কী ভাবছে ইসরাইলি মুসলিমরা
ইসরাইলি মুসলিম - ছবি : সংগৃহীত
অনলাইনে দ্রুত ছড়িয়ে পড়া চলমান ঘটনার সর্বশেষ ফুটেজ এ দেখা গেছে, আরব ইসরাইলি যুবকরা উত্তর ও মধ্য ইসরাইলি শহরগুলোজুড়ে অভূতপূর্বভাবে বিক্ষোভে অংশ নিচ্ছে। তারা নিজেদের ফিলিস্তিনি জাতীয় পরিচয়ে একাত্ম হচ্ছে। এই আরব ইসরাইলিরা ১৯৪৮ সালে ইসরাইলের নাগরিকত্ব নিয়ে রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে সম্পৃক্ত হয়েছিলেন। ইসরাইলের গত সংসদেও তাদের ১৫ জন সদস্য ছিলেন। বিভক্ত হয়ে নির্বাচন করায় এই সংখ্যা এবার কিছুটা কমে এসেছে। আরব ফিলিস্তিনিদের ভূমি থেকে উৎখাত করার চলমান কাজকে তারাও নিজেদের অস্তিত্বের জন্য হুমকি হিসেবে বিবেচনা করছেন। ফলে ইসরাইলের আরব শহরগুলোতেও বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে।
নতুন সঙ্ঘাতে সোশ্যাল মিডিয়ার ভিডিওতে দেখা গেছে, ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন ‘হামাস’ আজ অবধি তার বৃহত্তম এবং সবচেয়ে ব্যাপক প্রতিশোধমূলক আক্রমণ চালিয়েছে ইসরাইলে। ফিলিস্তিনের তথ্য কেন্দ্র জানিয়েছে, বিশাল রকেট উৎক্ষেপণের মাত্র পাঁচ মিনিটের মধ্যে তা ইসরাইলি শহরগুলোর দিকে উড়ে আঘাত হেনেছে। তেল আবিবকে লক্ষ্য করে হামলার ফুটেজগুলোও প্রকাশ পেয়েছে। গাজায় মারাত্মক ইসরাইলি বিমান হামলায় বেসামরিক ভবনগুলোকে টার্গেট করার পরে হামাস শপথ করেছে যে, তারা আরো বড় আকারের হামলা চালাবে। হামাসের রকেট হামলা প্রতিহত করতে না পারায় ইসরাইলের খ্যাতিমান আয়রন ডোম প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাটি প্রশ্নের মুখে পড়েছে। গাজা থেকে চালিত প্রথম সাতটি রকেটের মধ্যে কেবল একটিকে এটি বাধা দিতে সক্ষম হয়েছে।
অবরুদ্ধ হামাসের রকেট হামলার ক্ষেত্রে ইসরাইলের প্রস্তুতি সম্পর্কে গুরুতর প্রশ্ন উত্থাপন হয়েছে দেশটিতে। এই অবস্থায় উত্তর সীমান্তের আরো শক্তিশালী হিজবুল্লাহ যুদ্ধে জড়ালে পরিস্থিতি আরো বিপজ্জনক হতে পারে। এর মধ্যে ইয়েমেনের আনসারাল্লাহ আন্দোলনের নেতা আবদুল মালিক আল-হাউথি ফিলিস্তিনিদের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করার কথা এবং তাদের প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানিয়েছেন।
ইসরাইল পারমাণবিক অস্ত্রধারী রাষ্ট্র হওয়া সত্ত্বেও প্রতিপক্ষের সাধারণ প্রযুক্তির অস্ত্রের প্রতিরোধেই ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। একটি ‘ভুল’ সিরিয়ান ক্ষেপণাস্ত্র গত মাসে ইসরাইলের সুরক্ষিত আকাশসীমা পেরিয়ে ডিমোনা পারমাণবিক চুল্লি সাইটের কাছাকাছি পৌঁছে যায়।
সম্ভবত কেউ ইসরাইল ও ফিলিস্তিনিদের মধ্যে এই আকস্মিক, সহিংস সংঘর্ষের প্রত্যাশা করেনি। পূর্ব জেরুসালেমের বিক্ষোভ থেকে শুরু করে ইসরাইলে গণ রকেট হামলা এবং গাজায় ইসরাইলি প্রতিশোধমূলক বিমান হামলায় কয়েক দিনের মধ্যে নতুন পরিস্থিতি দেখা যাচ্ছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেনের প্রশাসনের জন্যও এটি অবাক করা বিষয় হতে পারে। তারা ইসরাইল-ফিলিস্তিন প্রশ্নে হাত গুটিয়ে নেয়ার কৌশল নিয়ে বলেছিলেন, এটি আর বৈশ্বিক সমস্যা নয়। তবে ফিলিস্তিনের পরিস্থিতি ক্রমবর্ধমানভাবে অস্থিতিশীল হয়ে উঠছে এবং দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধানের আশা মরে যাওয়ার পরেও যুক্তরাষ্ট্র ইসরাইলকে সশস্ত্র এবং রাজনৈতিক বিষয়গুলো উপেক্ষা করে বছরের পর বছর কাটিয়েছে। তারপরে ট্রাম্পের ‘আব্রাহাম অ্যাকর্ডস’ এবং উদ্ভট তথাকথিত শান্তি পরিকল্পনা পরিস্থিতিটিকে আনুষ্ঠানিকভাবে সামনে নিয়ে আসে।
ওয়াশিংটন হামাসকে দোষারোপ করছে। যুক্তির খাতিরে বলা যায়, ইসরাইলি বেসামরিক নাগরিকদের ওপর হামাসের রকেট হামলা চালানো ন্যায়সঙ্গত নয়। তবে ইসরাইলিরাও বিমান হামলা করে বহু বেসামরিক নাগরিককে হত্যা করছে। কেবল গত কয়েক দিনেই ২০০ জনের মতো মারা গেছে। এভাবে কেবল একদিকের সহিংসতার নিন্দা করা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য রাজনৈতিক সমাধান খুঁজে পেতে সহায়তা করবে না বলে মন্তব্য করেন আটলান্টিক কাউন্সিলের সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজি অ্যান্ড সিকিউরিটির নিউ আমেরিকান এনগেজমেন্ট ইনিশিয়েটিভের সিনিয়র ফেলো এমা অ্যাশফোর্ড।
তিনি উল্লেখ করেন, স্মার্ট ব্যক্তিরা কয়েক দশক ধরে এই বিষয়টির সমাধান করতে চেষ্টা করেছেন এবং ব্যর্থ হয়েছেন। তবে এর মাধ্যমে সম্ভবত মূল সমস্যাকে আরো ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে। প্রথমত, সাম্প্রতিক বছরগুলোর ইসরাইলি নীতিই বেশির ভাগ ক্ষেত্রে বর্তমান সঙ্কট তৈরি করেছে। ইহুদি বসতি স্থাপনকারীদের ঐতিহ্যগতভাবে ফিলিস্তিনি অঞ্চলগুলোতে জমি দখল করার অনুমতি দেয়া এবং ফিলিস্তিনিদের মৌলিক অধিকার অস্বীকার করার বর্ণবাদী কাজের ফলে এমন একটি পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে বলে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ উল্লেখ করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের উচিত ছিল ইসরাইল সরকারকে এ অবস্থার ‘উন্নয়নের জন্য’ চাপ দেয়া।