কেন আল-আকসা এত গুরুত্বপূর্ণ

অন্য এক দিগন্ত | May 13, 2021 07:38 am
কেন আল-আকসা

কেন আল-আকসা - ছবি : সংগৃহীত

 

আল-আকসা ফিলিস্তিনের মধ্যে একটি ছোট এলাকা, কিন্তু প্রতীকীভাবে এটি ইসরায়েলি এবং ফিলিস্তিনিদের মধ্যে সংঘর্ষের একটি বড় অংশ ।

আল-আকসা একটি ৩৫-একর যৌগিক চক্রের মধ্যে রূপার আস্তরণযুক্ত মসজিদের নাম। জেরুসালেমের পুরাতন শহর, যা জাতিসঙ্ঘ সাংস্কৃতিক সংস্থা ইউনেস্কোর দ্বারা একটি বিশ্ব ঐতিহ্য স্থান হিসাবে চিহ্নিত হয়েছে। এটি তিন ইব্রাহিমী ধর্মের (মুসলিম, ইহুদি, খ্রিস্টান) জন্য গুরুত্বপূর্ণ ।

মুসলমানদের জন্য ইসলামের তৃতীয় পবিত্রতম স্থান আল-আকসা মসজিদ। সপ্তম শতকের কাঠামো এটি যেখানে নবী মুহাম্মদ সা: মেরাজের দিন বেহেশতে যাত্রা করেছিলেন। কম্পাউন্ডের পশ্চিম প্রাচীর ইহুদীদের কাছে ওয়ালিং প্রাচীর নামে পরিচিত, দ্বিতীয় গির্জার শেষ অবশিষ্ট বলে মনে করা হয়। মুসলিমরা এটাকে আল-বুরাক প্রাচীর হিসেবে উল্লেখ করে এবং বিশ্বাস করে যে এখানে নবী মুহাম্মদ সা: আল-বুরাকে আরোহণ করে আসমানে উঠে আল্লাহর সাথে কথা বললেন । ১৯৬৭ সাল থেকে, জর্ডান এবং ইসরাইল সম্মত হয় যে ইসলামী ট্রাস্ট, চক্রের
ভিতরে বিষয় নিয়ন্ত্রণ করবে, কিন্তু ইসরাইল বাহ্যিক নিরাপত্তা নিয়ন্ত্রণ করবে । অমুসলিমদের সাইটে ঘুরতে যাওয়ার সময় অনুমতি দেয়া হবে।

পবিত্র শহর জেরুসালেমে রয়েছে হযরত ইব্রাহিম আ: এবং মূসা আ:সহ অসংখ্য নবী রাসুলের কবর। এখানেই আল্লাহর মহানবী রাসুল সা: সকল নবী রাসুল এবং ফেরেস্তাদেরকে নিয়ে নামাজ পড়ছিলেন মেরাজ রাতে। সেই জামাতের ইমাম ছিলেন মহানবী হজরত মুহাম্মদ সা: আর এই জামাতে শরিক ছিলেন নবী রাসুলগণ। পবিত্র
আল আকসা মসজিদের নির্মাণের সাথে জড়িয়ে আছে হজরত আদম এবং সুলাইমান আ: এর নাম। এর সাথে জড়িয়ে আছে খলিফা হজরত উমর রা: এর সেই বিখ্যাত উটের বিরল ঘটনা। এর সাথেই জড়িয়ে আছে সুলতান সালাউদ্দিন আইয়ুবীর অসংখ্য স্মৃতি। এই মসজিদের পাথরের গায়ে লেখা রয়েছে সম্পূর্ণ সূরা ইয়াসিন। এই মসজিদের জন্য হজরত সোলাইমানের নির্দেশে জ্বিনরা পাথর উত্তোলন করে আনে গহীন সাগরের তলদেশ থেকে। যা কিনা কোনো মানুষের পক্ষে সম্ভব ছিল না।


আল-আকসা মসজিদ উইকিপিডিয়ার তথ্য

আল-আকসা মসজিদ মসজিদুল আকসা বা বাইতুল মুকাদ্দাস নামেও পরিচিত জেরুসালেমের পুরনো শহরে অবস্থিত ইসলামের তৃতীয় পবিত্রতম মসজিদ। এটির সাথে একই প্রাঙ্গণে কুব্বাত আস সাখরা, কুব্বাত আস সিলসিলা ও কুব্বাত আন নবী নামক স্থাপনাগুলো অবস্থিত। স্থাপনাগুলোসহ এই পুরো স্থানটিকে হারাম আল শরিফ বলা হয়। এছাড়াও স্থানটি 'টেম্পল মাউন্ট' বলে পরিচত এবং ইহুদি ধর্মে পবিত্র বলে বিবেচিত হয়। ইসলামের বর্ণনা অনুযায়ী মুহাম্মদ সা. মিরাজের রাতে মসজিদুল হারাম থেকে আল-আকসা মসজিদে এসেছিলেন এবং এখান থেকে তিনি ঊর্ধ্বাকাশের দিকে যাত্রা করেন। ইতিহাসবিদ পণ্ডিত ইবনে তাহমিয়ার মতে, আসলে সুলায়মানের তৈরি সম্পূর্ণ উপাসনার স্থানটির নামই হলো মসজিদুল আল-আকসা। মুহাদ্দিসরা এই বিষয়ে একমত যে সম্পূর্ণ উপাসনার স্থানটিই ইসলামের নবী সুলাইমান (আলাইহিস সালাম) তৈরি করেছিলেন যা পরে ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। মুসলমানরা বিশ্বাস করে, নির্মাণের পর থেকে এটি ঈসা আঃ (খ্রিস্টধর্মে যিশু)সহ অনেক নবীর দ্বারা এক আল্লাহকে উপাসনার স্থান হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে এসেছে। এ স্থান মুসলিমদের প্রথম কিবলা। হিজরতের পর কুরআনের আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার কারণে কাবা নতুন কিবলা হয়। বর্তমানে 'আল-আকসা' মসজিদ বলতে বোঝাায় কিবলি মসজিদ, মারওয়ানি মসজিদ ও বুরাক মসজিদের (৩টির) সমন্বয় যা 'হারাম আল শরীফ'-এর চার দেয়ালের মধ্যেই অবস্থিত।

খলিফা উমর বর্তমান মসজিদের স্থানে একটি মসজিদ নির্মাণ করেছিলেন। পরে উমাইয়া খলিফা আবদুল মালিকের যুগে মসজিদটি পুনর্নির্মিত ও সম্প্রসারিত হয়। এই সংস্কার ৭০৫ খ্রিষ্টাব্দে তার পুত্র খলিফা প্রথম আল ওয়ালিদের শাসনামলে শেষ হয়। ৭৪৬ খ্রিষ্টাব্দে ভূমিকম্পে মসজিদটি ধ্বংসপ্রাপ্ত হলে আব্বাসীয় খলিফা আল মনসুর এটি পুনর্নির্মাণ করেন। পরে তার উত্তরসুরি আল মাহদি এর পুনর্নির্মাণ করেন। ১০৩৩ খ্রিষ্টাব্দে আরেকটি ভূমিকম্পে মসজিদটি ক্ষতিগ্রস্ত হলে ফাতেমীয় খলিফা আলি আজ-জাহির পুনরায় মসজিদটি নির্মাণ করেন যা বর্তমান অবধি টিকে রয়েছে।

বিভিন্ন শাসকের সময় মসজিদটিতে অতিরিক্ত অংশ যোগ করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে গম্বুজ, আঙ্গিনা, মিম্বর, মিহরাব, অভ্যন্তরীণ কাঠামো। ১০৯৯ খ্রিষ্টাব্দে ক্রুসেডাররা জেরুসালেম দখল করার পর তারা মসজিদটিকে একটি প্রাসাদ এবং একই প্রাঙ্গণে অবস্থিত কুব্বাত আস সাখরাকে গির্জা হিসেবে ব্যবহার করত। সুলতান সালাহউদ্দিন জেরুসালেম পুনরায় জয় করার পর মসজিদ হিসেবে এর ব্যবহার পুনরায় শুরু হয়। আইয়ুবী, মামলুক, উসমানীয়, সুপ্রিম মুসলিম কাউন্সিল ও জর্ডানের তত্ত্বাবধানে এর নানাবিধ সংস্কার করা হয়। বর্তমানে পুরনো শহর ইসরাইলি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে তবে মসজিদটি জর্ডা‌নি/ফিলিস্তিনি নেতৃত্বাধীন ইসলামি ওয়াকফের তত্ত্বাবধানে রয়েছে।


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us