শিশুর নীরব ঘাতক রোটা ভাইরাস
শিশুর নীরব ঘাতক রোটা ভাইরাস - ছবি : সংগৃহীত
শিশু মৃত্যুর অন্যতম কারণ কিন্তু ডায়রিয়া। সারা বিশ্বে প্রতি বছর প্রায় ছয় লাখ শিশু এই ঘাতকের কারণে মারা যায়। সব শিশু তাদের ৫ম জন্মদিন উদযাপনের আগেই এ ভাইরাস দিয়ে আক্রান্ত হয়। বাংলাদেশেও প্রতি বছর মৃত্যুবরণ করে প্রায় ২ থেকে ৩ হাজার শিশু, যা প্রতি ঘণ্টায় একটি শিশুর মৃত্যুর সমান। রোটাভাইরাস আক্রমণ করার দুদিনের মধ্যেই বিভিন্ন উপসর্গ দেখা যায়। এর মধ্যে জ্বর হতে পারে, সাথে পেট ব্যথা, বমি বমি ভাব এবং ঘন ঘন পাতলা পায়খানা হয়। শিশুরা খাওয়া দাওয়া বন্ধ করে দেয় এবং পানি শূন্যতায় ভোগে। শিশুকে প্রচুর পরিমাণে খাওয়ার স্যালাইন খাওয়ানো না হলে সাধারণত ৩ থেকে ৮ দিনের মধ্যে ডায়রিয়া মারাত্মক হতে পারে যদি। এমনকি এতে শিশুর মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। যেহেতু ভাইরাসটি কয়েক দিন পর্যন্ত ঘরের মেঝেতে, টেবিলে, খেলনার মধ্যে এবং বিভিন্ন আসবাবপত্রে বেঁচে থাকতে পারে, তাই ভাইরাসটি খুব সহজে একজন থেকে আরেকজনে সংক্রমিত হতে পারে। কমপক্ষে ৩১ রকমের রোটাভাইরাসের মধ্যে মানুষকে আক্রান্ত করতে পারে এমন প্রধানত ৫ রকমের ভাইরাস আছে।
রোটাভাইরাস প্রতিরোধের উপায়
ভ্যাক্সিন : বাজারে রোটা টেক এবং রোটেক্স নামে ২টি রোটাভাইরাস ভ্যাক্সিন পাওয়া যায়। ৬-১২ সপ্তাহ বয়সের শিশুকেরোটা টেকের প্রথম ডোজ ভ্যাক্সিন দিলে রোটাভাইরাস ডায়রিয়া থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। দ্বিতীয় ডোজ দিতে হয় ৪ থেকে ১০ সপ্তাহ পরে। শিশুর বয়স যখন ৩২ সপ্তাহ হয় তখন শেষ ডোজটি দিতে হয়। রোটেক্স ভ্যাক্সিন দুই ডোজ দিতে হয়। প্রথম ডোজটি শিশুর ৬-১২ সপ্তাহ বয়সে এবং শেষটি ২৪ সপ্তাহ বয়সে দিতে হয়। শিশুকে সবসময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা। শিশুকে মায়ের দুধ দেয়া।
রোটাভাইরাস ডায়রিয়া প্রতিকারের উপায়
আক্রান্ত শিশুকে খাবার স্যালাইন দেয়া। মায়ের দুধ বন্ধ করা যাবে না। সেইসাথে বয়স অনুযায়ী অন্যান্য খাবার ও দিতে হবে। ফলের রস বা কোমল পানীয় না খাওয়ানেই ভালো। জিংক ট্যাবলেট খাওয়ানো যেতে পারে। অবস্থা বেশি খারাপ হলে ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া উচিত।
শিশুর প্রস্রাবে ইনফেকশন
ডা: আহাদ আদনান
শিশুদের প্রস্রাবের রাস্তায় ঘন ঘন সংক্রমণ পরবর্তীতে বড় সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। বৃদ্ধি ঠিকমতো না হওয়া, শরীর শুকিয়ে যাওয়া, খাদ্যে অরুচি থেকে শুরু করে প্রস্রাবের থলি বা কিডনিতে অসুখ ছড়িয়ে পড়তে পারে। অভিভাবককে সচেতন হওয়া উচিত, যাতে এসব সমস্যা প্রতিরোধ করা যায়।
ষ নিয়মিত পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে।
ষ সফট ড্রিংকস, বোতলজাত জুস (এগুলোতে ক্ষতিকর কৃত্রিম রঙ, প্রিজারভেটিভ থাকে), অতিরিক্ত লবণসমৃদ্ধ পানীয় এবং খাবার পরিহার করতে হবে।
ষ নিয়মিত স্বাভাবিক মলত্যাগ নিশ্চিত করতে হবে। এ জন্য পর্যাপ্ত পানি পান, শাকসবজি, আঁশযুক্ত খাবার খেতে হবে, পরিমিত হাঁটাচলা, শারীরিক ব্যায়াম, খেলাধুলা করতে হবে, মলত্যাগের বেগ আটকে রাখা যাবে না।
ষ প্রস্রাব আটকিয়ে রাখা যাবে না। এ জন্য বিদ্যালয়ে প্রস্রাবের বেগ হলে যেতে হবে। (টয়লেটের পরিবেশ আরো ভালো হওয়ার জন্য শিক্ষকদের সাথে কথা বলুন) একটানা মনিটরের (টিভি, মোবাইল, গেমস) সামনে বসে থাকা যাবে না। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে হবে।
ষ আঁটসাঁট অন্তর্বাস বা প্যান্ট পরা অনুচিত।
ষ নিয়মিত কৃমিনাশক ওষুধ সেবন করতে হবে।
ষ ঘনঘন ডায়রিয়া, অপুষ্টি রোগ থাকলে চিকিৎসা এবং পুষ্টিকর খাবার নিশ্চিত করতে হবে।
ষ ছেলে শিশুদের খৎনা করলে সংক্রমণ কম হওয়ার প্রমাণ পাওয়া গেছে।
ষ মেয়ে শিশুদের শুচি করার সময় সামনে থেকে পিছনে টান দিয়ে মুছে দিতে হবে।
ষ অতিরিক্ত এন্টিবায়োটিক উপকারী জীবাণু মেরে ফেলে সমস্যা বাড়িয়ে তুলতে পারে।
ষ শরীরের অন্য সমস্যার জন্য সংক্রমণ হচ্ছে কিনা দেখতে হবে। প্রস্রাবের রাস্তায় কোনো প্রতিবন্ধকতা (পর্দা, সরু নালী, মাংস বৃদ্ধি), পাথর, প্রস্রাব কিডনির দিকে পিছনে ফেরত যাওয়ার রোগ কিংবা দুর্বল থলি থাকলে আগে সেগুলোর চিকিৎসা করতে হবে।
লেখক : রেজিস্ট্রার, আইসিএমএইচ,
মাতুয়াইল, ঢাকা