জনসংখ্যাতাত্ত্বিক চাপেই ধসে পড়তে পারে ইসরাইল!

মাসুম খলিলী | May 18, 2021 03:59 pm
কুব্বাতুল সাখরায় নামাজ

কুব্বাতুল সাখরায় নামাজ - ছবি : সংগৃহীত

 

আয়াতুল্লাহ খামেনির ভবিষ্যদ্বাণী অনুসারে, ইসরাইলের ১৯ বছর বাকি রয়েছে, কিসিঞ্জারের মত অনুযায়ী, এটি ঘটবে এক বছর পরে। আপাত দৃষ্টিতে এসব কথাবার্তাকে ‘অবান্তর কল্পনার স্বর্গে বসবাস’ মনে হতে পারে। কিন্তু এবারের শেখ জাররাহ থেকে ফিলিস্তিনিদের উৎখাত প্রচেষ্টা, মসজিদুল আকসায় হামলা এবং গাজার সাথে ইসরাইলের যুদ্ধে মনে হচ্ছে, ভেতর থেকেই ইসরাইলে ক্ষয় এবং কিছু পরিবর্তন অনিবার্য হয়ে উঠছে।

কিসিঞ্জার-খামেনি-শিন বেত প্রধানের ভবিষ্যদ্বাণী
সাবেক আমেরিকান পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার এবং ইরানের শীর্ষ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির ইসরাইল-ফিলিস্তিন নিয়ে মন্তব্য বেশ কয়েক বছর আগের। ড: কিসিঞ্জার বলেছিলেন ৯ বছর আগে, আর খামেনি বলেছিলেন ২০১৫ সালে। ইরানের সুপ্রিম লিডার খামেনি ২০১৫ সালে প্রথম উল্লেখ করেন যে, ইসরাইল পরবর্তী ২৫ বছর দেখবে না। ২৫ বছরে জায়নবাদী সরকার বলে কিছু থাকবে না। তেহরান এবং বিশ্বশক্তি ৫+১ এর মধ্যে পরমাণু সংক্রান্ত যে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল, তখনই এই মন্তব্য প্রকাশ করা হয়েছিল।

ইরানি নেতারা অতীতেও এ ধরনের কথা বলেছিলেন। ইরানের সাবেক রাষ্ট্রপতি মাহমুদ আহমাদিনেজাদ ১০ বছর আগে বলেছিলেন, ‘জেরুসালেম দখলকারী ইসরাইলের সরকারকে অবশ্যই সময়ের পাতায় বিলুপ্ত হতে হবে।’ পশ্চিমা গণমাধ্যম এ সময় এটিকে ভুল অনুবাদ করে প্রকাশ করেছিল ‘ইসরাইলকে অবশ্যই মানচিত্র থেকে মুছে ফেলতে হবে।’ মূল উক্তিটি আসলে ছিল ইরানের ইসলামী প্রজাতন্ত্রের প্রতিষ্ঠাতা আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ খোমেনির। ২০১৬ সালে খামেনির ওয়েবসাইটে এটি আনুষ্ঠানিকভাবে পোস্ট করা হয় এবং ইরানের সেনাবাহিনী প্রধান মেজর জেনারেল আবদুল্লাহিম মৌসাভী ২০১৭ সালে এই কথার পুনরাবৃত্তি করেন। আর এখনকার ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ইরানের সংবাদমাধ্যমগুলো মন্তব্য করছে ‘অবৈধ জায়নবাদী শাসনের পতনের লক্ষণ প্রকট হয়ে উঠেছে। ফিলিস্তিনের পক্ষে ক্ষমতার ভারসাম্য পরিবর্তনের আশান্বিত হবার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।’

প্রকৃতপক্ষে, ইরানের শীর্ষ নেতারা ইসরাইল রাষ্ট্রের পতনের ভবিষ্যদ্বাণীকারী প্রথম ব্যক্তি নন। ইহুদি বংশোদ্ভূত কৌশলবিদ এবং প্রায় শতবর্ষী, সাবেক আমেরিকান পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার ২০১২ সালে বলেছিলেন, ‘পরবর্তী দশ বছর ইসরাইল থাকবে না।’ ইসরাইলি পত্রিকা ‘হারেত্জ’-এ মন্তব্যটির কথা উল্লেখ করা হয়। টাইমস অফ ইসরাইল অবশ্য দাবি করে যে, কিসিঞ্জার কখনো এই বক্তব্য দেননি।

ইয়ুদিওথ আহরনোত্ পত্রিকায় গত ফেব্রুয়ারিতে মতামত কলামে ইসরাইলের গোয়েন্দা সংস্থা শিন বেতের সাবেক প্রধান ইউভাল দিসকিনও অনুতাপ করে লিখেছেন, ‘ইসরাইল পরবর্তী প্রজন্মের জন্য থাকবে না।’ তিনি অবশ্য সুনির্দিষ্টভাবে বছর উল্লেখ করেননি। দিসকিন বিশদভাবে বলেন, ‘আমি ইরানি পারমাণবিক হুমকি, হিজবুল্লাহর ক্ষেপণাস্ত্র বা চরমপন্থী মৌলবাদী ইসলামের কথা বলছি না। জনসংখ্যা, সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রবণতা সম্পর্কে কথা বলছি যা ইতোমধ্যে রাষ্ট্রের মর্ম পরিবর্তন করে চলেছে এবং যা এর অস্তিত্বকে বিপন্ন করতে পারে বলে অভিহিত করছি এখনকার প্রজন্মকে। পরবর্তী ৪০ বছরে, দেশের প্রায় অর্ধেক নাগরিক অতি-গোঁড়া ও আরব হবে। এটি রাষ্ট্রের জন্য একটি সুস্পষ্ট নিরাপত্তা উদ্বেগ; কারণ উভয়ই বিশেষভাবে ইহুদিবাদবিরোধী প্রবণতায় চালিত।’

ইসরাইলের জনসংখ্যাতাত্ত্বিক ‘টাইম বোমা’ তত্ত্বটি নিয়ে বছরের পর বছর ধরে বিভিন্ন ফোরামে আলোচনা করা হয়েছে। বিশেষত যখন কেউ গাজা আর দখলকৃত পশ্চিম তীরের সম্মিলিত জনসংখ্যার কথা বিবেচনা করেন এবং তার সাথে ইসরাইলের ২১ শতাংশ আরব নাগরিক জনসংখ্যা যোগ করা হয় তখন এই উদ্বেগ প্রকট হয়ে ওঠে ইসরাইলিদের মধ্যে। বলা হয়, ইসরাইল একই সাথে ইহুদি সংখ্যাগরিষ্ঠ রাষ্ট্র এবং গণতন্ত্র উভয়ই হতে পারে না। আর যদি এটি উভয়ই না হতে পারে তবে ইসরাইল প্রতিষ্ঠার জায়নিস্ট স্বপ্নের অবসান হবে।


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us