হজরত ওমর যেভাবে জয় করেছিলেন বাইতুল মুকাদ্দাস

মোহাম্মদ শরীফ | May 19, 2021 06:26 pm
বাইতুল মুকাদ্দাস

বাইতুল মুকাদ্দাস - ছবি : সংগৃহীত

 

খলিফাতুল মুসলিমিন হজরত ওমর রা: যখন মুসলমানদের প্রাণকেন্দ্র বাইতুল মুকাদ্দাস জয় করার জন্য বের হচ্ছিলেন, সে সময় তার পরিহিত জামায় ১৭টি তালি লাগানো ছিল। আর কেনই বা এমন কাপড় পড়বেন না। রাসূলে আরাবি সা:-এর জামা মুবারকেও তো অনেক তালি লাগানো ছিল। আর সে তালিগুলোর বেশির ভাগ ছিল চামড়ার। প্রিয় নবী সা:কে একবার জিবরাইল আমিন এসে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি যদি চান তাহলে আপনার জন্য মদিনার এই ওহুদ পাহাড়কে স্বর্ণ বানিয়ে দেয়া হবে। প্রিয় নবীজী মুচকি হেসে জবাব দিলেন- ‘না, তার প্রয়োজন নেই। বরং আমি এভাবে জীবনযাপনে করতে ভালোবাসি যে, এক বেলা খাবো আর দুবেলা উপবাস থাকব।’ প্রিয় নবীজী সা: দুনিয়ার ধন-দৌলতকে প্রত্যাখ্যান করে ক্ষুধার্ত থাকাকে বেছে নিয়েছিলেন।

নবীজী বলতেন, ‘ক্ষুধার্ত থাকা হচ্ছে আমার উম্মতের গৌরব! সাহাবিরা রাসূলের জীবনের প্রতিটি কাজকে হুবহু অনুসরণ করেছেন। খলিফা ওমর রা: যখন তালিযুক্ত জামা পরিহিত অবস্থায় রওনা হয়েছিলেন, সাহাবিদের মধ্য থেকে কেউ হজরত আলী রা:কে বললেন, হজরত ওমর রা:কে বলুন- অন্তত আজকের দিনে তালিযুক্ত কাপড় খুলে একটু ভালো কাপড় পরিধান করার জন্য। কারণ তিনি ইহুদি-খ্রিষ্টানদের দেশে যাচ্ছেন। তারা হয়তো খলিফাতুল মুসলিমিনকে দেখে বিরূপ মন্তব্য করতে পারে। তারা এই বলে তিরস্কার করতে পারে যে, মুসলমানরা তাদের খলিফার জন্য একজোড়া ভালো কাপড়ের ব্যবস্থাও করতে পারেনি। আপনি খলিফা ওমর রা:কে বুঝিয়ে বলুন।

সাহাবিদের পীড়াপীড়িতে হজরত আলী রা: কথাটি বলার জন্য হজরত ওমরের কাছে গেলেন, কিন্তু এমন কথা বলার সাহস পেলেন না। কারণ ওমর রা: এমনিতেই কড়া মেজাজের! তারপরও এমন স্পর্শকাতর বিষয়ে মুখটাই বা খুলবেন কিভাবে। অনেক চেষ্টা করলেন কিন্তু কোনোভাবেই বলতে পারলেন না। ফিরে এলেন সাহাবিদের কাছে। নিজের অপারগতা প্রকাশ করলেন। হজরত আলী রা: বললেন, আমি যখন বলার জন্য খলিফার কাছে গিয়েছি তখন কথা বলার শক্তি হারিয়ে ফেলেছি।

এবার সাহাবিরা পরামর্শ করলেন, তাহলে এ কথা খলিফার কাছে কে বলতে পারে? সবাই মনে করলেন, আম্মাজান আয়েশা রা: এবং হাফসা রা: বলতে পারবেন। সবাই মিলে হজরত হাফসা রা:-এর কাছে গেলেন। হজরত হাফসা রা: বললেন, ‘আমি রাসূলুল্লাহ সা:-এর স্ত্রী এবং খলিফা ওমরের মেয়ে। কিন্তু আমার পিতাকে এ কথা বলার সাহস আমার নেই। আমি এ কথা বলতে পারব না। হজরত আয়েশা রা: বলতে পারবেন।’ সাহাবায়ে কেরাম হজরত আয়েশার কাছে দরখাস্ত করলেন। অতঃপর তিনি হজরত ওমর রা:কে ডেকে পাঠালেন। হজরত ওমর রা: আম্মাজান আয়েশা রা:-এর পয়গাম পাওয়ার সাথে সাথেই উপস্থিত হলেন।

ভারত উপমহাদেশের বিখ্যাত হাদিস বিশারদ শাহ ওয়ালিউল্লাহ মুহাদ্দিসে দেহলভী রহ: একটি গ্রন্থে লিখেছেন- হজরত ওমর রা: আম্মাজান আয়েশা রা:-এর সামনে দোজানু হয়ে বসে পড়েন। আম্মাজান বললেন, ‘আমিরুল মুমিনিন! আপনি যেহেতু খ্রিষ্টানদের রাজ্যে যাচ্ছেন। এই জন্য আপাতত এই তালিযুক্ত পোশাক পরিবর্তন করে অন্য একটি ভালো জামা পরিধান করুন। আম্মাজান আয়েশা রা:-এর কথা শেষ হতে না হতেই খলিফাতুল মুমিনিন কেঁদে ফেললেন। তিনি হজরত আয়েশা রা:কে বললেন, ‘আম্মা আপনি কি আমাকে রাসূলে আরাবি সা:-এর কাছ থেকে দূরে সরিয়ে দিতে চাচ্ছেন? আপনার কি রাসূলের সাথে কাটানো সেই দিনগুলোর কথা মনে নেই যে, দিনের পর দিন নবীজী সা: উপবাস থেকেছেন, তিন দিন পর্যন্ত নবীজীর চুলায় আগুন জ্বলেনি। আম্মাজান আপনার কি সেই দিনগুলোর কথা মনে নেই যে, নবীজী সা: তালিযুক্ত কাপড় পরিধান করেছেন। আম্মাজান! ওমর এই ছেঁড়া-ফাড়া তালিযুক্ত পোশাক পরে যে স্বাদ অনুভব করে তা বুঝানো সম্ভব নয়। ওমর অন্যকিছুতে আর এমন স্বাদ অনুভব করে না।’

সিরাতের কিতাবসমূহে লিপিবদ্ধ রয়েছে যে, খলিফা হজরত ওমর রা: যখন রাসূল সা:-এর অসহায়ত্বের কথা আলোচনা করছিলেন, আম্মাজান আয়েশা এবং আম্মাজান হাফসা রা: দুজনেই অঝোরে কাঁদছিলেন। অতঃপর খলিফাতুল মুসলিমিন হজরত ওমর রা: তালিযুক্ত কাপড় পরিধান করেই মুসলমানদের প্রাণকেন্দ্র বাইতুল মুকাদ্দাস বিজয়ের জন্য বের হন।

শিক্ষার্থী : আল-জামিয়াতুল ইসলামিয়া হামিউসসুন্নাহ মেখল হাটহাজারী, চট্টগ্রাম


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us