ইসরাইল-হামাস লড়াই : এবারের শুরু যেভাবে

সাবিনা আহমেদ | May 15, 2021 12:40 pm
আল আকসা মসজিদ কমপ্লেক্স

আল আকসা মসজিদ কমপ্লেক্স - ছবি : সংগৃহীত

 

ইসরাইল ও গাজা উপত্যকা নিয়ন্ত্রণকারী হামাসের মধ্যে তীব্র লড়াই চলছে। উভয় পক্ষই লড়াই বন্ধ করার কোনো আগ্রহ প্রকাশ করেনি। ইসরাইল ও হামাসের মধ্যে অনেকবারই লড়াই হয়েছে। এবারের লড়াইটা শুরু হয়েছে পূর্ব জেরুসালেমের শেখ জাররাহ মহল্লা থেকে ফিলিস্তিনিদের উৎখাতের চেষ্টা থেকে। এরপর আল-আকসা মসজিদে মুসুল্লিদের ওপর হামলা হয়। এর জের ধরে শুরু হয় ইসরাইল-হামাস আরেক দফা লড়াই।

ইসরাইলিরা অনেক দিন ধরেই মুসলিমদেরকে তাদের ভিটামাটি থেকে উৎখাত করে চলেছে। সংক্ষেপে বলা যায়,
ইসরাইলি সেটেলাদের বাড়ি দখলের প্রক্রিয়াটা এরূপ :

১) তারা যেই বাড়ি দখলের জন্য টার্গেট করে তার কাগজপত্র আদালতে পেশ করে। আবার অনেক সময় সরকার ঠিক করে কোন কোন বাড়িতে তারা সেটেলারদের বসাবে। এরপর ওই সব বাড়ির কাগজপত্রে দেখানো হয় কোনো এককালে এই জমি বা বাড়ি তাদের পূর্বপুরুষদের ছিল।

২) আদালত ওইসব কাগজপত্র ভেরিভাই না করেই কেবল কাগজের ভিত্তিতে আরব, মূলত মুসলমানদের, ওই বাড়ি ছেড়ে চলে যাওয়ার নির্দেশ দেয়।

৩) এরপর আরবেরা যদি পালটা কাগজ দেখিয়ে প্রমাণ করতে চায় যে আসলে এই জমি বহুপুরুষ ধরে তাদের, আদালত তা গণ্য করে না। বস্তুত, আদালত আরবদের সেটা প্রমাণের কোনো সুযোগও দেয় না।

৪) এরপর কোনো একসময় সেটেলারেরা ইসরাইলি সিকিউরিটি ফোর্সসহ এসে জোর করে বাড়িতে ঢুকে বাড়ির মুসলমান বাসিন্দাদের ঠেলে বের করে দিয়ে ওই বাড়ি দখলে নেয়। রাতারাতি ওই বাড়ির মুসলমান বাসিন্দা পথে বসে পরে। তাদের জন্য আদালত অন্য কোন বাড়িও বরাদ্দ করে না, কিংবা তাদের কোনরূপ আর্থিক ক্ষতিপূরণও দেয়া হয় না।

৫) প্রথমে এক বাড়ি, দুই বাড়ি করে দখল করতে করতে একসময় পুরো শহরটিই তারা দখল করে নেয়।

এখন আমরা ইসরাইলে যে বিক্ষোভ দেখছি তা এই জোর করে ইস্ট জেরুসালেমের মুসলমান বাড়ি দখল করার জের ধরেই শুরু। এর আগে যখন অধিকৃত পশ্চিম তীরে এমন দখলদারি হয়েছে তখন মূলত ইসরাইলি শহরগুলোতে আরবেরা শান্ত ছিল।

উল্লেখ্য, বিপুলসংখ্যক মুসলমান আছে যারা ইসরাইলের নাগরিক। কিন্তু এবার যখন পূর্ব জেরুসালেমের মুসলিম ডজনখানেক বাড়ি দখলে আদালত আদেশ করে তখন ইসরাইলি আরবেরা জ্বলে উঠেছে, রাস্তায় রাস্তায় ইসরাইলের প্রায় প্রতিটি শহরে তারা বিক্ষোভে নেমেছে। মুখোমুখি দাঁড়িয়েছে একই দেশের ইহুদি আর মুসলমান জনগোষ্ঠী, যা এর আগে ইসরাইলে কখনো ঘটেনি।

উঁল্লেখ্য মুসলমানেরা ভবিষ্যত ফিলিস্তিন রাজধানী হিসেবে ইস্ট জেরুসালেমকে গণ্য করে, এবং এখানেই মসজিদ উল আল আকসা অবস্থিত। আবার এখানেই ইহুদিদের ওয়েস্টার্ন ওয়াল আর সলোমনের টেম্পল ছিল বলে মনে করে ইহুদিরা। ফিলিস্তিনিদের সাথে ইসরাইলিদের প্রধান বিরোধ এই ইস্ট জেরুসালেমকে কেন্দ্র করেই। কেউই ইস্ট জেরুজালেমের দাবি ছাড়ছে না। যদিও, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এসে ইস্ট জেরুসালেম ইসরাইলের অন্তর্ভুক্ত বলে ঘোষণা দিয়ে মেনে নিয়েছেন। কিন্তু কেবল মার্কিন সরকার মেনে নিলেই আন্তর্জাতিকভাবে ইসরাইলের হয়ে যায়নি। তাই একে ঘিরে বিক্ষোভ আর চক্রান্ত এখনো জারি রয়েছে।

আমরা দেখেছি, গত সপ্তাহে কিভাবে আল আকসা মসজিদে ইসরাইলি সেনারা ঢুকে রাবার বুলেট, স্টান গ্রেনেড, কাঁদানে গ্যাস দিয়ে মুসলমানদের আহত করেছে। তাদের মসজিদ ছেড়ে চলে যেতে আদেশ দিয়েছে, কিন্তু মুসলমানেরা শুনেনি। প্রতি রাতেই তারা ফিরে এসেছে তারাবি পড়তে, কেউ কেউ মসজিদ ছেড়ে একেবারেই বের হয়নি।

এরপর পাঁচ শতাধিক মুসলমান আহত, ৩০-এর অধিক নিহত, আর অগুণিত মুসলমানকে ইসরাইলি কর্তৃপক্ষ গ্রেফতার করেছ। এসব ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর গাজায় অবস্থিত হামাস আর ফিলিস্তিনি ইসলামিক জিহাদ ইসরাইলকে ১০ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেয় যে তাদের সেনারা যেন আল আকসা প্রাঙ্গন থেকে সরে যায়, অন্যথায় তারা রকেট হামলা করবে।

স্বাভাবিকভাবেই, ইসরাইল এসব হুমকিতে ভ্রুক্ষেপ করেনি। আর কথা মতো হামাস আর ইসলামিক জিহাদ গ্রুপ তাদের লাগাতার রকেট হামলা শুরু করে। এই প্রথম দেখা গেছে, ইসরাইলের বিশ্ব বিখ্যাত মিসাইল ডিফেন্স সিস্টেম 'আয়রন ডোম' সব রকেট ঠেকাতে সক্ষম হয়নি। হামাসের রকেটে ইসরাইলিরা আহত আর নিহতও হয়েছে। এমনকি তাদের অয়েল রিফাইনারিতে মিসাইল আঘাত করতে সক্ষম হয়েছে। এমনটা ঘটল এই প্রথম।

এদিকে হামাসের আক্রমণের পর ইসরাইল গাজা আক্রমণ করেছে শক্তভাবে। ইসরাইলি সূত্রমতে হামাসের মিলিটারির ১৬ জন মেম্বারকে ইতিমধ্যে হত্যা করতে সক্ষম হয়েছে ইসরাইল।

আমার তো মনে হয় না জেরুসালেম, গাজা, পশ্চিম তীরের সকল মুসলমানকে হত্যা করা ছাড়া ইসরাইল থামবে। কারণ একজন মুসলমানও যদি বেঁচে থাকে তাহলে সেও আল্লাহু আকবর বলে মসজিদুল আল আকসা ধরে পড়ে থাকবে। সেক্ষেত্রে তো ইসরাইলের পুররো রাষ্ট্র তার নিউক্লিয়ার আর্মস, আয়রন ডোম, ট্যাঙ্ক, এফ-৩৫ নিয়ে হুমকিতে আছে বলে মনে করবে, আর তাদের মনে হবে জেরুসালেম তাদের দখল থেকেও চলে যাবে।


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us