কতটা মূল্য দিতে হচ্ছে ইসরাইলকে?
নেতানিয়াহু - ছবি : সংগৃহীত
উপসাগরীয় দেশগুলো এই ইস্যুতে কীভাবে প্রতিক্রিয়া দেখায়, তা বেশ গুরুত্বপূর্ণ মনে করা হয়েছে। উপসাগরীয় দেশসমূহ ও ইসরাইলের মধ্যে ট্রাম্প-মধ্যস্থতায় শান্তি চুক্তি সম্পাদনে এমন একটি ধারণা তৈরি হয় যে, ফিলিস্তিনি ইস্যু আর রাজনৈতিকভাবে উপসাগরীয় দেশগুলোর কাছে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ নয়। কয়েক সপ্তাহ ধরে, আল-জাজিরায় গাজায় বোমা ফাটানো বিল্ডিং এবং মৃতদেহের ফুটেজ দেখানোর পর আরব জনমতে এর প্রভাব পড়ে। ফলে ওআইসির জরুরি সভায় সবাই প্রায় একইভাবে গাজায় ইসরাইলি তাণ্ডবের নিন্দা করেছেন। আর এটি যদি উপসাগরীয় দেশগুলোকে ইসরাইলের কাছ থেকে দূরে সরে যেতে বাধ্য করে, তবে সেখানে উত্তেজনা বাড়ানোর জন্য নেতানিয়াহু সরকারকেই দোষ দেয়া হবে।
উচ্ছেদের প্রশ্নটি দীর্ঘদিন ধরে উষ্ণ হয়ে আসছে। ইসরাইলি সুপ্রিম কোর্ট সম্প্রতি উত্তেজনার ভয়ে এ বিষয়ে শুনানি স্থগিত করেছে। তবে ইসরাইলি পুলিশ বিক্ষোভের প্রতি তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিল এবং পূর্ব জেরুসালেমে তাদের ক্র্যাকডাউনগুলো প্রয়োজনের চেয়ে অনেক বেশি হিংস্র ছিল। তারা রমজানে নামাজের সময় আল আকসার মতো একটি অতি স্পর্শকাতর মসজিদে টিয়ার গ্যাস ব্যবহার করেছে।
এমা অ্যাশফোর্ড যুক্তরাষ্ট্রের ‘ফরেন পলিসি’ সাময়িকীকে বলছেন, ‘বাস্তবতা হলো, সেখানে যা ঘটছে তা অনুমোদনের মতো নয়। সন্ত্রাসবাদ ঘৃণ্য; তবে এটি মূলত সহিংসতার একটি রাজনৈতিক রূপ; এটি ঘটে যখন কোনো গোষ্ঠীর একটি রাজনৈতিক অভিযোগ থাকে এবং যা নিয়মিত রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সমাধান করা যায় না। আর এই ক্ষেত্রে, ‘শতাব্দীর সেরা চুক্তি’ এবং সাম্প্রতিক ইসরাইলি নীতিগুলো এমন পরিস্থিতি তৈরি করেছে যেখানে ইসরাইল-নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলে কার্যকরভাবে বসবাসরত দারিদ্র্যপীড়িত ফিলিস্তিনিদের বিশাল একটি গ্রুপকে অস্তিত্বের সঙ্কটে ঠেলে দেয়া হয়েছে। এর সমাধান হিংস্রতায় নয়। এর একটি রাজনৈতিক সমাধানের সন্ধান করতে হবে, যেমনটি ওয়াশিংটন সাবেক যুগোস্লাভিয়া এবং উত্তর আয়ারল্যান্ডে করতে সহায়তা করেছিল।’
আমেরিকান ইহুদিদের বেশির ভাগই ফিলিস্তিনের দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধান এবং সঙ্কট সমাধানের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের চাপকে সমর্থন করে এবং একটি গ্রহণযোগ্য চুক্তির জন্য পশ্চিম তীরে বসতি স্থাপনা সরিয়ে দেবার পক্ষে। অথচ যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রশাসন ইসরাইল-ফিলিস্তিন নিয়ে রাজনৈতিক মূলধন ব্যয় করতে চায় না। এমা মনে করেন, নেতানিয়াহুর ব্যক্তিগত অ্যাজেন্ডার কারণে এগুলো ঘটছে। কারণ তিনি এর আগে ২২ মে ইসরাইলে সরকার গঠনে ব্যর্থ হয়েছিলেন। ইসরাইলি রাষ্ট্রপতি আনুষ্ঠানিকভাবে ইয়ার ল্যাপিডকে সরকার গঠনের জন্য অনুরোধ করেছেন। এর আগে ইয়ামিনা পার্টির চেয়ারম্যান বেনেট ইঙ্গিত দিয়েছেন, তিনি ল্যাপিডকে সমর্থন করবেন এবং তার দলের সাতটি আসন রয়েছে যা ল্যাপিডের পক্ষে ৬১ আসনের সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য যথেষ্ট। নতুন পরিস্থিতিতে বেনেট সে সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছেন। নেতানিয়াহু সম্ভবত এটিই চেয়েছিলেন। বেনেট ছিলেন লিকুদ দলে নেতানিয়াহুর প্রতিদ্বন্দ্বী, যিনি নির্বাচনের আগে লিকুদ পার্টি ত্যাগ করেছিলেন।
কিন্তু প্রশ্ন হলো, এর জন্য কতটা মূল্য দিতে হচ্ছে ইসরাইলকে? ১৬ মে যুদ্ধপরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে ইসরাইলের ডানপন্থী পত্রিকা জেরুসালেম পোস্টে একটি কলাম লিখেছেন, TZVI JOFFRE। ‘ইসরাইল যুদ্ধ জিতেছে, লড়াইয়ে জিতেছে হামাস’ শীর্ষক এই লেখায় তিনি বলেছেন, ‘ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) ‘অপারেশন গার্ডিয়ান অব দি ওয়ালস’ এ দুর্দান্ত সাফল্য লাভ করেছে, তবে এর মধ্যেই ঘরটি ভিতরে থেকে ভেঙে পড়ছে বলে মনে হচ্ছে।’ তার মূল্যায়ন হলো, ‘হামাস সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিবৃতির পর বিবৃতিতে যা অর্জন করতে পারেনি তা করেছে বিদ্বেষের ব্যাপারে ঐক্য দিয়ে। এটি লেবানন, জর্দান, পশ্চিম তীর এবং এমনকি ইসরাইলের আরব সম্প্রদায়কে এমন ভীত করেছে যে, ইসরাইল রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সবার ক্ষোভ একত্রিত হয়েছে। ইতোমধ্যে ইসরাইল হয়ে পড়েছে বিভক্ত, রাজনৈতিক কলহ, অস্থিতিশীলতা এবং মারামারিতে ছিন্নবিচ্ছিন্ন।’