শিশুদের রক্ষায় গাজাবাসীর নতুন কৌশল
গাজার শিশু - ছবি : সংগৃহীত
সবাই জানি, কিভাবে পশ্চিমা নিউজ মিডিয়া প্রো-ইসরাইলি পক্ষপাতিত্বপূর্ণ খবর প্রকাশ করে, কিভাবে ফিলিস্তিনিদের দুর্ভোগকে স্পর্শকাতরহীন করে। তারা গাজা না বলে বলবে, হামাস কন্ট্রোল্ড গাজা বলে। গাজার হেলথ মিনিস্ট্রি না বলে বলে হামাস কন্ট্রোল্ড গাজার হেলথ মিনস্ট্রি থেকে মৃতের সংখ্যা পাওয়া গেছে বলে খবর প্রকাশ করে। আর হামাসের পরিচয় হচ্ছে 'ইউএস ডেজিগনেটেড টেরোরিস্ট অর্গানাইজেশান।' ভাবখানা দেখায়, গাজায় যাই হচ্ছে তা হামাসের টেরোরিজমের জন্য হচ্ছে। ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু আক্রমণ করার জন্য নিজেই প্রথম-দ্বিতীয়-তৃতীয় চাল চালেন, কিন্তু তার জন্য হামাসকে দায়ী করা হয়। ডিফ্যাক্টো প্রমাণ করতে চায়, গাজাবাসীরা সবাই টেরোরিস্ট। কারণ, তারা গাজায় হামাসকে নির্বাচনে জয়ী করেছে। ইসরাইলের কারণে আসন্ন যে নির্বাচন পিছিয়ে গেছে সেখানেও বিপুল ভোটে হামাসের জয়ী হওয়ার কথা ছিল।
***
সোশ্যাল মিডিয়াতেও ফিলিস্তিনি এক্টিভিস্টদের একাউন্ট কড়া নজরদারিতে, আবার কারো কারো ইতিমধ্যে ডিএক্টিভেট করে দেয়া হয়েছৈ। তাদের দেয়া কন্টেন্ট সরিয়ে ফেলা হয়েছে। এসবের জন্য সোশ্যাল মিডিয়ার যে এলগরিদম, সেখানে কিছু মূল শব্দকে তারা ডিটেক্ট করে পোস্টদাতাকে হুঁশিয়ারি পাঠাচ্ছে, আর পরপর কয়েকবার হুঁশিয়ারি গেলে একাউন্ট বাজেয়াপ্ত হয়ে যাচ্ছে। ইন্সটাগ্রাম থেকে শুরু করে ফেসবুকে এমন নৈরাজ্য চলছে।
এর থেকে উত্তরণের জন্য এরাবিক রাইটিং এক্টিভিস্টেরা পুরাতন এক পদ্ধতি গ্রহণ করেছেন। এটি ১৫০০ বছরের পুরাতন পদ্ধতি। তারা কুরআনিক আরবিতে এখন পোস্ট লিখছেন, যা আধুনিক আরবি নয়। বর্ণমালার ওপর নিচে কোনো ডট ব্যবহার করছে না। একে শনাক্ত করার এলগরিদম সোশ্যাল মিডিয়া এখনো ইমপ্লিমেন্ট করেনি।
***
পর পর অনেক পরিবারের সকল সদস্য ইসরাইলি বোমা হামলায় একইসাথে নিহত হওয়ার পর তারা শহরের ভিন্ন ভিন্ন জায়গায় ভিন্ন ভিন্ন পরিবারের সাথে বাচ্চা বদলাবদলি করছে। যাতে বোমার আঘাতে সবাই একই সাথে নিশ্চিহ্ন হয়ে না যায়।
***
গাজাবাসীরা কতটা অসহায় হয়ে পড়েছে তা না ভিতরের ডিটেইলস খবর না জানলে নিজেদের খবর মিডিয়া থেকে জানার কোনো উপায় নাই। এর জন্য অবশ্য আমরা সোশাল মিডিয়া আর সেল ফোনকে ধন্যবাদ দিতেই পারি।
***
আজ আবার বাইডেন সরকার নেতানিয়াহুকে সিরিয়াস ডিএস্কিলেশানের জন্য আহবান করেছে। জাতিসঙ্ঘ সিকিউরিটি কাউন্সিল যুদ্ধ থামানোর জন্য রেজ্যুলুশান আনতে জানছে সহসা। এই রেজ্যুলুশানের উদ্যোক্তা ফ্রান্স আর মিসর। আমেরিকা ভেটো না দিলে এটা পাস হয়ে যাবে। আর ভেটো দিলে বাইডেনের ফরেইন পলিসির ক্রেডেনশিয়াল বিশ্ব মঞ্চে সিরিয়াসভাবে ড্যামেজড হবে। তাই বাইডেন সিরিয়াসলি চাচ্ছে ইসরাইল এবার থামুক।
***
এই পুরা ডিপ্লোম্যাসিতে দুজন লিডারের সাথে আর কোনো দেশ যোগাযোগ করছে না। বিশেষ করে সেসব দেশ যারা এখন ফিলিস্তিন আর ইসরাইলের মাঝে মধ্যস্ততা করছে। এই দুই নেতা হলেন ফিলিস্তিন অথোরিটির মাহবুব আব্বাস আর তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগান।
***
যদিও ফিলিস্তিন অথোরিটির শাসনাধীন ওয়েস্ট ব্যাংকের অন্যান্য শহরে গাজাবাসীর পক্ষে বিক্ষোভ হচ্ছে, কিন্তু তা নিয়ে কারো কোনো মাথাব্যথা নেই। আর বাইডেনের সাথে এরদোগানের সিরিয়াস ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব আছে বলে আমি বিশ্বাস করি। ওবামার আমলে বাইডেনের দায়িত্ব ছিল তুরস্ককে হ্যান্ডেল করার, আর ওই সময় এরদোগানের সাথে বাইডেনের বেশ কিছু বিবাদ হয়েছে। আমার ধারণা, বাইডেন টুক ইট পার্সোনালি, আর তার জের ধরেই বাইডেন এখন তুরস্ককে হেয় করার কোনো চান্স মিস করেন না। বাইডেন আমেরিকান ইমিগ্র্যান্ট জামাল খাশোগির হত্যার হুমকিদাতা এমবিএসকে হলুদ কার্ড দিয়ে আমেরিকার ফরেইন পলিসির মাঠে রেখেছে, কিন্তু এরদোগান লাল কার্ড পেয়ে এখনো মাঠের বাইরে।
কিন্তু তাই বলে এরদোগান আমি খেলব না বলে মাঠের বাইরে বসে নেই। এরদোগান জাতিসঙ্ঘ সাধারণ পরিষদের সদস্য দেশগুলোর সাথে কূটনৈতিক প্রয়অস জোরদার করে ইসরাইলের বিরুদ্ধে সবাইকে নিয়ে এগুচ্ছে। এতে যা হবে তা হলো ইসরাইলের হামলা থামার পর তুরস্কসহ অন্যান্য রাষ্ট্র গাজাবাসীদের সাহায্যে এগিয়ে আসবে, যাতে ইসরাইল পুরাপুরি বাধা দিতে পারবে না। ইনফ্রাস্ট্রাকচার গড়ে উঠবে, আহত গাজাবাসী চিকিৎসার জন্য তুরস্কে যেতে পারবে। বিদ্যুত-বিশুদ্ধ পানি-ক্রিটিক্যাল ওষুধ গাজায় ঢুকবে।