হঠাৎ বদলে যেতে পারে মধ্যপ্রাচ্যের সমীকরণ
হঠাৎ বদলে যেতে পারে মধ্যপ্রাচ্যের সমীকরণ - ছবি : সংগৃহীত
আয়াতুল্লাহ খামেনির ভবিষ্যদ্বাণী অনুসারে, ইসরাইলের ১৯ বছর বাকি রয়েছে, কিসিঞ্জারের মত অনুযায়ী, এটি ঘটবে এক বছর পরে। আপাত দৃষ্টিতে এসব কথাবার্তাকে ‘অবান্তর কল্পনার স্বর্গে বসবাস’ মনে হতে পারে। কিন্তু এবারের শেখ জাররাহ থেকে ফিলিস্তিনিদের উৎখাত প্রচেষ্টা, মসজিদুল আকসায় হামলা এবং গাজার সাথে ইসরাইলের যুদ্ধে মনে হচ্ছে, ভেতর থেকেই ইসরাইলে ক্ষয় এবং কিছু পরিবর্তন অনিবার্য হয়ে উঠছে।
কিসিঞ্জার-খামেনি-শিন বেত প্রধানের ভবিষ্যদ্বাণী
সাবেক আমেরিকান পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার এবং ইরানের শীর্ষ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির ইসরাইল-ফিলিস্তিন নিয়ে মন্তব্য বেশ কয়েক বছর আগের। ড: কিসিঞ্জার বলেছিলেন ৯ বছর আগে, আর খামেনি বলেছিলেন ২০১৫ সালে। ইরানের সুপ্রিম লিডার খামেনি ২০১৫ সালে প্রথম উল্লেখ করেন যে, ইসরাইল পরবর্তী ২৫ বছর দেখবে না। ২৫ বছরে জায়নবাদী সরকার বলে কিছু থাকবে না। তেহরান এবং বিশ্বশক্তি ৫+১ এর মধ্যে পরমাণু সংক্রান্ত যে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল, তখনই এই মন্তব্য প্রকাশ করা হয়েছিল।
ইরানি নেতারা অতীতেও এ ধরনের কথা বলেছিলেন। ইরানের সাবেক রাষ্ট্রপতি মাহমুদ আহমাদিনেজাদ ১০ বছর আগে বলেছিলেন, ‘জেরুসালেম দখলকারী ইসরাইলের সরকারকে অবশ্যই সময়ের পাতায় বিলুপ্ত হতে হবে।’ পশ্চিমা গণমাধ্যম এ সময় এটিকে ভুল অনুবাদ করে প্রকাশ করেছিল ‘ইসরাইলকে অবশ্যই মানচিত্র থেকে মুছে ফেলতে হবে।’ মূল উক্তিটি আসলে ছিল ইরানের ইসলামী প্রজাতন্ত্রের প্রতিষ্ঠাতা আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ খোমেনির। ২০১৬ সালে খামেনির ওয়েবসাইটে এটি আনুষ্ঠানিকভাবে পোস্ট করা হয় এবং ইরানের সেনাবাহিনী প্রধান মেজর জেনারেল আবদুল্লাহিম মৌসাভী ২০১৭ সালে এই কথার পুনরাবৃত্তি করেন। আর এখনকার ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ইরানের সংবাদমাধ্যমগুলো মন্তব্য করছে ‘অবৈধ জায়নবাদী শাসনের পতনের লক্ষণ প্রকট হয়ে উঠেছে। ফিলিস্তিনের পক্ষে ক্ষমতার ভারসাম্য পরিবর্তনের আশান্বিত হবার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।’
প্রকৃতপক্ষে, ইরানের শীর্ষ নেতারা ইসরাইল রাষ্ট্রের পতনের ভবিষ্যদ্বাণীকারী প্রথম ব্যক্তি নন। ইহুদি বংশোদ্ভূত কৌশলবিদ এবং প্রায় শতবর্ষী, সাবেক আমেরিকান পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার ২০১২ সালে বলেছিলেন, ‘পরবর্তী দশ বছর ইসরাইল থাকবে না।’ ইসরাইলি পত্রিকা ‘হারেত্জ’-এ মন্তব্যটির কথা উল্লেখ করা হয়। টাইমস অফ ইসরাইল অবশ্য দাবি করে যে, কিসিঞ্জার কখনো এই বক্তব্য দেননি।
ইয়ুদিওথ আহরনোত্ পত্রিকায় গত ফেব্রুয়ারিতে মতামত কলামে ইসরাইলের গোয়েন্দা সংস্থা শিন বেতের সাবেক প্রধান ইউভাল দিসকিনও অনুতাপ করে লিখেছেন, ‘ইসরাইল পরবর্তী প্রজন্মের জন্য থাকবে না।’ তিনি অবশ্য সুনির্দিষ্টভাবে বছর উল্লেখ করেননি। দিসকিন বিশদভাবে বলেন, ‘আমি ইরানি পারমাণবিক হুমকি, হিজবুল্লাহর ক্ষেপণাস্ত্র বা চরমপন্থী মৌলবাদী ইসলামের কথা বলছি না। জনসংখ্যা, সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রবণতা সম্পর্কে কথা বলছি যা ইতোমধ্যে রাষ্ট্রের মর্ম পরিবর্তন করে চলেছে এবং যা এর অস্তিত্বকে বিপন্ন করতে পারে বলে অভিহিত করছি এখনকার প্রজন্মকে। পরবর্তী ৪০ বছরে, দেশের প্রায় অর্ধেক নাগরিক অতি-গোঁড়া ও আরব হবে। এটি রাষ্ট্রের জন্য একটি সুস্পষ্ট নিরাপত্তা উদ্বেগ; কারণ উভয়ই বিশেষভাবে ইহুদিবাদবিরোধী প্রবণতায় চালিত।’
ইসরাইলের জনসংখ্যাতাত্ত্বিক ‘টাইম বোমা’ তত্ত্বটি নিয়ে বছরের পর বছর ধরে বিভিন্ন ফোরামে আলোচনা করা হয়েছে। বিশেষত যখন কেউ গাজা আর দখলকৃত পশ্চিম তীরের সম্মিলিত জনসংখ্যার কথা বিবেচনা করেন এবং তার সাথে ইসরাইলের ২১ শতাংশ আরব নাগরিক জনসংখ্যা যোগ করা হয় তখন এই উদ্বেগ প্রকট হয়ে ওঠে ইসরাইলিদের মধ্যে। বলা হয়, ইসরাইল একই সাথে ইহুদি সংখ্যাগরিষ্ঠ রাষ্ট্র এবং গণতন্ত্র উভয়ই হতে পারে না। আর যদি এটি উভয়ই না হতে পারে তবে ইসরাইল প্রতিষ্ঠার জায়নিস্ট স্বপ্নের অবসান হবে।
নতুন উত্তেজনা
অনলাইনে দ্রুত ছড়িয়ে পড়া চলমান ঘটনার সর্বশেষ ফুটেজ এ দেখা গেছে, আরব ইসরাইলি যুবকরা উত্তর ও মধ্য ইসরাইলি শহরগুলোজুড়ে অভূতপূর্বভাবে বিক্ষোভে অংশ নিচ্ছে। তারা নিজেদের ফিলিস্তিনি জাতীয় পরিচয়ে একাত্ম হচ্ছে। এই আরব ইসরাইলিরা ১৯৪৮ সালে ইসরাইলের নাগরিকত্ব নিয়ে রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে সম্পৃক্ত হয়েছিলেন। ইসরাইলের গত সংসদেও তাদের ১৫ জন সদস্য ছিলেন। বিভক্ত হয়ে নির্বাচন করায় এই সংখ্যা এবার কিছুটা কমে এসেছে। আরব ফিলিস্তিনিদের ভূমি থেকে উৎখাত করার চলমান কাজকে তারাও নিজেদের অস্তিত্বের জন্য হুমকি হিসেবে বিবেচনা করছেন। ফলে ইসরাইলের আরব শহরগুলোতেও বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে।
নতুন সঙ্ঘাতে সোশ্যাল মিডিয়ার ভিডিওতে দেখা গেছে, ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন ‘হামাস’ আজ অবধি তার বৃহত্তম এবং সবচেয়ে ব্যাপক প্রতিশোধমূলক আক্রমণ চালিয়েছে ইসরাইলে। ফিলিস্তিনের তথ্য কেন্দ্র জানিয়েছে, বিশাল রকেট উৎক্ষেপণের মাত্র পাঁচ মিনিটের মধ্যে তা ইসরাইলি শহরগুলোর দিকে উড়ে আঘাত হেনেছে। তেল আবিবকে লক্ষ্য করে হামলার ফুটেজগুলোও প্রকাশ পেয়েছে। গাজায় মারাত্মক ইসরাইলি বিমান হামলায় বেসামরিক ভবনগুলোকে টার্গেট করার পরে হামাস শপথ করেছে যে, তারা আরো বড় আকারের হামলা চালাবে। হামাসের রকেট হামলা প্রতিহত করতে না পারায় ইসরাইলের খ্যাতিমান আয়রন ডোম প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাটি প্রশ্নের মুখে পড়েছে। গাজা থেকে চালিত প্রথম সাতটি রকেটের মধ্যে কেবল একটিকে এটি বাধা দিতে সক্ষম হয়েছে।
অবরুদ্ধ হামাসের রকেট হামলার ক্ষেত্রে ইসরাইলের প্রস্তুতি সম্পর্কে গুরুতর প্রশ্ন উত্থাপন হয়েছে দেশটিতে। এই অবস্থায় উত্তর সীমান্তের আরো শক্তিশালী হিজবুল্লাহ যুদ্ধে জড়ালে পরিস্থিতি আরো বিপজ্জনক হতে পারে। এর মধ্যে ইয়েমেনের আনসারাল্লাহ আন্দোলনের নেতা আবদুল মালিক আল-হাউথি ফিলিস্তিনিদের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করার কথা এবং তাদের প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানিয়েছেন।
ইসরাইল পারমাণবিক অস্ত্রধারী রাষ্ট্র হওয়া সত্ত্বেও প্রতিপক্ষের সাধারণ প্রযুক্তির অস্ত্রের প্রতিরোধেই ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। একটি ‘ভুল’ সিরিয়ান ক্ষেপণাস্ত্র গত মাসে ইসরাইলের সুরক্ষিত আকাশসীমা পেরিয়ে ডিমোনা পারমাণবিক চুল্লি সাইটের কাছাকাছি পৌঁছে যায়।
সম্ভবত কেউ ইসরাইল ও ফিলিস্তিনিদের মধ্যে এই আকস্মিক, সহিংস সংঘর্ষের প্রত্যাশা করেনি। পূর্ব জেরুসালেমের বিক্ষোভ থেকে শুরু করে ইসরাইলে গণ রকেট হামলা এবং গাজায় ইসরাইলি প্রতিশোধমূলক বিমান হামলায় কয়েক দিনের মধ্যে নতুন পরিস্থিতি দেখা যাচ্ছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেনের প্রশাসনের জন্যও এটি অবাক করা বিষয় হতে পারে। তারা ইসরাইল-ফিলিস্তিন প্রশ্নে হাত গুটিয়ে নেয়ার কৌশল নিয়ে বলেছিলেন, এটি আর বৈশ্বিক সমস্যা নয়। তবে ফিলিস্তিনের পরিস্থিতি ক্রমবর্ধমানভাবে অস্থিতিশীল হয়ে উঠছে এবং দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধানের আশা মরে যাওয়ার পরেও যুক্তরাষ্ট্র ইসরাইলকে সশস্ত্র এবং রাজনৈতিক বিষয়গুলো উপেক্ষা করে বছরের পর বছর কাটিয়েছে। তারপরে ট্রাম্পের ‘আব্রাহাম অ্যাকর্ডস’ এবং উদ্ভট তথাকথিত শান্তি পরিকল্পনা পরিস্থিতিটিকে আনুষ্ঠানিকভাবে সামনে নিয়ে আসে।
ওয়াশিংটন হামাসকে দোষারোপ করছে। যুক্তির খাতিরে বলা যায়, ইসরাইলি বেসামরিক নাগরিকদের ওপর হামাসের রকেট হামলা চালানো ন্যায়সঙ্গত নয়। তবে ইসরাইলিরাও বিমান হামলা করে বহু বেসামরিক নাগরিককে হত্যা করছে। কেবল গত কয়েক দিনেই ২০০ জনের মতো মারা গেছে। এভাবে কেবল একদিকের সহিংসতার নিন্দা করা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য রাজনৈতিক সমাধান খুঁজে পেতে সহায়তা করবে না বলে মন্তব্য করেন আটলান্টিক কাউন্সিলের সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজি অ্যান্ড সিকিউরিটির নিউ আমেরিকান এনগেজমেন্ট ইনিশিয়েটিভের সিনিয়র ফেলো এমা অ্যাশফোর্ড।
তিনি উল্লেখ করেন, স্মার্ট ব্যক্তিরা কয়েক দশক ধরে এই বিষয়টির সমাধান করতে চেষ্টা করেছেন এবং ব্যর্থ হয়েছেন। তবে এর মাধ্যমে সম্ভবত মূল সমস্যাকে আরো ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে। প্রথমত, সাম্প্রতিক বছরগুলোর ইসরাইলি নীতিই বেশির ভাগ ক্ষেত্রে বর্তমান সঙ্কট তৈরি করেছে। ইহুদি বসতি স্থাপনকারীদের ঐতিহ্যগতভাবে ফিলিস্তিনি অঞ্চলগুলোতে জমি দখল করার অনুমতি দেয়া এবং ফিলিস্তিনিদের মৌলিক অধিকার অস্বীকার করার বর্ণবাদী কাজের ফলে এমন একটি পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে বলে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ উল্লেখ করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের উচিত ছিল ইসরাইল সরকারকে এ অবস্থার ‘উন্নয়নের জন্য’ চাপ দেয়া।
ফ্ল্যাশপয়েন্ট : শেখ জাররাহ উচ্ছেদ
শেখ জাররাহে উচ্ছেদের প্রশ্নটি অনেক ফিলিস্তিনিদের কাছে স্পষ্টতই ফ্ল্যাশ পয়েন্টে পরিণত হয়েছে। কারণ ইসরাইলি আইন তাদের মৌলিক অধিকার দেয় না। ইহুদিরা ১৯৪৮ সালের আগে কোনো এক সময় মালিক থেকে থাকলে সেই জমি পুনরায় দাবি করতে পারে, তবে ফিলিস্তিনিরা এখনো পর্যন্ত যে জমিতে বাস করছে তা-ও আইনত দাবি করতে পারে না। এটি স্পষ্টতই রাজনৈতিক অধিকারের প্রশ্ন। কার্যত এতে সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়, ফিলিস্তিনিদের নিজস্ব ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করার অধিকার নেই এবং তারা কাজ করতে বা শান্তিতে থাকতে পারবে এমন কোনো আশা নেই। এটি অব্যাহত অস্থিরতারই একটি ‘রেসিপি’ বলে সবাই ধরে নিয়েছে।
ট্রাম্পের শান্তি পরিকল্পনা ছিল একেবারেই পরস্পরবিরোধী। এতে প্রকাশ্যে দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধানের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়, আর ইসরাইলকে বসতির জন্য পশ্চিম তীরের বেশির ভাগ প্রদান করা হয়। এটি করে ফিলিস্তিনিদেরকে কেবল একটি ক্ষুদ্র এলাকা দেয়া হয় যেটি ইসরাইল দ্বারা বেষ্টিত এবং নিয়ন্ত্রিত থাকবে। এতে অবাক হওয়ার মতো কিছু ছিল না, ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর সাথে ঘনিষ্ঠভাবে ব্যক্তিগত সম্পর্ক রক্ষাকারী ট্রাম্পের ইহুদি জামাতা কুশনার সৎ মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করার চেষ্টা করেননি। এর মাধ্যমে মূলত ‘দুই রাষ্ট্র সমাধান’ ফর্মুলার ইতি ঘটানো হয়েছে।
বাইডেন প্রশাসনের কাছে এখন এক-রাষ্ট্রীয় সমাধানের দিকে এগিয়ে যাবার কথা বলা হচ্ছে। ইসরাইল-ফিলিস্তিন দ্বন্দ্বের সমাধান প্রশ্নে সাংবাদিক পিটার বাইনার্ট বলেন : ‘নাগরিক সাম্য প্রতিষ্ঠা এখন বিচ্ছিন্নতার লক্ষ্যের চেয়ে বাস্তবসম্মত।’ প্রশ্ন হলো, সেটিও কি সম্ভব যেখানে বংশপরম্পরায় বসতি করা বাড়িঘর থেকে বের করে দিয়ে দখলে নেয়া হচ্ছে। এমনকি, প্রকাশ্যে বোরখা না খোলার জন্য গুলি করে ফিলিস্তিনি কিশোরীকে হত্যা করা হচ্ছে।
শেখ জাররাহ জেরুসালেমের ওল্ড সিটির উত্তরে অবস্থিত, এই অঞ্চলের নামটি মুসলিম সেনাপতি গাজি সালাউদ্দিনের ব্যক্তিগত চিকিৎসকের নামে, যিনি ক্রুসেডারদের কাছ থেকে জেরুসালেম অধিকার করেছিলেন। এটি ফিলিস্তিনি পরিবারের বহু প্রজন্মের বাসস্থান। ১৯৪৮ সালের যুদ্ধে ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে কয়েক লাখ ফিলিস্তিনিকে বাস্তুচ্যুত করা হয়। তাদের মধ্যে অনেকে জর্দানের নিয়ন্ত্রণাধীন অঞ্চলে পালিয়ে যায়। ১৯৫৬ সালে, জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা জর্দান ও ইউএনআরডাব্লিউর সহায়তায় ২৮টি ফিলিস্তিনি শরণার্থী পরিবার শেখ জাররাহে চলে যায়। ১৯৬৭ সালে ইসরাইল শেখ জাররাহসহ বাকি পূর্ব জেরুসালেম দখল করে নেয়। এরপর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এটাকে ‘দখলকৃত অঞ্চল’ হিসেবে বিবেচনা করে যেখানে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অনুসারে, ইসরাইলের আইন চলে না। আর এই জেরুসালেমকে ফিলিস্তিনিরা তাদের ভবিষ্যতের রাষ্ট্রের অংশ হিসেবে কল্পনা করে।
ইসরাইল ১৯৭০ সালের ‘সম্পদ আইন’ পাস করার কয়েক দশক পরে, যুক্তরাষ্ট্র-ভিত্তিক নাহালাত শিমন সংগঠনসহ ইহুদিপন্থী বন্দোবস্তকারীরা শেখ জাররাহে জমি দাবি করার জন্য একের পর এক মামলা শুরু করে। এ কারণে জাতিসঙ্ঘের অনুমান, পূর্ব জেরুসালেমজুড়ে প্রায় এক হাজার ফিলিস্তিনি উচ্ছেদের ঝুঁকিতে রয়েছে।
ফিলিস্তিনি বাসিন্দারা বলেছেন যে, ইসরাইলি বসতি স্থাপনকারীরা এই শহরে উদ্দেশ্যমূলকভাবে উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিওতে দখল করতে আসা এক ইহুদি বাড়ির অধিবাসী ফিলিস্তিনি মহিলাকে বলতে শোনা যায়, ‘আমি যদি আপনার বাড়ি চুরি না করি, তবে অন্য কেউ এটি চুরি করবে।’ অধিকার গোষ্ঠীগুলো বলেছে, শেখ জাররাহে যা ঘটছে তা ফিলিস্তিনিদের সাথে বৈষম্যমূলক ইসরাইলি ভূমি দখল অনুশীলনের প্রতীক। জাতিসঙ্ঘ গত সপ্তাহে ইসরাইলকে সতর্ক করে, ফিলিস্তিনিদের স্থানান্তর আন্তর্জাতিক মানবিক আইনে নিষিদ্ধ এবং এটি যুদ্ধাপরাধ হিসেবে গণ্য হতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের মিনেসোটার ডেমোক্র্যাট কংগ্রেসওম্যান ইলহান ওমর, ইন্ডিয়ানার আন্দ্রে কারসন এবং মিশিগানের রাশিদাত লাইব এক বিবৃতিতে বলেছেন, কয়েক দশক ধরে, আমরা একটি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের জন্য লিপ সার্ভিস দিয়েছি; ভূমি দখল, বসতি সম্প্রসারণ এবং জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতি অব্যাহত রেখে ফিলিস্তিনিদের ভবিষ্যৎকে অনিশ্চিত জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
ইসরাইল শেখ জাররাহ থেকে প্রায় এক মাইল দূরে আল-আকসা মসজিদে পবিত্র রমজান মাসে ধর্মীয় সমাবেশে অপ্রয়োজনীয় বিধিনিষেধ আরোপ করে এবার। ইসরাইলি পুলিশ আল আকসায় ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে গ্রেনেড এবং রাবার বুলেট ব্যবহার করেছে। ফিলিস্তিন রেড ক্রিসেন্টের মতে শত শত লোককে ইসলামের এই তৃতীয় পবিত্রতম স্থানে আহত করা হয়েছে। এর প্রতিক্রিয়ায় হামাস গাজা উপত্যকা থেকে ইসরাইলে রকেটের একটি ‘ব্যারেজ’ নিক্ষেপ করে সাড়া ফেলে দেয়।
ফিলিস্তিনের প্রতিরোধ আন্দোলন ‘হামাস’ ফিলিস্তিনের সাম্প্রতিক নির্বাচন বাতিল করার সিদ্ধান্তে এমনিতেই ক্ষুব্ধ। এরপর আল আকসায় হামলা আর শেখ জাররাহের ভূমি দখলের বিরুদ্ধে তারা সরব হয়। হামাস রকেট হামলা করে পূর্ব জেরুজালেমের ঘটনার ব্যাপারে বার্তা দেবার চেষ্টা করেছে। হামাসের সরব হবার জন্য এমন একটি পরিস্থিতি নেতানিয়াহু ইচ্ছা করেই সৃষ্টি করেছেন বলে মনে হচ্ছে।
আঞ্চলিক মেরুকরণ
উপসাগরীয় দেশগুলো এই ইস্যুতে কীভাবে প্রতিক্রিয়া দেখায়, তা বেশ গুরুত্বপূর্ণ মনে করা হয়েছে। উপসাগরীয় দেশসমূহ ও ইসরাইলের মধ্যে ট্রাম্প-মধ্যস্থতায় শান্তি চুক্তি সম্পাদনে এমন একটি ধারণা তৈরি হয় যে, ফিলিস্তিনি ইস্যু আর রাজনৈতিকভাবে উপসাগরীয় দেশগুলোর কাছে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ নয়। কয়েক সপ্তাহ ধরে, আল-জাজিরায় গাজায় বোমা ফাটানো বিল্ডিং এবং মৃতদেহের ফুটেজ দেখানোর পর আরব জনমতে এর প্রভাব পড়ে। ফলে ওআইসির জরুরি সভায় সবাই প্রায় একইভাবে গাজায় ইসরাইলি তাণ্ডবের নিন্দা করেছেন। আর এটি যদি উপসাগরীয় দেশগুলোকে ইসরাইলের কাছ থেকে দূরে সরে যেতে বাধ্য করে, তবে সেখানে উত্তেজনা বাড়ানোর জন্য নেতানিয়াহু সরকারকেই দোষ দেয়া হবে।
উচ্ছেদের প্রশ্নটি দীর্ঘদিন ধরে উষ্ণ হয়ে আসছে। ইসরাইলি সুপ্রিম কোর্ট সম্প্রতি উত্তেজনার ভয়ে এ বিষয়ে শুনানি স্থগিত করেছে। তবে ইসরাইলি পুলিশ বিক্ষোভের প্রতি তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিল এবং পূর্ব জেরুসালেমে তাদের ক্র্যাকডাউনগুলো প্রয়োজনের চেয়ে অনেক বেশি হিংস্র ছিল। তারা রমজানে নামাজের সময় আল আকসার মতো একটি অতি স্পর্শকাতর মসজিদে টিয়ার গ্যাস ব্যবহার করেছে।
এমা অ্যাশফোর্ড যুক্তরাষ্ট্রের ‘ফরেন পলিসি’ সাময়িকীকে বলছেন, ‘বাস্তবতা হলো, সেখানে যা ঘটছে তা অনুমোদনের মতো নয়। সন্ত্রাসবাদ ঘৃণ্য; তবে এটি মূলত সহিংসতার একটি রাজনৈতিক রূপ; এটি ঘটে যখন কোনো গোষ্ঠীর একটি রাজনৈতিক অভিযোগ থাকে এবং যা নিয়মিত রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সমাধান করা যায় না। আর এই ক্ষেত্রে, ‘শতাব্দীর সেরা চুক্তি’ এবং সাম্প্রতিক ইসরাইলি নীতিগুলো এমন পরিস্থিতি তৈরি করেছে যেখানে ইসরাইল-নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলে কার্যকরভাবে বসবাসরত দারিদ্র্যপীড়িত ফিলিস্তিনিদের বিশাল একটি গ্রুপকে অস্তিত্বের সঙ্কটে ঠেলে দেয়া হয়েছে। এর সমাধান হিংস্রতায় নয়। এর একটি রাজনৈতিক সমাধানের সন্ধান করতে হবে, যেমনটি ওয়াশিংটন সাবেক যুগোস্লাভিয়া এবং উত্তর আয়ারল্যান্ডে করতে সহায়তা করেছিল।’
আমেরিকান ইহুদিদের বেশির ভাগই ফিলিস্তিনের দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধান এবং সঙ্কট সমাধানের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের চাপকে সমর্থন করে এবং একটি গ্রহণযোগ্য চুক্তির জন্য পশ্চিম তীরে বসতি স্থাপনা সরিয়ে দেবার পক্ষে। অথচ যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রশাসন ইসরাইল-ফিলিস্তিন নিয়ে রাজনৈতিক মূলধন ব্যয় করতে চায় না। এমা মনে করেন, নেতানিয়াহুর ব্যক্তিগত অ্যাজেন্ডার কারণে এগুলো ঘটছে। কারণ তিনি এর আগে ২২ মে ইসরাইলে সরকার গঠনে ব্যর্থ হয়েছিলেন। ইসরাইলি রাষ্ট্রপতি আনুষ্ঠানিকভাবে ইয়ার ল্যাপিডকে সরকার গঠনের জন্য অনুরোধ করেছেন। এর আগে ইয়ামিনা পার্টির চেয়ারম্যান বেনেট ইঙ্গিত দিয়েছেন, তিনি ল্যাপিডকে সমর্থন করবেন এবং তার দলের সাতটি আসন রয়েছে যা ল্যাপিডের পক্ষে ৬১ আসনের সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য যথেষ্ট। নতুন পরিস্থিতিতে বেনেট সে সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছেন। নেতানিয়াহু সম্ভবত এটিই চেয়েছিলেন। বেনেট ছিলেন লিকুদ দলে নেতানিয়াহুর প্রতিদ্বন্দ্বী, যিনি নির্বাচনের আগে লিকুদ পার্টি ত্যাগ করেছিলেন।
কিন্তু প্রশ্ন হলো, এর জন্য কতটা মূল্য দিতে হচ্ছে ইসরাইলকে? ১৬ মে যুদ্ধপরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে ইসরাইলের ডানপন্থী পত্রিকা জেরুসালেম পোস্টে একটি কলাম লিখেছেন, TZVI JOFFRE। ‘ইসরাইল যুদ্ধ জিতেছে, লড়াইয়ে জিতেছে হামাস’ শীর্ষক এই লেখায় তিনি বলেছেন, ‘ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) ‘অপারেশন গার্ডিয়ান অব দি ওয়ালস’ এ দুর্দান্ত সাফল্য লাভ করেছে, তবে এর মধ্যেই ঘরটি ভিতরে থেকে ভেঙে পড়ছে বলে মনে হচ্ছে।’ তার মূল্যায়ন হলো, ‘হামাস সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিবৃতির পর বিবৃতিতে যা অর্জন করতে পারেনি তা করেছে বিদ্বেষের ব্যাপারে ঐক্য দিয়ে। এটি লেবানন, জর্দান, পশ্চিম তীর এবং এমনকি ইসরাইলের আরব সম্প্রদায়কে এমন ভীত করেছে যে, ইসরাইল রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সবার ক্ষোভ একত্রিত হয়েছে। ইতোমধ্যে ইসরাইল হয়ে পড়েছে বিভক্ত, রাজনৈতিক কলহ, অস্থিতিশীলতা এবং মারামারিতে ছিন্নবিচ্ছিন্ন।’
এরপর কী হবে?
ইসরাইল সম্ভবত গাজা বা লেবাননে স্থল অভিযান পরিচালনা করবে না, যা তাদের জন্য ভুল খেলা হতে পারে। গাজায় ইসরাইলের শেষ স্থল আক্রমণে আল কাস্সাম ব্রিগেডের সাহসিকতায় তারা পিছু হটেছিল। ফলে ইসরাইল এখন আর গ্রীষ্মকালে হিজবুল্লাহর সাথে লড়াইয়েরও ঝুঁকি নিতে চাইবে না। তদুপরি, সিরিয়া থেকে চালিত সাম্প্রতিক ক্ষেপণাস্ত্র ইসরাইলের গভীরে প্রবেশ করেছে যা ইসরাইলের নিউক্লিয়ার প্লান্টের একেবারে কাছাকাছি পৌঁছে যায়। ইসরাইলের ‘আয়রন ডোম’ এটি বন্ধ করতে ব্যর্থ হয়।
ইরান ও তুরস্ক উভয়ের কাছে আরো আধুনিক ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে যা ইসরাইল কখনো থামাতে পারে না। ‘ছয় দিনের যুদ্ধের’ দিনগুলো সম্ভবত চলে গেছে। ইরান স্থল থেকে স্থল ও আকাশে এবং পানির গভীরে ব্যবহারক্ষম দীর্ঘ পরিসরের ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করেছে। তুরস্ককে সিরিয়ায় অবস্থিত তার সেনাবাহিনীকে এই ইস্যুতে জড়িত করার প্রয়োজন হবে না। সৌদি আরব ও মিসরের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার উদ্যোগের মধ্যেই অনেক বার্তা রয়েছে। ইসরাইলি বিনিয়োগে ইথিওপিয়ায় নীল নদের উৎসে বাঁধ দিয়ে পানি নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ মিসরের অর্থনীতির জন্য বাঁচা মরার প্রশ্ন। ইসরাইলের ইহুদিদের অনেকে বিশ্বাস করে, মুসা নবীর হারিয়ে যাওয়া সিন্ধুকটি ইথিওপিয়ায় পাওয়া যেতে পারে। ইসরাইলের অনেকে দেশটিতে ‘দ্বিতীয় ইহুদি রাষ্ট্র’ প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখে।
ইথিওপিয়ায় নীল নদের উপর দেয়া ‘রেনেসাঁ বাঁধ’ চালুর উদ্যোগ ইসরাইলের বাইরে, তুরস্কের মতো বড় আঞ্চলিক শক্তির সাথে সমঝোতায় আসতে উৎসাহিত করেছে মিসরকে। এটি মধ্যপ্রাচ্য এবং ভূমধ্যসাগর অঞ্চলের ভূ-রাজনৈতিক খেলাকে পাল্টে দিয়েছে। এর মধ্যে এরদোগানের সৌদি বাদশাহকে করা ফোন কলটি বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। এই সময়টাতে সৌদি আরবে কাতারি আমির, তুর্কি পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর সফরও তাৎপর্যপূর্ণ। গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসন নিয়ে এর মধ্যে এরদোগান ১৯ জন রাষ্ট্রপ্রধানের সাথে কথা বলেছেন। তিনি খেলছেন কূটনীতির ময়দানে, আর ইরানের কাজ সম্ভবত প্রতিরোধ যুদ্ধকে শক্তিমান করার ক্ষেত্রে। ইসরাইলের খুব গভীরে ইসলামী জিহাদের ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাত নেতানিয়াহুর চোখের নিচে কালো আস্তরণ ফেলেছে। তিনি যুদ্ধ বন্ধ করার উদ্যোগ নিতে ওয়াশিংটনকে বার্তা দিয়েছেন।
তুরস্ক, ইরান, পাকিস্তান, সৌদি আরব, মিসর, কাতার- এসব দেশের মধ্যে যে কোনো মাত্রার সমঝোতা মধ্যপ্রাচ্যের হিসাব নিকাশকে পাল্টে দিতে পারে। ইসরাইলকে যত বড় বাঘ মনে করা হয়, বাস্তবতা সে রকম নয়। দেশটির প্রযুক্তিগত উন্নতির সীমাবদ্ধতা হামাস বা হিজবুল্লাহর মতো শক্তির সাথে সঙ্ঘাতেই প্রকট হয়ে উঠছে। আমেরিকার সামরিক অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সহায়তার বাইরে চিন্তা করা হলে ইসরাইলের ক্ষমতা তার ভূখণ্ডগত অবয়বের মতোই সঙ্কীর্ণ। ১৯৪৮, ১৯৬৭ এবং ১৯৭৩ সাল আর ২০২১ সাল এক নয়। ৯৩ লাখ জনসংখ্যার ইসরাইলের ৫৪ লাখ ইহুদির ৯৫ ভাগই এখন একই সাথে অন্য কোনো দেশের নাগরিকও। তাদের অনেকেই দেশটির নিরাপত্তাহীনতার কথা ভেবে বিকল্প আশ্রয়ে চলে যাচ্ছে। হামাসের রকেট নিক্ষেপে সতর্কঘণ্টা বেজে ওঠার সাথে সাথে সবাইকে বাংকারে জীবনপণ ছুটতে দেখা যাচ্ছে।
দেশটির অভ্যন্তরীণ নাগরিক সংহতিও এতটাই ভঙ্গুর হয়ে পড়েছে যে, চারবার নির্বাচন করেও সরকার গঠন করা সম্ভব হচ্ছে না। পাঁচ মিশালি সংস্কৃতির ইহুদি জনগোষ্ঠী যে যার মূল দেশের নেতাদের প্রতি বেশি আনুগত্য পোষণ করছে। রাজনৈতিক দলের প্রতি সমর্থনে তার প্রতিফলন লক্ষ করা যায়। এক সময় ইহুদিদের ধর্মনিষ্ঠতাকে গুরুত্বের সাথে দেখা হতো। এখন যৌন ব্যবসার বৈশ্বিক কেন্দ্রগুলোতে বেশি ভিড় জমায় ইসরাইলিরা। ইসরাইলি সমাজকে যারা গভীর থেকে নিরীক্ষণ করেন এই বিষয়গুলো তাদের নজর এড়ায় না। এ কারণে কিসিঞ্জার, খামেনি অথবা সাবেক শিন বেত প্রধান অদূরভবিষ্যতে ইসরাইল রাষ্ট্রকে অস্তিত্বহীন দেখতে পাচ্ছেন।
কেউ এর পেছনে জনসংখ্যামিতি ও আদর্শবোধ, কেউ আন্তর্জাতিক রাজনীতি আবার কেউ ডিভাইন কিছু দেখতে পাচ্ছেন। তবে ভেতর থেকেই যে ইসরাইল রাষ্ট্রের ক্ষয় হচ্ছে সেটি প্রকাশ পেতে খুব বেশি সময় লাগবে বলে মনে হচ্ছে না। ইসরাইলের পক্ষে উচ্চতর প্রশিক্ষিত সশস্ত্র বাহিনী, মার্কিন সরকার এবং রথচাইল্ড পরিবারের অন্ধ সমর্থন থাকা সত্ত্বেও হঠাৎ করে একপর্যায়ে তার আধিপত্য বিস্তারে টান পড়তে শুরু করবে। রাশিয়ানদের এবার মুসলমানদের সমর্থন করার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। চীনের বার্তায়ও তার আভাস পাওয়া যাচ্ছে। ট্রাম্পের সাথে পুতিনের ভুল সহযোগিতার পরিস্থিতি এবার থাকবে না। কেউ কেউ এমন ইঙ্গিতও দেন যে মুসলমানরা মধ্য প্রাচ্যে গোঁড়া অর্থোডক্স খ্রিষ্টানদের কাছ থেকে সমর্থন পাবে এবার। তাদের বিশ্বাস অনুসারে, যিশুকে ইহুদিরাই হত্যা করেছিল। এখনই এসপার ওসপার কিছু হয়তো হবে না, তবে ক্ষয় শুরু হয়ে গেছে ইসরাইলের ভেতরে বাইরে।
mrkmmb@gmail.com