প্রয়োজন কেবল বাইবার্স কুতুজদের মতো লড়াই করা
প্রয়োজন কেবল বাইবার্স কুতুজদের মতো লড়াই করা - ছবি : সংগৃহীত
আমি নিজেকে ইসলামি স্কলার দাবি করি না। সুতরাং আমার এই লেখাকে ইসলাম দিয়ে বিচার করবেন না, যদিও এটা মুসলমানদের নিয়ে লেখা। মূলত এটা ইতিহাসের সাথে সাথে বর্তমান প্রেক্ষাপটে আমাদের মুসলিম সমাজের রাজনৈতিক অবস্থা নিয়ে আলোচনা।
প্রথমত, 'মুসলিমরা জ্ঞানবিজ্ঞানে পিছিয়ে আছে বলে আজ এই দুর্দশা' - এটা ইতিহাসের আলোকে সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। বাগদাদ যখন মঙ্গোলদের হাতে ধ্বংস হয় বা আন্দালুসিয়া (মুসলিম স্পেন) থেকে যখন মুসলিমরা এথনিক ক্লিনসিংয়ের শিকার হয়ে ভ্যানিশ হয়ে যায়, ওই সময়গুলোতে ইউরোপের অন্ধকার যুগ থাকলেও মুসলিমরা কিন্তু বাকি বিশ্ব থেকে জ্ঞান-বিজ্ঞানে সবচেয়ে এগিয়ে ছিল। এই দুটি জায়গায় বিজয়ীরা কী বিপুল পরিমাণ বই ধ্বংস করেছিল, তা থেকে নিশ্চিত করা যায়, জায়গাগুলো ছিলো জ্ঞান-বিজ্ঞানের তীর্থস্থান।
দ্বিতীয়ত, ইসলামের ইতিহাসে এখনকার সময়টিই সবচেয়ে বড় দুর্যোগপূর্ণ নয়। সবচেয়ে বড় দুর্যোগপূর্ণ সময় ছিল মঙ্গোল আক্রমণ, যাদেরকে ওই সময়ের ইসলামি স্কলার ও মানুষেরা ইয়াজুজ-মাজুজ ভেবে কিয়ামতের অপেক্ষা শুরু করেছিলেন। যেই মঙ্গোলরা কোনো যুদ্ধে হারত না। কিন্তু তাদেরকেও পরাজিত করা গিয়েছিল। ভেবে দেখুন, পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে বড় সাম্রাজ্যের অপ্রতিরোধ্য সেনাবাহিনীর মুখোমুখি হওয়াটা কত বড় ভয়ের ব্যাপার। সেখানে মুখোমুখি হয়ে জয় ছিনিয়ে আনার ব্যাপারটা আজকের অনেকে কল্পনাই করতে পারবে না। তবু বাইবার্স কুতুজরা ঠিকই লড়াই করতে গিয়েছিলেন।
তৃতীয়ত, ইসলামের প্রারম্ভিক কালের বিজয় নিয়ে আলোচনা করি না। কারণ, মানুষ মনে করে, সেগুলো যেন রূপকথার গল্পের মতো বিজয় হয়েছে। মানুষ মনে করে, তখন আল্লাহর রাসুল স. ও সাহাবিরা ছিলেন বলেই বিশাল প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে ক্ষুদ্র বাহিনী বিজয় লাভ করেছে। ওই সময়ের সেরা দুই পরাশক্তির সাথে একইসাথে খালেদ বিন ওয়ালিদ যুদ্ধ করে কিভাবে বিজয়ী হয়েছিলেন, সেটা এখন কেউ শুনতে চায় না। সবাই আব্দুল্লাহ ইবনে উবাইয়ের কথামতো 'এত শক্তিশালী প্রতিপক্ষের সাথে লড়াই অনুচিত তত্ত্ব' শুনতে আগ্রহী। একালের মুসলিমরা পারলে বনি ইসরাঈলের মতো প্রফেট ও তার খোদাকে গিয়ে যুদ্ধ করতে বলে।
স্ট্র্যাটেজিক দিক থেকে যদি দেখুন, পৃথিবীতে এখনো মুসলিমদের পায়ের নিচে বা অধিকারে আছে সবচেয়ে বেশি সম্পদ। স্ট্র্যাটেজিক লোকেশন বিচারেও তাদের অবস্থান সুবিধাজনক। মিলিটারি বাজেট বা সেনাবাহিনীর আকৃতিও কম নয়। তবু আরব-ইসরাইল যুদ্ধগুলোতে আরবরা শক্তিতে এগিয়ে থাকার পরও কী করে হেরে গেল? আরে ভাই, মুসলমানরাও তো অধিকতর শক্তিশালী প্রতিপক্ষের সাথে যুদ্ধে জিতেছে, এমনটা তো হতেই পারে। মনে নেই, পলাশির প্রান্তরে কিভাবে ইংরেজরা যুদ্ধে জিতেছিল?
মনে রাখবেন, মৃত্যুভয় বা দুনিয়ার জিন্দেগির প্রতি ভালোবাসা সবচেয়ে বেশি প্রকট ইহুদি জাতির মাঝে, একেবারে লিজেন্ডারি লেভেলের। হামাসের রকেট বা সাইরেনের শব্দে তাদের মাঝে যে প্যানিক দেখা যায়, সেটা ছাড়াও প্রায় চৌদ্দ শ' বছর আগে নাজিলকৃত কুরআনেই আল্লাহ বলে দিয়েছেন। এখন আমরাও আজকাল হাদিসের ভাষ্য অনুযায়ী ইহুদিদের মতো কাজকারবার শুরু করেছি। বহু দলে বিভক্তি, দুনিয়ার আরাম আয়েশে আসক্তি, দুনিয়ার জিন্দেগি দিয়ে সফলতা বিচার ইত্যাদি সবই তো করে যাচ্ছি। তাহলে ইহুদিদের মতো অপমানের, ভয়ভীতির জীবন কেন আমাদের হবে না?
স্কুলজীবনের অধ্যবসায় রচনার জন্য রবার্ট ব্রুসের কাহিনী পড়েছি। স্কটল্যান্ড হয়তো এখনো পরাধীন। কিন্তু নির্বাচনে জিতে আবারো স্বাধীনতার জন্য চেষ্টা করার ঘোষণা দিয়েছেন ফিলিস্তিনকে সমর্থন করা ওই নারীনেত্রী। আমরা মুসলিমরা না হয় কিছু যুদ্ধে হেরেছি, অপমানিত হয়েছি, শোষিত ও লুন্ঠিত হয়েছি। তাই বলে চিরকালের জন্য কি গোলামি মেনে নিয়েছি? সালাহউদ্দীন আইয়ুবী ৮৮ বছর পর জেরুসালেম জয় করেছিলেন। আমরা না হয় অমুসলিমদের তৈরী ইন্টারনেট ফেসবুক ব্যবহার করি, তাতে কী হয়েছে? আল্লাহ চাইলে আবারো আমাদের বিজয় হবে ইনশাআল্লাহ। কিন্তু সেজন্য চেষ্টা করতে হবে। আল্লাহ কোনো জাতির ভাগ্য পরিবর্তন করেন না, যতক্ষণ না তারা নিজেরা নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তন করে।