বাইডেনের আমলেই আমেরিকা ধ্বংস হবে
জো বাইডেন - ছবি : সংগৃহীত
চলতি বাইডেনের আমলেই আমেরিকা ধ্বংস হয়ে যাবে। স্পিরিচুয়ালিটির ভাষায় বললে, এটাই সঠিক উপযুক্ত বয়ান-ভাষ্য। মানুষের সমাজের ফাউন্ডেশন মানে সমাজ দাঁড়াতে পারে বা দাঁড়িয়ে থাকে ও থাকতে পারে এক ন্যায়-অন্যায় বোধ ইনসাফের ভিত্তির উপরেই একমাত্র। এসব নিয়ে নুন্যতম কিছু মৌলিক বোধের চর্চার ওপর! বাইডেন এর সব ‘সীমা লঙ্ঘন’ করেছেন! তাই বাইডেন ও তার আমেরিকা ধ্বংস হয়ে যাবেই!
আজকের মিডিয়া রিপোর্টগুলোর একটা থেকে তুলে এনেছি; নিচের বাক্যগুলো লক্ষ্য করুন-
হোয়াইট হাউস বলছে, 'আজ ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে কথা বলেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। তিনি ইসরাইলের অধিকারের পক্ষে জোরালো সমর্থন জানিয়েছেন। প্রেসিডেন্ট বলেছেন- হামাস ও অন্যান্য সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর রকেট হামলা ঠেকাতে নিজেকে রক্ষা করার অধিকার রয়েছে ইসরাইলের।'
দেখেন কাণ্ড! বাইডেন নাকি ‘ইসরাইলের অধিকারের পক্ষে জোরালো সমর্থন জানিয়েছেন।' আর হামাস হলো নাকি ‘সন্ত্রাসী গোষ্ঠী’!
মানে কী ফিলিস্তিনিরা মানুষই না?
এটা কি কোনো মানুষের ভাষ্য-বয়ান হতে পারে? অন্যের ঘরবাড়ি দখল করার পর এবার বাইডেন এসেছেন – দখলকারিরই কথিত অধিকার নিয়ে সোচ্চার হতে? দালালি করতে? ছিঃ বাইডেন! আপনি অবশ্যই ধ্বংস হবেন! আপনার ওপর লানত পড়বে!
ওপরের নিউজ রিপোর্ট অংশটা যেটা তুলে এনেছি তা আমাকে একজন ইনবক্সে পাঠিয়েছে। গত কয়েক দিন ধরে অনেকেই রেগুলার তাদের ক্ষোভ-দুঃখের কথা জানাচ্ছেন। মূল কারণ, এটা ন্যায়-অন্যায়ের ফাউন্ডেশনের প্রশ্ন, ধর্মীয় প্রশ্নের দিকটা সেকেন্ডারি। তাই এটা ধর্ম-নির্বিশেষে মানুষের মনে আবেদন ও ক্ষোভ তৈরি করেছে।
এদিকে, এই নিউজ পড়ার পর থেকে মনের ভিতরের ক্ষোভ-বিক্ষোভ অস্থিরতা টের পাচ্ছি। এসব সময়ে আপনাতেই মানুষের সহায় হয়ে দাঁড়ায় এক স্পিরিচুয়াল সেন্স! এখানে সে আশ্রয় খুঁজে পায়। সাথে এক একাত্মবোধ; সংযুক্ত, কানেকটেড– দুনিয়ার দৃশ্যমান-অদৃশ্যমান সবকিছুর সাথে সম্পর্কযুক্ত এক 'রিলেশনাল সেন্স' এটা! কারণ মানুষ রিলেশনাল এলিমেন্ট, মানে সম্পর্কযুক্ততাই মানুষ! এই সেন্সুয়াস অনুভুতিপ্রবণ দিকটা বাইরে রাখলে যে বৈষয়িক মানুষ সে জগতের ইট-কাঠ পাথর ধুলাকণা ইত্যাদির মতো বস্তু মাত্র।
দুনিয়ার সব অন্যায় অবিচার, নিষ্ঠুরতা অত্যাচারিতা বেইনসাফির বিরুদ্ধে আমরা এক স্পিরিচুয়ালিটিকে আশ্রয় করে আমরা রিলেটেড বোধ করি। আমরা দ্রুত ঘুরে দাঁড়াই, একাত্মতায় এক হয়ে উঠে দাঁড়াতে পারি, শক্তি সঞ্চয় করে উঠে দাঁড়িয়ে যেতে পারি, দাঁড়াই। দাঁড়িয়েছি! অতএব বাইডেন তুমি ধবংস হবেই! তোমার ধ্বংস অনিবার্য!
দুনিয়ার বাস্তবের শক্তি রাজনৈতিক, তার ভাষাও রাজনৈতিক। তাই এখন স্পিরিচুয়ালিটি রেখে এখন রাজনৈতিক জগতে ও ভাষায় ফিরব।
আমাকে অনেকে প্রায়ই জিজ্ঞাসা করে, আচ্ছা দুনিয়াতে জায়নবাদীদের অত্যাচারের কী শেষ হবে না? ফিলিস্তিনিদের কী মুক্তি নেই? জবাবে আমি সবসময় বলে এসেছি, রাষ্ট্র হিসেবে আমেরিকা যেদিন ধ্বংস হবে ঢলে পড়বে, সক্ষমতা হারাবে ওই দিন এই ইসরাইল রাষ্ট্র বিলুপ্ত হয়ে যাবে, ফিলিস্তিনিদের মুক্তির দিন হবে সেটা। আজ থেকে কম করে ২০ বছর আগে মানে, যেমন গত শতকের শেষে দুনিয়ার গতিপ্রকৃতি এত স্পষ্ট বোঝা যাবার মতো ছিল না। তাই কথাটা তাত্ত্বিকভাবে কল্পনা করে বলতাম। আজকের দুনিয়ায় গ্লোবাল নেতৃত্বে এক পালাবদল আসন্ন; আমেরিকা হেরে যাচ্ছে, ক্ষমতা থেকে হারিয়ে যাচ্ছে– এমন এর সব চিহ্ন স্পষ্ট হতে শুরু করেছে, যা এখন অনেকটাই পরিষ্কার।
প্রো-আমেরিকান বা প্রো-ইন্ডিয়ান লোকেরা অনেকে সময় আড়ালে নিজেদের মধ্যে বলাবলি করে যে যেহেতু আমি এই পালাবদল নিয়ে নিরন্তর এবং সম্ভবত সবার চেয়ে বেশি করে বলে চলছি তাহলে, নিশ্চয় আমি প্রো-চায়না বা কোনো কমিউনিস্ট।
প্রথমত, এটা আমরা চায়না না আমেরিকান সমর্থক হবো- এমন কোনো লড়াইয়ের ভাগাভাগির ব্যাপার একেবারেই নয়। অর্থাৎ ঘটনার কর্তা বা সাবজেক্ট হিসেবে আমরা কে কোনটার সমর্থক হবো সে আমাদের যার যা ইচ্ছা, অবশ্যই। কিন্তু এই কর্তা-কাহিনীর বাইরে একটা প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঝড়বৃষ্টি, বন্যা যেমন সেটা কিন্তু ব্যক্তি কর্তা ইচ্ছার ঘটনা নয়, সেটাই বলে অবজেকটিভিটি বা প্রাকৃতিক বাস্তবতা। মানে যা আমাদের ব্যক্তি কর্তাসত্ত্বার ইচ্ছার বাইরে ক্রিয়াশীল থাকে আর প্রাকৃতিকভাবে পরিবর্তিত হয়ে যেতে থাকে এবং তৎপর ও হাজির হয়– ঠিক সে রকভাবে ও অর্থে গ্লোবাল নেতৃত্বে পরিবর্তন ব্যাপারটা এটাও এক অবজেকটিভ ও এক পালাবদ্ল আসন্নের ঘটনা।
আর এর সবচেয়ে ভালো প্রমাণ, এনিয়ে রয়েছে আমেরিকারই নিজস্ব সরকারি গবেষণা স্টাডি রিপোর্ট। গত ২০০৮ সাল থেকে চলতি ২০২১ পর্যন্ত নিয়মিত এসব রিপোর্ট আপডেট প্রকাশিত হচ্ছে। এবং সবই এপর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে একই কথা বলে আসছে যে প্রথম আমেরিকার অর্থনীতিতে ফলে নেতৃত্বে পতন ঘটবে। আর এতে এরপর আমেরিকার সব ধরণের ক্ষমতা ও প্রভাবেও পতন ঘটবে, ঢল নামবে। আর বরং এসব গবেষণা রিপোর্ট আমেরিকার খোলা সমাজ বলে যতটা আমরা সহজেই দেখতে পাই, নেটে পেতে পারি ঠিক ততটাই যেন কম আমরা চীনের ভাষ্যগুলো জানতে পারি।
এখন কোনো যুদ্ধে রাজার পরাজয়ের খবর তো কাউকে না কাউকে বয়ে আনতে হবে। যে বয়ে আনে তাকে বাংলায় 'ভগ্নদূত' বলে। কিন্তু প্রায়ই মানুষ যা ভুল করে তা হলো, সে মনে করে বসে যেন ভগ্নদূতই রাজার পরাজয়ের জন্য দায়ী! অথচ তা একেবারেই নয়। তবু ইতিহাসে ভগ্নদূতদের অনেকেই খুন হয়েছেন।
কাজেই প্রো-আমেরিকান বা প্রো-ইন্ডিয়ানদের চোখে আমি ভগ্নদূত অবশ্যই। আমি আমেরিকান রাজত্বের পরাজয় ঘটানোর কোনো নায়ক নই। অথবা আমি চীন-পছন্দের কেউ নই। আমি আমেরিকান স্টাডি রিপোর্ট পড়েই তা ব্যাখ্যা করে মূলত আমেরিকান পতনের প্রসঙ্গ বিশ্লেষণ করি।
এবার পাঠকেরা অবকজেকটিভ চোখে দেখুন-
গ্লোবাল নেতা হিসেবে অ্যামেরিকার পতন আসন্ন ও অনিবার্য। এটাই আমি বলছি। ওপরে যেটা বেইনসাফি জুলুমের ঘটনা– বাইডেনের নিষ্ঠুর অমানুষ পাষাণ চরিত্রকে দোষারোপ করছিলাম, আর স্পিরিচুয়াল সান্ত্বনা খুঁজে সেই চোখে প্রথম প্যারাটা লিখছিলাম আর দীপ্তকন্ঠে স্পিরিচুয়ালি বলেছিলাম যে বাইডেন ধবংস হবে– এখন সেই কথাটাই নিচে আবার স্পিরিচুয়ালিটি রেখে বস্তুগত স্টাডি বোঝাবুঝির চোখে বলছি বাইডেনের আমেরিকা ধ্বংস হয়ে যাবে আর তা আসন্ন।
গত ১৯৪৮ সালের পর থেকে আমেরিকা ইসরাইলকে নিয়মিত রক্ষা করে আসছে, সমর্থন করেছে। কিন্তু এবারের বাইডেনের আমেরিকার একই অবস্থান কিন্তু হবে অনেক বেশি নির্ধারক। এই অর্থে যে তা আমেরিকার নিজের পতনকে ডেকে আনা ত্বরান্বিত করবে। তার এবারের অবস্থানকে আগামী দিনের ঐতিহাসিকেরা মূল্যায়ন করে বলবে বাইডেন কিভাবে ফিলিস্তিন ইস্যুতে নিজের পতন আরো তাড়াতাড়ি ও অনিবার্য করে তুলেছিল।
আবার বাইডেন যে হিউম্যান রাইট প্রশ্নে অবস্থান একেবারেই ভুয়া, তুচ্ছ এক তৃতীয় শ্রেণীর ব্যক্তিত্ব ও দালাল, তাই তিনি প্রমাণ করেছেন।
সব মিলিয়ে বদলে যাওয়া আসন্ন দুনিয়া দেখতে কেমন হবে? এতে সবার আগে বদল হবে মধ্যপ্রাচ্যের মানচিত্রে। তাতে চীন-ইরানের ২৫ বছরের চুক্তি এটা দাঁড়াবে সব কিছুর কেন্দ্রে। আমেরিকান গ্লোবাল নেতৃত্বের আমলে মধ্যপ্রাচ্যে সৌদি-র যে কেন্দ্রীয় ভূমিকা ছিল তা বদলে চলে যাবে ইরানের হাতে। দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিবে কাতার, আর সাথে তুরস্ক, পাকিস্তান, মালয়েশিয়া, বাংলাদেশ বা অন্যরা। আর সৌদি, দুবাইয়ের মতো এরাও নতুন করে পালাবদলে গঠিত এই আঞ্চলিক ক্ষমতার পিছনের সারিতে থেকে যোগ দেবার সুযোগ পাবে। কিন্তু সেটা কী চেহারায় তা, নির্ভর করছে চীনের সাথে তাদের সম্পর্ক সাজানোর ওপর আর ‘সদাচরণের’ ওপর। মূল কারণ ইরানের হাতে ‘তাদের’ ধ্বংস হওয়া ঠেকে গিয়ে তারা স্বাভাবিক কোন দেশ-রাষ্ট্র হয়ে হাজির থাকার ভারসাম্যটা থাকবে চীন-রাশিয়ার হাতে।
এক্ষেত্রে সবচেয়ে আদর্শ হতে পারে, একটা ব্রডবেস নতুন মধ্যপ্রাচ্যনীতি- যার পিছনে থাকবে ইসলামি জনসংখ্যা প্রধান দেশগুলোর এক ফান্ডামেন্টাল ও কমন অবস্থান দাঁড় করানো ও এর ঐ নীতির সমর্থন– এই বিষয়টা যত দ্রুত আকার পাবে ততই সবকিছু উঠে দাঁড়াতে পারবে।
আর এই সম্মিলিত শক্তিটাই প্রথম চীনা গ্লোবাল নেতৃত্বে নতুন করে সাজানো দুনিয়ায় প্রথম নির্ধারক ঘটনা হবে। এই শক্তিই বাধ্য ও নির্ধারণ করবে ইসরাইলের ভবিষ্যত। তবে ইসরাইলই ঠিক করবে সে যুদ্ধে ধ্বংস হবে, না আলোচনার টেবিলে। ধ্বংস হওয়াটা অনিবার্য। আর তাতে বলাই বাহুল্য, ফিলিস্তিনিদেরও দুঃখের দিনের অবসান ঘটবে, মুক্তির আলো ফুটবে ।
এই মুহূর্তে যতটুকু দূরে দেখা যাচ্ছে সেটাকে ভিত্তি করে, বড় বড় চোখে তাকিয়ে এক কল্পনার ছবি আঁকলাম।
লেখক : রাজনৈতিক বিশ্লেষক
goutamdas1958@hotmail.com