানসহ পদস্থ সদস্যদের কাছে। এ চিঠিতে তারা বলেছেন, ইসরাইলে অর্থসহায়তা যেন কমানো না হয় কিংবা কোনো শর্তও যেন এ বিষয়ে আরোপ না করা হয়। এই চিঠি আইপেকের প্রতিনিধিত্বের শক্তি প্রদর্শনের একটি উদাহরণ মাত্র।
প্রেসিডেন্ট বাইডেনের সুদীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে ‘ইসরাইলি দুষ্কর্মের সহযোগী হিসেবে। তিনি তার সেই ভূমিকাই প্রকাশ করলেন গত ১২ মে ‘ইসরাইল হ্যাজ দ্য রাইট টু ডিফেন্ড ইটসেলফ’-বক্তব্যের মাধ্যমে। এর প্রতিফলনও দেখা যাচ্ছে এরই মধ্যে। তার জাতিসঙ্ঘের দূত লজ্জার মাথা খেয়ে ইতোমধ্যেই ব্লক করে দিয়েছেন নিরাপত্তা পরিষদের যুদ্ধবিরতি সম্পর্কিত আহ্বান। বাইডেনের এই বক্তব্য ও অবস্থান সমালোচনার মুুখে পড়েছে খোদ যুক্তরাষ্ট্রেই। ফিলিস্তিনি জনগণের ওপর ইসরাইলের হত্যাযজ্ঞ এবং গাজায় ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞের প্রতিবাদে রাজপথে বিক্ষোভ হয়েছে; বিক্ষোভ প্রদর্শিত হয়েছে ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের বিভিন্ন শহরে। সবার দাবি : যুক্তরাষ্ট্রকে তার নীতি পরিবর্তন করে আন্তর্জাতিক আইনানুগ ও ফিলিস্তিনিদের অধিকারানুগ করতে হবে। কংগ্রেসের প্রতি সদস্যকে স্বাক্ষর করতে হবে বেটি ম্যাককুলাম সূচিত বিলে। এই বিলে রয়েছে : ইসরাইলকে দেয়া যুক্তরাষ্ট্রের কোনো তহবিল ফিলিস্তিনি শিশুদের আটক রাখা, অবৈধ অবরোধ, ফিলিস্তিনি সম্পদ ধ্বংস এবং আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে অধিকতর ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড ইসরাইলে অন্তর্ভুক্তির কাজে ব্যবহার করা যাবে না।
বিশ্ববাসীর কাছে এটি স্পষ্ট- দশকের পর দশক ধরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিটি সরকার ইসরাইলের প্রতিটি কাজে শর্তহীন সমর্থন দিয়ে ফিলিস্তিনকে মহা বিপর্যয়কর পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দিয়েছে। বিবেকবান মানুষের চাওয়া হলো, এবার অন্তত ফিলিস্তিন প্রশ্নে মানবাধিকার ও আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে যুক্তরাষ্ট্র এই সঙ্কট নিরসনে কাক্সিক্ষত ভূমিকা পালন করবে। সেই সাথে কংগ্রেসকে এগিয়ে আসতে হবে যাতে ‘আর্মস কনট্রোল অ্যাক্ট’ ও ‘লেহি লজ’ কাজে লাগিয়ে ইসরাইলে মারণাস্ত্র রফতানি বন্ধ করা হয়। মনে রাখা দরকার, ফিলিস্তিনে ইহুদিরা যা কিছু করছে কথিত ‘রাইট টু সেলফ-ডিফেন্সের’ অজুহাত তুলে। অথচ আন্তর্জাতিক আইন বলছে, আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে বল প্রয়োগ অনুমোদনযোগ্য। কিন্তু দখলদারিত্ব বজায় রাখার জন্য বল প্রয়োগ বৈধ নয়। অতএব ইসরাইলের বল প্রয়োগের কোনো অধিকার নেই ফিলিস্তিনিদের ওপর। অথচ ইসরাইল যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন নিয়ে সেই অবৈধ কাজ জারি রেখেছে।
লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক ও কলামিস্ট