বিপদে পড়তে পারে ইসরাইল
বাইডেন ও নেতানিয়াহু - ছবি : সংগৃহীত
ইসরাইল সম্ভবত গাজা বা লেবাননে স্থল অভিযান পরিচালনা করবে না, যা তাদের জন্য ভুল খেলা হতে পারে। গাজায় ইসরাইলের শেষ স্থল আক্রমণে আল কাস্সাম ব্রিগেডের সাহসিকতায় তারা পিছু হটেছিল। ফলে ইসরাইল এখন আর গ্রীষ্মকালে হিজবুল্লাহর সাথে লড়াইয়েরও ঝুঁকি নিতে চাইবে না। তদুপরি, সিরিয়া থেকে চালিত সাম্প্রতিক ক্ষেপণাস্ত্র ইসরাইলের গভীরে প্রবেশ করেছে যা ইসরাইলের নিউক্লিয়ার প্লান্টের একেবারে কাছাকাছি পৌঁছে যায়। ইসরাইলের ‘আয়রন ডোম’ এটি বন্ধ করতে ব্যর্থ হয়।
ইরান ও তুরস্ক উভয়ের কাছে আরো আধুনিক ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে যা ইসরাইল কখনো থামাতে পারে না। ‘ছয় দিনের যুদ্ধের’ দিনগুলো সম্ভবত চলে গেছে। ইরান স্থল থেকে স্থল ও আকাশে এবং পানির গভীরে ব্যবহারক্ষম দীর্ঘ পরিসরের ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করেছে। তুরস্ককে সিরিয়ায় অবস্থিত তার সেনাবাহিনীকে এই ইস্যুতে জড়িত করার প্রয়োজন হবে না। সৌদি আরব ও মিসরের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার উদ্যোগের মধ্যেই অনেক বার্তা রয়েছে। ইসরাইলি বিনিয়োগে ইথিওপিয়ায় নীল নদের উৎসে বাঁধ দিয়ে পানি নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ মিসরের অর্থনীতির জন্য বাঁচা মরার প্রশ্ন। ইসরাইলের ইহুদিদের অনেকে বিশ্বাস করে, মুসা নবীর হারিয়ে যাওয়া সিন্ধুকটি ইথিওপিয়ায় পাওয়া যেতে পারে। ইসরাইলের অনেকে দেশটিতে ‘দ্বিতীয় ইহুদি রাষ্ট্র’ প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখে।
ইথিওপিয়ায় নীল নদের উপর দেয়া ‘রেনেসাঁ বাঁধ’ চালুর উদ্যোগ ইসরাইলের বাইরে, তুরস্কের মতো বড় আঞ্চলিক শক্তির সাথে সমঝোতায় আসতে উৎসাহিত করেছে মিসরকে। এটি মধ্যপ্রাচ্য এবং ভূমধ্যসাগর অঞ্চলের ভূ-রাজনৈতিক খেলাকে পাল্টে দিয়েছে। এর মধ্যে এরদোগানের সৌদি বাদশাহকে করা ফোন কলটি বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। এই সময়টাতে সৌদি আরবে কাতারি আমির, তুর্কি পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর সফরও তাৎপর্যপূর্ণ। গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসন নিয়ে এর মধ্যে এরদোগান ১৯ জন রাষ্ট্রপ্রধানের সাথে কথা বলেছেন। তিনি খেলছেন কূটনীতির ময়দানে, আর ইরানের কাজ সম্ভবত প্রতিরোধ যুদ্ধকে শক্তিমান করার ক্ষেত্রে। ইসরাইলের খুব গভীরে ইসলামী জিহাদের ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাত নেতানিয়াহুর চোখের নিচে কালো আস্তরণ ফেলেছে। তিনি যুদ্ধ বন্ধ করার উদ্যোগ নিতে ওয়াশিংটনকে বার্তা দিয়েছেন।
তুরস্ক, ইরান, পাকিস্তান, সৌদি আরব, মিসর, কাতার- এসব দেশের মধ্যে যে কোনো মাত্রার সমঝোতা মধ্যপ্রাচ্যের হিসাব নিকাশকে পাল্টে দিতে পারে। ইসরাইলকে যত বড় বাঘ মনে করা হয়, বাস্তবতা সে রকম নয়। দেশটির প্রযুক্তিগত উন্নতির সীমাবদ্ধতা হামাস বা হিজবুল্লাহর মতো শক্তির সাথে সঙ্ঘাতেই প্রকট হয়ে উঠছে। আমেরিকার সামরিক অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সহায়তার বাইরে চিন্তা করা হলে ইসরাইলের ক্ষমতা তার ভূখণ্ডগত অবয়বের মতোই সঙ্কীর্ণ। ১৯৪৮, ১৯৬৭ এবং ১৯৭৩ সাল আর ২০২১ সাল এক নয়। ৯৩ লাখ জনসংখ্যার ইসরাইলের ৫৪ লাখ ইহুদির ৯৫ ভাগই এখন একই সাথে অন্য কোনো দেশের নাগরিকও। তাদের অনেকেই দেশটির নিরাপত্তাহীনতার কথা ভেবে বিকল্প আশ্রয়ে চলে যাচ্ছে। হামাসের রকেট নিক্ষেপে সতর্কঘণ্টা বেজে ওঠার সাথে সাথে সবাইকে বাংকারে জীবনপণ ছুটতে দেখা যাচ্ছে।
দেশটির অভ্যন্তরীণ নাগরিক সংহতিও এতটাই ভঙ্গুর হয়ে পড়েছে যে, চারবার নির্বাচন করেও সরকার গঠন করা সম্ভব হচ্ছে না। পাঁচ মিশালি সংস্কৃতির ইহুদি জনগোষ্ঠী যে যার মূল দেশের নেতাদের প্রতি বেশি আনুগত্য পোষণ করছে। রাজনৈতিক দলের প্রতি সমর্থনে তার প্রতিফলন লক্ষ করা যায়। এক সময় ইহুদিদের ধর্মনিষ্ঠতাকে গুরুত্বের সাথে দেখা হতো। এখন যৌন ব্যবসার বৈশ্বিক কেন্দ্রগুলোতে বেশি ভিড় জমায় ইসরাইলিরা। ইসরাইলি সমাজকে যারা গভীর থেকে নিরীক্ষণ করেন এই বিষয়গুলো তাদের নজর এড়ায় না। এ কারণে কিসিঞ্জার, খামেনি অথবা সাবেক শিন বেত প্রধান অদূরভবিষ্যতে ইসরাইল রাষ্ট্রকে অস্তিত্বহীন দেখতে পাচ্ছেন।
কেউ এর পেছনে জনসংখ্যামিতি ও আদর্শবোধ, কেউ আন্তর্জাতিক রাজনীতি আবার কেউ ডিভাইন কিছু দেখতে পাচ্ছেন। তবে ভেতর থেকেই যে ইসরাইল রাষ্ট্রের ক্ষয় হচ্ছে সেটি প্রকাশ পেতে খুব বেশি সময় লাগবে বলে মনে হচ্ছে না। ইসরাইলের পক্ষে উচ্চতর প্রশিক্ষিত সশস্ত্র বাহিনী, মার্কিন সরকার এবং রথচাইল্ড পরিবারের অন্ধ সমর্থন থাকা সত্ত্বেও হঠাৎ করে একপর্যায়ে তার আধিপত্য বিস্তারে টান পড়তে শুরু করবে। রাশিয়ানদের এবার মুসলমানদের সমর্থন করার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। চীনের বার্তায়ও তার আভাস পাওয়া যাচ্ছে। ট্রাম্পের সাথে পুতিনের ভুল সহযোগিতার পরিস্থিতি এবার থাকবে না। কেউ কেউ এমন ইঙ্গিতও দেন যে মুসলমানরা মধ্য প্রাচ্যে গোঁড়া অর্থোডক্স খ্রিষ্টানদের কাছ থেকে সমর্থন পাবে এবার। তাদের বিশ্বাস অনুসারে, যিশুকে ইহুদিরাই হত্যা করেছিল। এখনই এসপার ওসপার কিছু হয়তো হবে না, তবে ক্ষয় শুরু হয়ে গেছে ইসরাইলের ভেতরে বাইরে।