হামাসের সুড়ঙ্গ কৌশল বনাম ইসরাইলের ছলচাতুরি

অন্য এক দিগন্ত | May 15, 2021 03:34 pm
হামাসের সুড়ঙ্গ কৌশল বনাম ইসরাইলের ছলচাতুরি

হামাসের সুড়ঙ্গ কৌশল বনাম ইসরাইলের ছলচাতুরি - ছবি : সংগৃহীত

 

অর্থ ও সামরিক শক্তিতে ইসরাইলের সঙ্গে পেরে ওঠা যাবে না, তা অনেক আগেই বুঝে গিয়েছিল গাজা উপত্যকা নিয়ন্ত্রণকারী ফিলিস্তিনি সংগঠন হামাস। তাই বলে হাল ছাড়ার পাত্র নয় তারা। আশ্রয় নেয় কৌশলের। এর জের ধরে মাটির নিচে জাল বিস্তার করতে শুরু করেছিল তারা। বছরের পর বছর ধরে গাজা থেকে ইসরাইলের উপকণ্ঠ পর্যন্ত শিকড়ের মতো সুড়ঙ্গ বিস্তার করেছিল তারা।

এবারের লড়াই শুরু হওয়ার পর তারা অবশ্য এই সুড়ঙ্গেও ক্ষতির মুখে পড়েছে। শুক্রবার গভীর রাতে ৪০ মিনিট ধরে একনাগাড়ে ৪৫০টি ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে তার বেশির ভাগ গুঁড়িয়ে দিয়েছে ইসরাইলি সেনাবাহিনী। ক্ষেপণাস্ত্রর পাশাপাশি ১ হাজার বোমা এবং গোলাও ছুড়েছে ইসরাইল। তাতে এত বছর ধরে গড়ে তোলা মাইলের পর মাইল এলাকা জুড়ে অবস্থিত হামাসের সুড়ঙ্গপথের একটা বড় অংশ ধুলিসাৎ হয়ে গিয়েছে।

তবে মুখোমুখি যুদ্ধে এই অসাধ্য সাধন হয়নি। বরং তার জন্য ছল-চাতুরির আশ্রয় নিতে হয়েছে ইসরাইলি বাহিনীকে। শুক্রবার মধ্যরাতে আচমকাই ইসরাইলি সেনাবাহিনী ঘোষণা করে যে তাদের স্থলবাহিনী সরাসরি গাজায় হামলা করতে চলেছে।

এই ঘোষণার সাথে সাথেই গাজা থেকে সুড়ঙ্গ পথ ধরে দলে দলে যোদ্ধাদের অস্ত্রশস্ত্র সমেত ইসরাইলের উদ্দেশে পাঠাতে শুরু করে হামাস। কিন্তু আকাশপথে আগে থেকেই বোমারু বিমান, ক্ষেপাণাস্ত্র ও গোলাগুলি নিয়ে তৈরি ছিল ইসরাইলি বাহিনী।

গুপ্তচর মারফত যেই না সুড়ঙ্গ পথে হামাস যোদ্ধাদের প্রবেশের খবর মেলে, এলোপাথাড়ি ক্ষেপণাস্ত্র ও বোমা বর্ষণ করতে শুরু করে তারা। তাতেই সমস্যায় পড়ে হামাস। এর পর ইসরাইলি সেনার এক মুখপাত্র ঘোষণা করেন, তাদের কোনো সেনাই সীমানা পার করেনি। তা না করেই লক্ষ্যপূরণ হয়েছে।

‘ইসরাইলি আগ্রাসন’-এর হাত থেকে ফিলিস্তিনকে রক্ষার জন্য গত তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে লড়াই করে চলেছে হামাস। ইসরাইল ও আমেরিকার মতো দেশ তাদের জঙ্গি সংগঠন বললেও, রাশিয়া, চীন ও ইরানের মতো দেশ তাদের দাবিদওয়াকে সমর্থন করে।

ফিলিস্তিনে অন্যত্র ইসরাইলি আগ্রাসন প্রবেশ করলেও গাজায় তাদের ঠেকিয়ে রেখেছে এই হামাসই। হাতে মারতে না পেরে ভাতে মারার কৌশলও নিয়েছে ইসরাইল। অর্থনৈতিকভাবে গাজাকে একেবারে কোণঠাসা করে রেখেছে তারা। বহির্জগতের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য হয়ই না গাজার। যে কারণে সেখানে বেকারত্বের হার প্রায় ৫০ শতাংশ।

নিষেধাজ্ঞার জেরে ব্যবসা-বাণিজ্যের এই প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে উঠতে ২০০৭ সাল নাগাদ মাটির নিচ দিয়ে সুড়ঙ্গ খোঁড়ার কাজ শুরু হয় গাজায়। প্রাথমিক উদ্দেশ্য ছিল ওই সুড়ঙ্গপথ ধরে পড়শি দেশ মিসর থেকে গোপনে পণ্য আদান প্রদান করা। যদিও তার আগে ২০০২ সালে বেশ কিছু এলাকাজুড়ে সুড়ঙ্গপথ গড়ে তোলা হয় সেখানে। এর মধ্যে একটি ব্যবহার করেই ২০০৪ সালে ইসরাইলি সেনার উপর হামলা চালানো হয়।

গাজা থেকে সুড়ঙ্গ পথে সীমা পেরিয়ে প্রথম বার ইসরাইলের উপর হামলা হয় ২০০৬ সালে। সেবার ইসরাইলি সেনা গিলাদ শালিতকে অপহরণ করে পাঁচ বছর বন্দি করে রাখা হয়। ২০০৭ সালে হামাসের হাতে গাজার পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ চলে যাওয়ার পর ওই সুড়ঙ্গপথ ধ্বংস করতে উঠে পড়ে লাগে ইসরাইলি বাহিনী। তাতেই মিসর থেকে ইসরাইলের দিকে সুড়ঙ্গপথের অভিমুখ ঘুরিয়ে দেয় হামাস।

২০১৩ সালে ইসরাইল-গাজা সীমান্তের ঠিক নিচে তিনটি আলাদা আলাদা সুড়ঙ্গ পথ গড়ে তোলা হয়। খান ইউনিস, জাবালিয়া ও শাতি শরণার্থী শিবির হয়ে সেগুলো ইসরাইলের ভিতরে গিয়ে শেষ হয়। হামাস ছাড়াও, বিভিন্ন ফিলিস্তিনি চরমপন্থী সংগঠন ওই সুড়ঙ্গপথ নিজেদের প্রয়োজনে ব্যবহার করে। এমনকি ওই সুড়ঙ্গেই ক্ষেপণাস্ত্র, বোমা, অস্ত্রশস্ত্র লুকিয়ে রাখা হতো। পরে আরো বিস্তার লাভ করে ওই সুড়ঙ্গপথ।

ওই সুড়ঙ্গপথ থেকেই সংগঠনের যাবতীয় কাজকর্ম পরিচালনা করা হতো। সংগঠনের সদস্যরাও বিপদে ওই সুড়ঙ্গেই আশ্রয় নিত। সেখান থেকেই হামলা করা হতো। ২০১৪ সালে ইসরাইলের সঙ্গে যুদ্ধ বাধলে ওই সুড়ঙ্গপথেই যাবতীয় অস্ত্রশস্ত্র মোতায়েন করে হামাস। হামলা চালিয়ে ওই পথ ধরেই ফিরে যেত হামাস।

তবে সুড়ঙ্গপথেও সে ভাবে ইসরাইলের বিরুদ্ধে সুবিধা করতে পারেনি হামাস। বরং ২০১৪-র যুদ্ধে ২ হাজার ২৫১ জন ফিলিস্তিনি মৃত্যু হয়। ইসরাইলের তরফে প্রাণহানি ঘটে মাত্র ৭৪ জনের। সব মিলিয়ে ১০ হাজারের বেশি মানুষ আহত হন। ঘরছাড়া হন ১০ হাজারের বেশি মানুষ।

ওই সময় ৩২টি সুড়ঙ্গ ভেঙে দেয়া হয়েছিল বলে জানায় ইসরাইল। সুড়ঙ্গপথে হামাসকে রুখতে মাটির নিচে আলাদা করে ৪১ মাইল দীর্ঘ কংক্রিটের সীমান্তও গড়ে তোলে তারা। তাতে সেন্সর বসানো হয়, যাতে মাটির নিচে যে কোনো গতিবিধি ধরা পড়ে।

কিন্তু ওই সেন্সর এড়িয়েও হামাস নতুন করে সুড়ঙ্গপথ গড়ে তুলতে সক্ষম হয় বলে জানা গেছে। শুক্রবার রাতে সেগুলোই ধ্বংস করে দিয়েছে ইসরাইলি বাহিনী। তার তীব্রতায় গাজার রাস্তাঘাটও চৌচির হয়ে গিয়েছে। তবে ঠিক কতজনের প্রাণহানি ঘটেছে, তা এখন পর্যন্ত জানা যায়নি।

সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us