ইসলামী সঙ্গীতে বিশ্বসেরা : সামি ইউসুফ ও ইউসুফ ইসলাম
সামি ইউসুফ ও ইউসুফ ইসলাম - ছবি : সংগৃহীত
বিশ্বব্যাপী ইসলামী সঙ্গীত জগতের আইকন হিসেবে খ্যাত সামি ইউসুফ ও ইউসুফ ইসলাম। ব্রিটেনের আলো বাতাসে বেড়ে ওঠা দুটি আলোকিত নাম। সামি ইউসুফের মতো এত প্রগাঢ় পুরুষ কণ্ঠ সত্যিই বিরল। আর এজন্য তিনি মুসলিম বিশ্বে খ্যাতির শীর্ষে রয়েছেন। অপর দিকে আছেন এক সময়ের পপসঙ্গীত জগতের আইকন বহুল আলোচিত ইউসুফ ইসলাম (ক্যাট স্টিভেন্স )। অসামান্য সুর আর মায়াময় কণ্ঠের জাদুতে তার প্রতিটি গান মুগ্ধ করে লাখ লাখ সঙ্গীত অনুরাগীদের?
২০০৩ সালে জাগরণেএর ব্যানারে আল মু’আল্লিম নামে প্রকাশিত হয় সামি ইউসুফের প্রথম অ্যালবাম। তখন তার বয়স ছিল মাত্র ২৩ বছর। তিনি বাস করতেন পশ্চিম লন্ডনের ইলিং এলাকায়। তার বাবা রাদমানেশ ছিলেন বিখ্যাত ইরানি কবি, গীতিকার ও সুরকার। বিশ্বব্যাপী মূল ধারায় ইসলামী সঙ্গীতের চাহিদা নিয়ে আমরা অনেক আলোচনা করেছি। সামি ইউসুফের প্রথম আটটি ট্র্যাক-সংবলিত আল মু’আল্লিম অ্যালবামটির সঙ্গীত পরিবেশনা ও সুর সৃষ্টি করেছেন তিনি নিজেই। গানের প্রযোজনা যখন হলো, তখনও ভাবেননি এটা তাকে বিশ্বময় জনপ্রিয়তার শীর্ষে নিয়ে যাবে।
আল মু’আল্লিম অ্যালবামটি বের হওয়ার সাথে সাথে মধ্যপ্রাচ্য, উত্তর আফ্রিকা ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াতে ব্যাপক সাড়া জাগে। দ্রুত হিট করে মুসলিম বিশ্বে, বিশেষ করে তুরস্ক ও মিসরে। এরপর তা সর্বত্র ব্যাপকতা লাভ করে। অল্প দিনে বিশ্বব্যাপী অ্যালবামটির বিক্রি সাত মিলিয়ন কপি ছাড়িয়ে যায়। এই অ্যালবামের শেষ ট্র্যাক ২০০৭ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ও গোল্ডেন গ্লোব অ্যাওয়ার্ডের জন্য মনোনীত হলিউড সিনেমায় ব্যবহৃত হয়।
এদিকে ২০০৫ সালে প্রকাশিত দ্বিতীয় অ্যালবাম মাই উম্মাহ তার জন্য বয়ে নিয়ে আসে অসংখ্য আন্তর্জাতিক সম্মাননা। এই অ্যালবামের হাসবি রাব্বি গানটি মিসরে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে। অ্যালবামটি চার মিলিয়নেরও বেশি কপি বিক্রি হয়। তারপর বিবিসি, সিএনএন, দ্য গার্ডিয়ান, রোলিং স্টোনের মতো পৃথিবীর খ্যাতনামা মূলধারার প্রচার মাধ্যমগুলো তাকে নিয়ে লেখালেখি শুরু করে।
২০০৬ সালে টাইম ম্যাগাজিন সামি ইউসুফকে ইসলামের বৃহত্তম রকস্টার আখ্যা দেয়। দ্য গার্ডিয়ান তাকে মধ্য প্রাচ্যের বৃহত্তম ব্রিটিশ তারকা বলে আখ্যায়িত করে। আলজাজিরা বলে ইসলামিক পপের কিং। সঙ্গীতে বিশেষ অবদান রাখার জন্য ২০০৯ সালে রোহাম্পটন ইউনিভার্সিটি তাকে সম্মান সূচক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করে। এরই মাধ্যমে তিনি সর্ব কনিষ্ঠ সদস্য হিসেবে জায়গা করে নেন মার্ক টোয়েন, জে কে রোলিং, রবার্ট ফ্রস্টদের কাতারে। ২০০৯ সালে তার নাম ওঠে বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী ৫০০ মুসলিমের তালিকায়।
অন্যদিকে পপ সঙ্গীতের আইকন ক্যাট স্টিভেন্স ১৯৭৯ সালের ডিসেম্বর মাসে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে ইসলামী সঙ্গীতের জগতে নতুন মাত্রা সৃষ্টি করেন। ইউসুফ ইসলাম হিসেবে মুসলিম বিশ্বে তার পরিচিতি ছড়িয়ে পড়ে। চির সবুজ গীতিকার, সুরকার ও গায়ক ক্যাট স্টিভেন্স নতুনভাবে জাগিয়েছেন তার অনুরাগীদের। এমনিতেই ষাটের মাঝমাঝি থেকে সত্তরের শেষ অবধি তার পপসঙ্গীত সাড়া জাগিয়েছিল বিশ্বব্যাপী? সাফল্য ও জনপ্রিয়তার শীর্ষে ছিলেন তিনি। স্বপ্ন আর ভালোবাসা নিয়ে গাঁথা তার ব্যালাড আঙ্গিকের গান আজো মুগ্ধ করে অসংখ্য সঙ্গীত অনুরাগীদের?
ক্যাট স্টিভেন্স ১৯৪৮ সালে লন্ডনে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা গ্রিক-সাইপ্রিয়ট ও মা সুইডিশ? আসল নাম স্টিভেন দিমিত্রি জর্জিও? ১৮ বছর বয়সে ‘আই লাভ মাই ডগ’ এর মধ্য দিয়ে পপ সঙ্গীতাঙ্গনে তার আত্মপ্রকাশ? এরপর থেকেই একের পর এক হিট অ্যালবাম বেরোয়? একাধিকবার শ্রেষ্ঠ গায়ক ও গীতিকার হিসেবে স্বীকৃতি লাভের মধ্য দিয়ে তিনি হয়ে ওঠেন পপ সঙ্গীতের এক বহুল আলোচিত আইকন?
ইউসুফ ইসলাম ১৯৮১ সালে লন্ডনে ইসলামিয়া স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। এটি ছিল মুসলিম কমিউনিটির জন্য নিয়ামত। গত ২০ বছর ধরে এর প্রচার ও প্রসারে সচেষ্ট রয়েছেন এই লেখক। বর্তমানে এই ধারায় আরো কিছু ইসলামিক স্কুল প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
ইউসুফ ইসলাম ব্রিটেনে ইসলামী শিক্ষা ও সংস্কৃতির বিকাশের পাশাপাশি সেবা কর্মেও সম্পৃক্ত। তিনি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মানবিক ও সামাজিক সংগঠনের সাথে কাজ করে চলেছেন? মানবিকতা ও শান্তির পৃষ্ঠপোষক হিসেবে ‘ওয়ার্ল্ড অ্যাওয়ার্ড’, ‘ম্যান ফর পিস অ্যাওয়ার্ড’সহ আরো বহু আন্তর্জাতিক সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন সঙ্গীতশিল্পী ক্যাট স্টিভেন্স ওরফে ইউসুফ ইসলাম?
ইসলামী সঙ্গীতের দেদীপ্যমান নক্ষত্র সামি ইউসুফ ও ইউসুফ ইসলাম বিশ্বব্যাপী ইসলামী সঙ্গীত জগতের উজ্জ্বল নক্ষত্র। তারা যখন লাল কার্পেটের ওপর দিয়ে হেঁটে কোনো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে প্রবেশ করেন, তখন সাগ্রহে অপেক্ষায় থাকেন টিভির সামনের লাখ লাখ উৎসুক দর্শক। নগরচত্বর, স্টেডিয়াম থেকে জনাকীর্ণ কনসার্ট হলো সর্বত্রই তারা সমভাবে আকর্ষণীয় এবং সমাদৃত। তাদের অপার্থিব পবিত্র ধ্বনি তরঙ্গ আর হৃদয়মাখা কণ্ঠের সুরলহরি অপার মুগ্ধতা ছড়িয়ে দেয়।