প্রসূতিদের কি টিকা নেয়া উচিত?
প্রসূতিদের কি টিকা নেয়া উচিত? - ছবি : সংগৃহীত
সন্তানসম্ভবা ও ব্রেস্টফিডিং করাচ্ছেন এমন নারী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলে রোগ জটিল দিকে যাওয়ার আশঙ্কা খুব বেশি। কারণ এমন অবস্থায় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেকটাই কম থাকে। ওই সুযোগে খুব সহজেই সন্তানসম্ভবা ও ব্রেস্টফিড করানো নারীর শরীরে এই ভাইরাস সমস্যা তৈরি করে। বিভিন্ন সমীক্ষায় দেখা গেছে, প্রেগনেন্সির সময় করোনা আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার আশঙ্কা খুব বেশি। অপরদিকে ব্রেস্টফিড করার সময় ভর্তির হারটা কম নয়। তাই গোটা বিশ্বের চিকিৎসককূলের তরফে, এই দুই শ্রেণির নারীদের রোগ প্রতিরোধ করার বিষয়েই জোর দিতে বলা হচ্ছে। এক্ষেত্রে রোগের বিরুদ্ধে অন্যতম রক্ষাকবচ হলো টিকা। এই বিষয়টি মাথায় রেখেই আমেরিকার ‘সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি)’ ২৪ মার্চ নির্দেশিকা দিয়েছে, মা হতে চলা এবং ল্যাকটেটিং মহিলারা অবশ্যই ভ্যাকসিন নেবেন।
কিন্তু এর উল্টোচিত্র ভারতে। ভারতে এখন পর্যন্ত সব ক্ষেত্রে টিকার আওতায় এই দুই শ্রেণীর নারীদের জায়গা হয়নি। যা সত্যিই দুর্ভাগ্যজনক।
কেন নিতে পারবেন না?
ভারতে এখন দু’টি ভ্যাকসিন দেয়া হচ্ছে— কোভিশিল্ড ও কোভ্যাক্সিন। এক্ষেত্রে ভারত বায়োটেকের কোভ্যাক্সিন হলো লাইফ ভ্যাকসিন। অর্থাৎ এই টিকায় গোটা ভাইরাসটিকে নিষ্ক্রিয় করে শরীরে ঢুকিয়ে দেয়া হয়। মুশকিল হলো, প্রসূতিদের বেশিরভাগ লাইফ ভ্যাকসিন নেয়াতেই বারণ থাকে। তাই কোভ্যাক্সিন নেয়ার উপায় নেই। পাশাপাশি এই টিকা নির্মাতারাও প্রেগনেন্ট বা ব্রেস্টফিড করা নারীদের উপর কোনো ট্রায়াল চালাননি। ফলে কোভ্যাক্সিন নেয়ার প্রশ্নই ওঠে না।
সিরামের কোভিশিল্ড টিকাটিও প্রেগনেন্ট বা ব্রেস্টফিড করা নারীদের উপর পরীক্ষা করা হয়নি।
তবে এক্ষেত্রে সন্তানসম্ভবা ও ল্যাকটেটিং অন্য প্রাণীর শরীরে টিকা প্রয়োগ করা হয়েছে। সেক্ষেত্রে কোনো সমস্যা দেখা দেয়নি।
তাই এক্ষেত্রে হাই রিস্ক মাদার যেমন— প্রেগন্যান্সি ও ল্যাকটেটিং অবস্থায় প্রচণ্ড সুগার, সিকেল সেল মাদার, কোনো কারণে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা খুব কমে গেছে, এই সকল নারীর কোভিশিল্ড ভ্যাকসিন দেয়া যাবে। অবশ্য এই ভ্যাকসিন প্রেগনেন্সির ২০ সপ্তাহ বাদেই দিতে হবে। তার আগে দেয়া চলবে না।
অপরচিত্র
মডার্না, ফাইজার, জনসন অ্যান্ড জনসন- এই তিনটি সংস্থার করোনা টিকার ট্রায়াল সন্তানসম্ভবা ও ব্রেস্টফিডিং নারীদের উপরও হয়েছে। তার থেকে জানা গিয়েছে, টিকা নেয়ার পর বাচ্চার কোনো জন্মগত ত্রুটি আসছে না, মায়ের শারীরিক কোনো সমস্যা হচ্ছে না, ল্যাকটেটিং নারীদের ব্রেস্ট মিল্ক দিয়েও এই টিকা বাচ্চার শরীরে প্রবেশ করছে না। ফলে টিকার ট্রায়াল সব অর্থেই সদর্থক। সেই তথ্যের উপর ভিত্তি করেই আমেরিকার দুই নিয়ামক সংস্থা ‘ইউএস ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন’ ও ‘সিডিসি’ এই ভ্যাকসিনগুলিকে প্রসূতিদের মধ্যে ব্যবহারের ছাড়পত্র দিয়েছে।
আশার কথা
ফাইজার, মডার্না, জনসন অ্যান্ড জনসন-এর মতো টিকাগুলো আসতে চলেছে। টিকা দেশে আসার পর ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ অনুমতি দিলে প্রেগনেন্ট ও ব্রেস্টফিড করা মহিলা এই ভ্যাকসিন নিতে পারবেন।
সমস্যা এড়াতে
টিকা না পাওয়া পর্যন্ত রোগ প্রতিরোধ করতে হবে—
বাইরে কম বের হওয়া। মাস্ক পরা। নিয়মিত সাবান দিয়ে হাত ধোওয়া।
প্রেগনেন্সিতে অনলাইন কনসালটেশনে জোর দিতে হবে। খুব প্রয়োজন হলেই চিকিৎসাকেন্দ্রে যাওয়া উচিত। চিকিৎসাকেন্দ্র যাওয়ার দিনটিকে এমনভাবে পরিকল্পনা করতে হবে, যাতে আলট্রাসাউন্ড, ব্লাড টেস্টসহ অন্যান্য পরীক্ষা এক দিনেই মিটিয়ে ফেলা যায়।
সূত্র : বর্তমান