কতটুকু কার্যকর ট্রাম্পের করোনা সারানো 'ওয়ান্ডার ড্রাগ'?
কতটুকু কার্যকর ট্রাম্পের করোনা সারানো 'ওয়ান্ডার ড্রাগ'? - ছবি : সংগৃহীত
ভারতের বাজারে আসছে সুইস ওষুধ প্রস্তুতকারক সংস্থা ‘রোচে'–র কোভিড প্রতিরোধক, যা কাজ করবে দ্রুত৷ ভারতীয় নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষের থেকে ছাড়পত্র মিলেছে জরুরি পরিস্থিতিতে ওষুধটি প্রয়োগের৷
বলা হচ্ছে ‘ওয়ান্ডার ড্রাগ'৷ আশ্চর্য ওষুধ৷ যা ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে শরীরে গিয়ে দ্রুত কোভিড ভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলবে৷ আমেরিকার প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যখন কোভিডে আক্রান্ত হয়েছিলেন, তখন এই ওষুধই তার ওপর প্রয়োগ করা হয়েছিল৷ সুইস ওষুধ সংস্থা ‘হফমান–লা রোচে'র তৈরি এই ওষুধটি আসলে কোভিড প্রতিরোধে সক্ষম একাধিক অ্যান্টিবডির ককটেল বা মিশ্রণ৷ আমেরিকায় কোভিড সংক্রমণ ছড়ানোর সেই শুরুর সময় এই ওষুধটি পরীক্ষার স্তরেই ছিল৷ সে হিসেবে ট্রাম্পের নিজস্ব চিকিৎসকেরা যথেষ্ট সাহসেরই পরিচয় দিয়েছিলেন এবং প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট নিজেও রীতিমত ঝুঁকি নিয়েছিলেন৷ দেখা গেল, ওষুধটি সাফল্যের সঙ্গেই ট্রাম্পকে কোভিডমুক্ত করতে পেরেছিল৷
সেই ওষুধই এবার ভারতে তাদের সহযোগী সংস্থা সিপ্লা–র মাধ্যমে বাজারে আনছে রোচে ইন্ডিয়া৷ জরুরি পরিস্থিতিতে, আপৎকালীন ব্যবস্থা হিসেবে এই ওষুধটি প্রয়োগের ছাড়পত্র দিয়েছে ভারতের কেন্দ্রীয় ওষুধ নিয়ন্ত্রক সংস্থা৷ ১২ বছরের বেশি বয়স এবং ৪০ কেজির ওপর ওজন হলে, হাল্কা থেকে মাঝারি তীব্রতার কোভিড সংক্রমণের ক্ষেত্রে এই ওষুধ দেয়া যাবে৷ সদ্য কোভিড হয়েছে, সংক্রমণ সেভাবে ছড়ায়নি, অথবা কোভিড হওয়ার আশঙ্কা আছে, এমন লোক উপকৃত হবেন এই ওষুধে৷ ৬০ বছরের ওপর বয়স, হার্টের অসুখ, ফুসফুসের রোগ, কিডনির সমস্যা, ডায়াবেটিস আছে, এমন ‘কোমর্বিডিটি' থাকা রোগীদের জন্যও এই ওষুধ নিরাপদ বলে জানাচ্ছে প্রস্তুতকারী সংস্থা রোচে ইন্ডিয়া৷
কীভাবে কাজ করবে এই অ্যান্টিবডি ককটেল?ব্যাখ্যা করলেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডাঃ শান্তনু চট্টোপাধ্যায়৷ কোভিড ভ্যাকসিন দেয়ার পর শরীরে কোভিড প্রতিরোধী অ্যান্টিবডি তৈরি হতে কিছুটা সময় লাগে৷ অন্তত সপ্তাহ দুয়েক৷ কারণ ভ্যাকসিন আসলে সামান্য পরিমাণে মৃত ভাইরাস বা ভাইরাসের প্রোটিন অংশ, যা শরীরের ভিতরে গেলে শরীরের নিজস্ব রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা সক্রিয় হয়ে উঠে উপযুক্ত অ্যান্টিবডি তৈরি করে যা ভবিষ্যতে ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করে৷ তার বদলে এই ওষুধ সরাসরি অ্যান্টিবডি ঢুকিয়ে দেয় শরীরে, যা তৎক্ষণাৎ সংক্রমণ ঠেকাতে পারে৷ ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট থাকতে যখন তার কোভিড ধরা পড়েছিল, তখন ভ্যাকসিন বলতে সেভাবে পরীক্ষিত কিছু ছিল না৷ ফলে কিছুটা নিরুপায় হয়েই এই ওষুধটি তার ওপর প্রয়োগ করা হয় এবং তাতে কাজ হয়৷
তবে এই ওষুধটির ক্ষেত্রে একটা জরুরি বিষয় মাথায় রাখতে হবে৷ ডাঃ শান্তনু চট্টোপাধ্যায় বলছেন, ‘এটা কিন্তু একটা সাময়িক ব্যবস্থা৷ অ্যান্টিবডি শরীরে দেওয়া হলেও, সেটা ক্রমে দুর্বল হয়ে যাবে৷ সেখানে ভ্যাকসিন একটা স্থায়ী সমাধান৷ কাজেই যখন কারও হঠাৎ করে কোভিড হল, তখন এটা দিয়ে সংকটটা সাময়িকভাবে কাটিয়ে ওঠা যাবে৷ বা আমাদের দেশে যেখানে ভ্যাকসিন পাওয়া যাচ্ছে না, সেক্ষেত্রে এটা দিয়ে কিছুটা সামাল দেওয়া গেল৷'
অর্থাৎ আচমকা কোভিড আক্রান্ত হলে এই অ্যান্টিবডি ককটেল চিকিৎসার জন্য কিছুটা বাড়তি সময় পাইয়ে দেবে ডাক্তারদের, চলতি পরিস্থিতিতে যেটা স্বস্তিদায়ক৷ তবে এই ওষুধ কখনোই ভ্যাকসিনের বিকল্প হবে না, ভ্যাকসিনই আসল সমাধান৷ বলছেন চিকিৎসকরা৷
সূত্র : ডয়চে ভেলে