করোনামুক্তির ৬ মাস পর হতে পারে সেরিব্রাল স্ট্রোক!
করোনামুক্তির ৬ মাস পর হতে পারে সেরিব্রাল স্ট্রোক! - ছবি : সংগৃহীত
হাসপাতালে গুরুতর অবস্থায় চলে গিয়েছিলেন, বাঁচিয়ে রাখতে সব সময় দিতে হচ্ছিল অক্সিজেন, এমন কোভিড রোগীদের বাড়ি ফেরার ছয় মাস পরও হতে পারে বড় ধরনের সেরিব্রাল স্ট্রোক। নানা ধরনের জটিল স্নায়ুঘটিত রোগের শিকার হয়ে তারা হাত, পা, শরীরের নানা অঙ্গপ্রত্যঙ্গ চালনার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলতে পারেন। হারিয়ে ফেলতে পারেন স্মৃতিশক্তিও।
দীর্ঘ দিন হাসপাতালে কাটিয়ে মৃত্যুর মুখ থেকে ঘরে ফেরা কোভিড রোগীদের নিয়ে একটি বড় মাপের সমীক্ষা চালিয়ে এই তথ্য দিয়েছেন আমেরিকার জর্জিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটি ও জর্জিয়া ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির বিজ্ঞানী, গবেষকরা। গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান গবেষণা পত্রিকা ‘নিউরোবায়োলজি অব স্ট্রেস’-এ। সোমবার।
গবেষকরা দেখেছেন, হাসপাতালে গুরুতর অবস্থায় চলে গিয়েছিলেন, বাঁচিয়ে রাখতে সব সময় দিতে হচ্ছিল অক্সিজেন, এমন কোভিড রোগীদের মস্তিষ্কের ফ্রন্টাল-টেম্পোরাল অংশে (সামনে ও ঠিক তার পিছনে) থাকা গ্রে ম্যাটারের আয়তন অনেকটাই কমে গেছে। তার ফলে, হাসপাতাল থেকে বাড়িতে ফেরার ৬ মাস পরেও তাদের নানা ধরনের শারীরিক অক্ষমতা থাকছে। তারা নানা ধরনের জটিল স্নায়ুঘটিত রোগের শিকার হয়ে হাত, পা, শরীরের নানা অঙ্গপ্রত্যঙ্গ চালনার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছেন। হারিয়ে ফেলেছেন স্মরণশক্তিও। কোনো কোনো ক্ষেত্রে হয় তাদের বাকশক্তি হারিয়ে ফেলতে দেখা গিয়েছে। আবার কখনো দেখা গিয়েছে কথা বলার ক্ষেত্রে অস্বাভাবিক জড়তা। ঘরে ফেরা ওই কোভিড রোগীদের জিভ সঠিকভাবে নড়াচড়া করছে না। তাই কথা আটকে বা জড়িয়ে যাচ্ছে।
মানবমস্তিষ্কের গ্রে ম্যাটার স্নায়ুকোষ বা নিউরনগুলির কার্যকলাপ ও তাদের নিজেদের মধ্যে যোগাযোগকে অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ করে।
মূল গবেষক কুয়াইকুয়াই দুয়ান বলেছেন, ‘আমরা দেখেছি হাসপাতালে গুরুতর অবস্থায় পৌঁছে যাওয়া কোভিড রোগীদের মস্তিষ্কের গঠন অনেকটাই বদলে গিয়েছে বাড়িতে ফেরার ৬ মাস পরেও। দেখেছি, এটা বেশি হচ্ছে সেই সব কোভিড রোগীর ক্ষেত্রে যাঁদের হাসপাতালে দীর্ঘ দিন ধরে অক্সিজেন জুগিয়ে রাখতে হয়েছিল।’
গ্রে ম্যাটারের আয়তন কমে যাওয়ার ফলে হাসপাতাল থেকে বাড়িতে ফেরার পর কোভিড রোগীদের ঘন ঘন ক্ষিপ্ত হয়ে পড়তেও দেখেছেন গবেষকরা। এমনকি, তাদের মধ্যে স্কিৎজোফ্রেনিয়ার বেশ কয়েকটি লক্ষণও দেখা গিয়েছে।
করোনার কারণে সমস্যা হতে পারে কানে, কমে যেতে পারে শোনার ক্ষমতা
প্রধান কিছু উপসর্গের পাশাপাশি নিয়মিতই ধরা পড়ছে করোনার নতুন নতুন উপসর্গ। হালে যেমন বিজ্ঞানীরা বলছেন কানের সমস্যা বা শোনার ক্ষমতা কমে যাওয়াও হতে পারে করোনার উপসর্গ। শুধু উপসর্গই নয়, করোনা সেরে যাওয়ার পরও এই সমস্যা দেখা দিতে পারে।
এর পিছনে রয়েছে স্নায়বিক সমস্যা। করোনাভাইরাস শরীরের বহু ক্ষতি করে। তার মধ্যে স্নায়ুর ক্ষতি একটি। প্রাথমিক অবস্থায় টের না পাওয়া গেলেও পরবর্তী সময়ে অনেকেই বুঝতে পারেন, শরীরের নানা জায়গায় স্নায়ুর সমস্যা দেখা দিচ্ছে করোনার দীর্ঘ প্রভাব হিসেবে। এর মধ্যে কানের সমস্যাটি অন্যতম।
কী হয় এ ক্ষেত্রে? ইংরেজিতে যাকে বলে ‘টিনিটাস’ বা কান ভোঁ ভোঁ করা, তেমন সমস্যার কথা জানিয়েছেন বহু কোভিড আক্রান্তই। চিকিৎসকেরা বলছেন, অনেকের ক্ষেত্রে কান এবং মস্তিষ্কের সংযোগকারী স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে করোনায়। ফলে এই সমস্যা দেখা দিচ্ছে।
কারো ক্ষেত্রে এই সমস্যা কয়েক দিন বা বড়জোর এক মাসের মধ্যে সেরে যাচ্ছে। কিন্তু কিছু অল্প ক্ষেত্রে তা সারতে সময় নিচ্ছে অনেক দিন। এ সব ক্ষেত্রে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া দরকার। না হলে ভবিষ্যতে শোনার ক্ষমতা কমে যাওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে।
সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা