যেভাবে কাজ করে আয়রন ডোম
যেভাবে কাজ করে আয়রন ডোম - ছবি : সংগৃহীত
পূর্ব জেরুসালেমের শেখ জারাহ মহল্লায় ইসরাইলি উচ্ছেদ অভিযান এবং এরপর আল-আকসা মসজিদে মুসুল্লিদের ওপর ইসরাইলি বাহিনীর হামলার প্রতিবাদে রকেট নিক্ষেপ শুরু করেছিল গাজা উপত্যকা নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস। ঝাঁকে ঝাঁকে রকেট ইসরাইলের বিভিন্ন স্থানে আঘাত হানে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ২০১৪ সালের পর এত বড় যুদ্ধ এই প্রথম দেখছে ইসরাইল। এই হামলার পাল্টা জবাব দিয়েছে ইসরাইলও। প্রচণ্ড বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরাইল। ইসরাইলের বিমান হামলায় গাজার ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বিপুলসংখ্যক লোক হতাহত হওয়ার পাশাপাশি অনেক ভবন ধ্বংস হয়েছে। গাজার কয়েকটি আইকনিক ভবনও এভাবে ধসিয়ে দিয়েছে ইসরাইল। সম্ভবত ইসরাইলের ক্ষেপণাস্ত্রের চেয়ে বেশি রকেট নিক্ষেপ করেছে হামাস। কিন্তু সে তুলনায় তেমন ক্ষতিই হয়নি ইসরাইলের। অল্প কয়েকজন নিহত হওয়ার পাশাপাশি ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণও সামান্য। আর ইসরাইল এই সাফল্য পেয়েছে তাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে।
আর বর্তমানে এই প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে বিশ্বজুড়ে। সেটি হলো ইসরাইলের বিশেষ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। যার সাহায্যে বেশির ভাগ রকেটের অভিমুখ ঘুরিয়ে দিয়ে কিংবা নিখুঁত নিশানায় আকাশেই সেগুলোকে ধ্বংস করে দিয়েছে তারা।
কী এই বিশেষ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা? এর পোশাকি নাম আয়রন ডোম সিস্টেম। এই মুহূর্তে ইসরাইলের সবচেয়ে আলোচিত প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এটি।
রাফাল অ্যাডভান্সড ডিফেন্স সিস্টেমস ও ইসরাইল এরোস্পেস ইন্ডাস্ট্রিজের যৌথ উদ্যোগে তৈরি করা হয়েছিল এই প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাটি।
২০১১ সালের ২৭ মার্চ ইসরাইলের বীরসেবার কাছে প্রথম এই আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা বসানো হয়। তারও এক মাস পরে এই যন্ত্র কাজে লাগে ইসরাইলের।
ওই বছর ৭ এপ্রিল প্রথম কাজে লাগে এটি। ফিলিস্তিনিদের ছোড়া একটি ক্ষেপণাস্ত্রকে শনাক্ত করে আকাশেই ধ্বংস করে দেয়।
কাজ শুরু করার মাত্র ৩ বছরের মধ্যে ফিলিস্তিনিদের ছোড়া অন্তত ১২০০ রকেট এবং ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংস করে দেয় এই প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। ওই সমস্ত রকেট ইসরাইলের বিভিন্ন স্থানকে লক্ষ্য করেই ছোড়া হয়েছিল বলে অভিযোগ।
ফিলিস্তিনি আক্রমণের হাত থেকে নাগরিকদের নিরন্তর সুরক্ষা দিয়ে যাচ্ছে এই প্রতিরক্ষ ব্যবস্থা। সামরিক বিশেষজ্ঞদের মতে, এর ৯০ শতাংশ লক্ষ্য নির্ভুল। যার অর্থ এখন পর্যন্ত ইসরাইলের বুকে আঘাত হানার জন্য যতগুলো রকেট ছোড়া হয়েছে তার ৯০ শতাংশকে আকাশেই ধ্বংস করে দিয়েছে আয়রন ডোম।
আয়রন ডোম তার আশেপাশে নূন্যতম ৪ কিলোমিটার থেকে সর্বোচ্চ ৭০ কিলোমিটার দূরত্ব থেকে ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র শনাক্ত করতে পারে।
ইসরাইলের প্রতিরক্ষা বাহিনী এর ক্ষমতা আরো বাড়ানোর চেষ্টা করে চলেছে। ৭০ কিলোমিটার থেকে বাড়িয়ে সর্বোচ্চ সীমা ২৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত হতে চলেছে।
দিনে, রাতে ও সমস্ত আবহাওয়াতেই একইভাবে কাজ করে চলে আয়রন ডোম। ইসরাইলের পরে আমেরিকাও এই প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তুলেছে। আমেরিকার ‘আয়রন ডোম’-এর নাম স্কাই হান্টার।
সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা