তুরস্ক-ফিলিস্তিন সমুদ্রসীমা চুক্তি এবং ইসরাইলি অবরোধ থেকে গাজার মুক্তি
তুরস্ক-ফিলিস্তিন সমুদ্রসীমা চুক্তি এবং ইসরাইলি অবরোধ থেকে গাজার মুক্তি - ছবি : সংগৃহীত
ফিলিস্তিন রাষ্ট্র দুটি অংশে বিভক্ত। পশ্চিম তীর ও গাজা। পশ্চিম তীরের সাথে কোনো সমুদ্র সংযোগ না থাকলেও গাজার সাথে রয়েছে ভূমধ্যসাগরের সংযোগ।
বর্তমানে গাজা উপত্যকার উপকূলীয় এলাকা অবরুদ্ধ করে রেখেছে ইসরাইল। গাজাবাসী সমুদ্রের মধ্যে মাত্র ১১ কিলোমিটার দূর পর্যন্ত যেতে পারে। এই রেঞ্জ অতিক্রম করা মাত্র ইসরাইলি সেনারা গুলি করে।
গাজার একদিকে মিসর, দুদিকে ইসরাইল এবং বাকি দিকটায় ভূমধ্যসাগর। কৌণিক অবস্থান থেকে গাজার উপকূল ও তুরস্কের উপকূল একই রেখায় অবস্থিত। ফলে ফিলিস্তিন ও তুরস্ক পরস্পরের মধ্যে সমুদ্রসীমা চুক্তি সম্পাদন করলে দেশ দুটি জলভাগের মাধ্যমে প্রতিবেশী হবে।
কিন্তু আদৌ কি চুক্তিটি করা সম্ভব? চুক্তিটির সম্ভাব্যতা কতটুকু? চুক্তিটি বাস্তবায়ন না হওয়ার কারণ কি? আসুন জেনে নেই।
১.
পূর্ব ভূমধ্যসাগরের অর্থনৈতিক সমুদ্রসীমা অঞ্চল নির্ধারণ নিয়ে উপকূলীয় দেশগুলোর মধ্যে বিরোধ অতি পুরানো। এরই মাঝে গত দুই যুগ ধরে পূর্ব ভূমধ্যসাগর অঞ্চলে একের পর এক গ্যাস ক্ষেত্রের আবিষ্কার দেশগুলোর মধ্যে বিরোধ ভয়াবহ তুলে এনেছে।
পূর্ব ভূমধ্যসাগরীয় দেশগুলো হলো :
১) তুরস্ক
২) গ্রিস
৩) লিবিয়া
৪) মিসর
৫) ফিলিস্তিন
৬) ইসরাইল
৭) লেবানন
৮) সিরিয়া
৯) গ্রিক সাইপ্রাস
১০) তুর্কি সাইপ্রাস।
সমুদ্রসীমা বণ্টন, গ্যাসের হিস্যা এবং গ্যাস পাইপলাইন নির্মাণ নিয়ে ইতোমধ্যে এই দেশগুলোর মধ্যে দুটি পক্ষের উদ্ভব হয়েছে।
'ইস্ট মেডিটেরিয়ান গ্যাস ফোরাম' নামে ইসরাইল, গ্রিস, মিসর, গ্রিক সাইপ্রাস, লেবানন একত্রিত হয়েছে। ভূমধ্যসাগরীয় দেশ না হলেও জর্ডানকে এই ফোরামে রাখা হয়েছে। এই ফোরামের লক্ষ্য হলো শুরু থেকেই তুরস্ককে বাইপাস করে গ্যাস পাইপলাইন নির্মাণ করা এবং তুরস্কের সমুদ্রসীমা একদম কমিয়ে দেয়া। আর এই লক্ষ্যে গ্রিস-মিসর, গ্রিস-গ্রিক সাইপ্রাস, ইসরাইল-মিসর, ইসরাইল-গ্রিক সাইপ্রাসের মধ্যে অর্থনৈতিক সমুদ্রসীমা চুক্তি (ইইজেড) সম্পন্ন হয়েছে। এই দেশগুলোর পারষ্পরিক চুক্তি সম্পাদনের ফলে লিবিয়া, তুরস্ক, তুর্কি সাইপ্রাস, ফিলিস্তিন কাগজে-কলমে ব্যাপক ক্ষতির শিকার হয় অর্থনৈতিক সমুদ্রসীমা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে।
অপরদিকে ২০২০ সালের শুরুতে তুরস্ক ও লিবিয়া পরস্পরের মধ্যে মেরিটাইম চুক্তি করে। এছাড়াও তুরস্ক ও তুর্কি সাইপ্রাসের মধ্যে মেরিটাইম চুক্তি রয়েছে। তুরস্ক, লিবিয়া, তুর্কি সাইপ্রাসের মধ্যে সম্পাদিত চুক্তিগুলো এবং মিসর, গ্রিস, গ্রিক সাইপ্রাস, ইসরাইলের মধ্যে সম্পাদিত চুক্তিগুলো পরষ্পরবিরোধী।
[* যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ সিরিয়া এখন পর্যন্ত কোনো পক্ষে যোগদান করেনি।]
অর্থাৎ কিছু কিছু সমুদ্র অঞ্চল একদিকে যেমন তুরস্ক-লিবিয়া-তুর্কি সাইপ্রাস জোট বলছে তাদের, অপরদিকে গ্রিস-গ্রিক সাইপ্রাস, ইসরাইল, মিসর বলছে- এসব অঞ্চল তাদের। দুই পক্ষের এই সংঘাতের কারণে গত দুই বছর ধরে নতুন করে পূর্ব ভূমধ্যসাগরে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে।
২.
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকার বাম দিকের সাথে মিসরের সমুদ্রসীমা চিহ্নিত হয়েছে দেশ দুটির মধ্যে করা এক চুক্তির মাধ্যমে। কিন্তু ফিলিস্তিনের সামনের দিকের সাথে কোনো দেশের এখনো সমুদ্রসীমা চুক্তি হয়নি।
ফিলিস্তিনের সামনের দিকটা বরাবর দুটি দেশের অবস্থান। তুরস্ক ও গ্রিক সাইপ্রাস।
গ্রিক সাইপ্রাসের সাথে ইসরাইলের সমুদ্রসীমার চুক্তি হওয়ায় গ্রিক সাইপ্রাস নতুন করে ফিলিস্তিনের সাথে চুক্তি করতে পারবে না। আর গ্রিক সাইপ্রাস সেটি চায় ও না। ঐতিহাসিক কারণে গ্রিক সাইপ্রাস ও ইসরাইল পরষ্পরের মিত্র। ফলে গ্রিক সাইপ্রাস কর্তৃক ফিলিস্তিনের সাথে চুক্তি কখনোই হবে না।
তাহলে ফিলিস্তিনের হাতে অপশন আছে শুধু একটিই। আর তা হলো তুরস্ক! কিন্তু তুরস্ক ও ফিলিস্তিনের অনেকটা মাঝ বরাবর রয়েছে গ্রিক সাইপ্রাস।
***
আন্তর্জাতিক সামুদ্রিক আইনের প্রাপ্ত আনুপাতিকতা, সাম্যতা, অদখলকৃত ও অন্যান্য ভূখণ্ডে সমুদ্রসীমা নির্ধারণের নীতির মাধ্যমে যদি সীমানা নির্ধারণ করা হয় তবে দেখা যায় যে তুরস্ক ও ফিলিস্তিন যথাযথভাবে একটি সমুদ্রসীমা তৈরি হওয়া সম্ভব। কারণ দেশ দুটির মধ্যে মুখোমুখি উপকূলীয় রেখা রয়েছে।
এখন প্রশ্ন হলো তুরস্ক ও ফিলিস্তিন যদি পারস্পরিক সমুদ্র সীমা চুক্তি করে তাহলে তো মাঝখানে পড়ে গ্রিক সাইপ্রাসের সমুদ্র সীমা কমে যাবে। কারণ গ্রিক সাইপ্রাসের অবস্থান হলো তুরস্ক ও ফিলিস্তিনের ঠিক মধ্যখানে। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী কি তাহলে তুরস্ক ও ফিলিস্তিনের মধ্যে অবিচ্ছিন্ন সমুদ্র সীমা সম্ভব? আর দুই বা ততোধিক দেশের মধ্যে সমুদ্রসীমা ওভারলেপ হলে কি ব্যবস্থা নেয়া হয়?
৩.
মূলত সমুদ্রসীমা সংক্রান্ত বিরোধগুলোর সমাধান হয় বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সম্মেলন, আন্তর্জাতিক সমুদ্র আদালতের রায় এবং পূর্বেকার সময়ে দুটি দেশের সমুদ্র সীমা নির্ধারণ করে দেয়ার ইতিহাস থেকে প্রাপ্ত নীতিগুলোর সংমিশ্রণে।
পূর্বেকার রেকর্ড থেকে দেখা যায়, সমুদ্রের উপর আধিপত্যের নীতিতে উপকূলকে সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দেয়া হয়। যে দেশটির উপকূলীয় দৈর্ঘ্য বেশি হবে তার সমুদ্রসীমা ও তত বেশি হবে। আর দুটি দেশের একটি যদি মূল ভূখণ্ডের হয় এবং অপরটি যদি দ্বীপ হয়, তবে দ্বীপের তুলনায় মূল ভূখণ্ডটি সমুদ্র সীমা প্রাপ্তিতে এগিয়ে থাকবে।
এই নীতিটির প্রয়োগ আন্তর্জাতির আদালতের বিভিন্ন রায়ে ও পরিলক্ষিত হয়েছে। এরকম একটি ঘটনা বর্ণনা করা হলো, যেখানে দেখা যায় বিরোধপূর্ণ সমুদ্রসীমা নির্ধারণে দ্বীপের তুলনায় মূল ভূখণ্ডের অগ্রাধিকার বেশি।
ক)
১৯৭৭ সালের ইউকে-ফ্রান্সের মধ্যবর্তী ইংলিশ চ্যানেলের সমুদ্র সীমা-সংক্রান্ত মামলা। ওই মামলায় দেখা যায়, ব্রিটিশ কিছু দ্বীপের অবস্থান ফ্রান্সের মূল ভূখণ্ডের নিকটে ছিল। ব্রিটেন ওই সময় তার মূল ভূখণ্ডকে বেইজ না ধরে তার দ্বীপগুলোকে বেইজ ধরে সমুদ্র সীমা টানতে চেয়েছিল। কারণ দ্বীপগুলোকে বেইজ ধরলে ব্রিটেনের অর্থনৈতিক সমুদ্র সীমা বাড়বে এবং ফ্রান্সের অর্থনৈতিক সমুদ্রসীমা একদম কমে যাবে।
কিন্তু আন্তর্জাতিক আদালতের রায়ে বলা হয় যে অর্থনৈতিক সমুদ্র সীমা নির্ধারণে দ্বীপের চেয়ে ও গুরুত্বপূর্ণ হলো মূল ভূখণ্ডের উপকূলীয় দৈর্ঘ্য। ফলে ফ্রান্স ও ব্রিটেনের মূল ভূখণ্ড ধরে অর্থনৈতিক সমুদ্র সীমা টানা হয়। এতে কিছু ব্রিটিশ দ্বীপ কিন্তু ফ্রান্সের অর্থনৈতিক সমুদ্রসীমাতেই পড়ে যায় তথা দ্বীপগুলো ব্রিটেনের হলেও আশেপাশের সমুদ্রসীমা ফ্রান্সের হয়। ( ইমেজ : ২ )
অর্থাৎ রায়ে এটি পরিলক্ষিত হয় যে দ্বীপগুলো কখনোই মূল ভূখণ্ডের উপরে প্রভাব রাখতে সক্ষম না।
এরকম আরো উদাহরণ রয়েছে, যেসব মামলায় রায় দেয়া হয় যে দ্বীপের চেয়ে ও মূল ভূখণ্ডের অগ্রাধিকার বেশি হবে অর্থনৈতিক সমুদ্র সীমা নির্ধারণের সময়। যেমন :
১৯৯৩ সালের ডেনমার্ক-নরওয়ে মামলা, ২০০১ সালের কাতার-বাহরাইন মামলা,১৯৯২ সালের কানাডা-ফ্রান্সের মামলা,২০০৯ সালের রোমানিয়া-ইউক্রেন মামলা, ২০১২ নিকারাগুয়া-কলম্বিয়া মামলা এবং ২০১৮ সালের নিকারাগুয়া-কোস্টা রিকার মামলা।
মূলত, এসব মামলা এটিই নির্দেশ দেয় যে অন্যান্য ভৌগোলিক বাস্তবতার তুলনায় (উদাহরণ দ্বীপপুঞ্জ) কোনো দেশের মূল ভূখণ্ড সমুদ্র সীমা প্রাপ্তিতে অগ্রাধিকার পাবে।
অতএব বলা যায়, অর্থনৈতিক সমুদ্রসীমা নির্ধারিত হবে মূল ভূখণ্ডের দেশটির উপকূলকে বেইজ ধরে, দ্বীপ অঞ্চল কখনোই মূল ভূখণ্ডের উপরে আধিপত্য রাখতে পারবে না। পাশাপাশি বলা যায়, কোনো দ্বীপ মূল উপকূলের বিপরীত পাশে অবস্থান করা দুইটি দেশের সমুদ্র সীমাকে বিচ্ছিন্ন করতে পারবে না।
সুতরাং, গ্রিক সাইপ্রাসের মতো একটি দ্বীপ দুটি মূল ভূখণ্ডের ( তুরস্ক ও ফিলিস্তিন ) মধ্যে অবস্থান করলে ও গ্রিক সাইপ্রাসের পক্ষে দেশ দুটি'কে বিচ্ছিন্ন করা সম্ভব হবে না (যদি ফিলিস্তিন ও তুরস্ক পারষ্পরিক সমুদ্র সীমা সংক্রান্ত চুক্তি সাক্ষর করে)।
আরো উদাহরণ হতে পারে যে গ্রিক দ্বীপ রোডসের অবস্থান যদিও তুরস্ক ও লিবিয়ার মূল ভূখণ্ডের মাঝে কিন্তু রোডস দ্বীপ কর্তৃক তুরস্ক ও লিবিয়াকে বিচ্ছিন্ন করা আন্তর্জাতিক আইনে সম্ভব না। কারণ রোডস দ্বীপের চেয়েও মূল ভূখণ্ড তুরস্ক ও লিবিয়ার সুপ্রিমিটি বেশি।
তির্যক রেখার ব্যবহার :
সমুদ্র অঞ্চলগুলির সীমানা নির্ধারণের সময় তির্যক রেখার ব্যবহার বিশ্বজুড়ে একটি সাধারণ প্রক্রিয়া। পৃথিবীর আকৃতি ঢালু হওয়ার কারণে তির্যক রেখা ব্যবহার করা হয়। কারণ তির্যক রেখা না টেনে যদি সমান করে রেখা টানা হয় তবে পৃথিবীর ঢালু আকৃতির জন্য রেখাটি আর সাম্যবস্থায় থাকবে না। ফলে সমুদ্র সীমা নির্ধারণে প্রায়ই তির্যক রেখা ব্যবহৃত হয়। তাই প্রায় সময়ই বিরোধপূর্ণ সমুদ্র সীমা সংক্রান্ত চুক্তির সময় সরলরেখার পরিবর্তে সরু তির্যক রেখাগুলি প্রয়োগ করতে দেখা যায়, ২০০০ সালে ওমান ও পাকিস্তান এবং ২০১৫ সালে ফ্রান্স ও ইতালির মধ্যে সমুদ্র সীমা নির্ধারণে তীর্যক রেখা ব্যবহৃত হয়েছে।
৪.
তুরস্ক ও লিবিয়া যেভাবে তির্যক রেখা ব্যবহার করে অর্থনৈতিক সমুদ্র সীমা অঞ্চল (ইইজেড ) প্রতিষ্ঠা করেছে, ঠিক সেভাবে তুরস্ক ও ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ চাইলেও দু'দেশের মধ্যে ইইজেড প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব।
তুরস্কে নিয়োজিত ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রদূত তুরস্ককে প্রস্তাব দেন, দু'দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক সমুদ্র সীমার চুক্তি স্বাক্ষর করার জন্য। কিন্তু তুরস্ক কর্তৃপক্ষ এখনো সরাসরি কিছু বলেনি। যদি তুরস্ক কর্তৃপক্ষ ইচ্ছে পোষণ করে, তবে বর্তমানে ফিলিস্তিন এবং তুরস্কের মধ্যে নিরবিচ্ছিন্ন সমুদ্র সীমা অর্জন করা সময়ের ব্যাপার।
কিন্তু তুরস্ক কেনো কালক্ষেপণ করছে?
ভৌগোলিক বাস্তবতায় ফিলিস্তিন ও তুরস্কের মধ্যে চুক্তি করা সম্ভব হলেও রাজনৈতিক দিক থেকে চুক্তিটা টেকসই হবে না।
কারণ ফিলিস্তিনের প্রতিবেশী ইসরাইল, গ্রিক সাইপ্রাস ও মিসর- কেউই তুরস্কের মিত্র না। ফলে তুরস্ককে এই অঞ্চলে আধিপত্য এনে দিবে, এমন চুক্তি বাস্তবায়ন করতে মিসর-ইসরাইল-গ্রিক সাইপ্রাস অক্ষ দেবে না। পাশাপাশি পূর্ব ভূমধ্যসাগরের অপেক্ষাকৃত শক্তিশালী দেশ গ্রিস বরাবরই তুরস্কের বিরুদ্ধে রয়েছে।
বর্তমানে পূর্ব ভূমধ্যসাগরে তুরস্কের মিত্র হিসেবে রয়েছ লিবিয়া, তুর্কী সাইপ্রাস এবং ফিলিস্তিন। এদের মধ্যে একটা মিত্রও টেকসই না। লিবিয়ায় দুইটা সরকার বিদ্যমান (যদিও আন্তর্জাতিক ভাবে স্বীকৃত সরকারটি তুরস্কের পক্ষে)। ভঙ্গুর লিবিয়ান সরকার তুরস্ককে ভালো ব্যাকআপ দিতে পারবে না।
তুর্কি সাইপ্রাস আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত কোনো রাষ্ট্র নয়। শুধুমাত্র তুরস্ক একে স্বীকৃতি দিয়েছে। আর ফিলিস্তিন ও জাতিসঙ্ঘের রাষ্ট্র নয়৷ ফলে ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের সাথে এমন চুক্তি করতে গেলে তুরস্কের রিস্কটা বেশি হবে।
মোট কথা, ভূমধ্যসাগরে তুরস্কের মিত্র হিসেবে কোনো শক্তিশালী দেশ নেই। ফলে তুরস্ক চাইলেও অনেক ন্যায্য চুক্তি এই অঞ্চলে করতে পারবে না।
৫.
মিসরের সম্মতি বদলে দিতে পারে সম্পূর্ণ পরিস্থিতি!
মিসর ভূমধ্যসাগরের শক্তিশালী দেশগুলোর একটি। বর্তমানে মিসর, ইসরাইল, গ্রিস ও গ্রিক সাইপ্রাস সমুদ্রসীমা সংক্রান্ত চুক্তিতে জোটবদ্ধ অবস্থায় রয়েছে।
কিন্তু ফিলিস্তিনীদের দুর্ভোগ দেখে যদি মিসরীয় কর্তৃপক্ষের সদিচ্ছা জাগে, তখন তুরস্ক ও ফিলিস্তিনের পক্ষে সমুদ্র সীমা চুক্তি সম্পাদন করা একদম সহজ হয়ে যাবে। কারণ মিসরের, তুরস্ক এক হলে এই দুই দেশের যুগপৎ বিরোধিতা করা ইসরাইল, গ্রিস, গ্রিক সাইপ্রাসের জন্য অসম্ভবই।
আর মিসর যদি তুরস্কের সাথে মিত্রতা গ্রহণ করে, সেক্ষেত্রে মিসরের সমুদ্রসীমা ও অনেকটুকু বাড়বে। গ্রিস ও গ্রিক সাইপ্রাসের সাথে করা চুক্তিতে মিসর তেমন সমুদ্রসীমা লাভ করেনি। কিন্তু মিসর যদি তুরস্কের সাথে সমুদ্রসীমা চুক্তি করে অথবা তুরস্ক ও ফিলিস্তিনের সমুদ্রসীমা চুক্তি মেনে নেয়, সেক্ষেত্রে মিসরের ভাগে সমুদ্র এরিয়া অনেক বেড়ে যাবে।
এছাড়া গাজা উপকূলে বিরাট গ্যাসের মজুদ রয়েছ। কিন্তু ইসরাইলের অবরোধের কারণে গ্যাস উত্তোলন করতে সক্ষম হচ্ছে নয় ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষ। তুরস্ক-ফিলিস্তিন সমুদ্রসীমা চুক্তি বাস্তবায়ন হলে ইসরাইলি অবরোধ প্রত্যাহারের একটা সুযোগ তৈরি হবে। আর তখন গাজা উপকূল থেকে ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষ গ্যাস উত্তোলন করতে সক্ষম হবে।
মধ্যপ্রাচ্যে তুর্কি প্রভাব ঠেকাতে মিসর-সৌদি-আমিরাত বহু দিন ধরেই সক্রিয়। আর এজন্য এই জোটের কিছু দেশ ইসরাইলের সাথেও সম্পর্ক রেখে চলছে নিজেদের শক্তি বৃদ্ধি করতে। অপরদিকে তুরস্ক ও সরাসরি ইসরাইলের বিরোধিতায় নামতে চাচ্ছে না। কারণ ভূমধ্যসাগর ও মধ্যপ্রাচ্যে তুরস্কের কোনো শক্তিশালী মিত্র নেই।
বর্তমানে ফিলিস্তিনের দুর্ভোগ দেখে যদি অতীতের সবকিছু ভুলে মিসর ও তুরস্ক মিত্রতায় আসে, তবে ফিলিস্তিনের গাজাবাসীর ভাগ্য অনেকটাই বদলে যাবে। ফিলিস্তিন-তুরস্ক সমুদ্রসীমা চুক্তি একবার সম্পাদন হতে পারলে গাজাকে অবরুদ্ধ রাখা ইসরাইলের পক্ষে আর সম্ভব নয়।
এই চুক্তি সম্পাদিত হতে পারলে গাজাবাসীর পাশাপাশি তুরস্ক ও মিসরেরও লাভবান হওয়ার সুযোগ আছে। তখন ভূমধ্যসাগরে তুরস্ক ও মিসরেরও সমুদ্রসীমা বাড়বে।
কিন্তু সবকিছুই নির্ভর করছে মিসরের সম্মতির ওপর। মিসর যদি তুরস্কের প্রতি বৈরী ভাব বজায় রাখে, তবে তুরস্ক-ফিলিস্তিন সমুদ্র সীমা চুক্তি বাস্তবায়ন কখনোই সম্ভব হবে না। আরো একবার ঝুলে যাবে গাজাবাসীর ভাগ্য বহু দিনের জন্য।